William Harvey Biography: আজ আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি মহান ব্যক্তিদের জীবনী সমগ্র। মহান ব্যক্তি আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা। তাঁদের জীবনের ক্ষুদ্রতম অংশগুলি আমাদের জন্য শিক্ষামূলক হতে পারে।
William Harvey Biography In Bengali – উইলিয়াম হার্ভে জীবনী
বর্তমানে আমরা এই মহান ব্যক্তিদের ভুলতে বসেছি। যাঁরা যুগ যুগ ধরে তাদের কর্ম ও খ্যাতির মধ্য দিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন এবং জ্ঞান, বিজ্ঞান, শিল্প ও সাহিত্যের জগতে এক অনন্য অবদান রেখেছেন এবং তাঁদের শ্রেষ্ঠ গুণাবলী, চরিত্র দ্বারা দেশ ও জাতির গৌরব বৃদ্ধি করেছেন। সেইসব মহান ব্যক্তিদের মধ্যে অন্যতম চিকিৎসক উইলিয়াম হার্ভে (William Harvey) -এর সমগ্র জীবনী সম্পর্কে এখানে জানব।
উইলিয়াম হার্ভে জীবনী – William Harvey Biography in Bengali
নাম | উইলিয়াম হার্ভে |
জন্ম | 1 এপ্রিল 1578 |
পিতা | টমাস হার্ভে |
মাতা | জোয়ান হাল্ক |
জন্মস্থান | ফোকস্টোন, কেন্ট, ইংল্যান্ড |
জাতীয়তা | যুক্তরাজ্য |
পেশা | চিকিৎসক |
মৃত্যু | 3 জুন 1657 (বয়স 79) |
উইলিয়াম হার্ভে কে ছিলেন? Who is William Harvey?
শারীরবিদ্যার বিষয়-আশয় নিয়ে মানুষের গেবষণা-আলোচনার সূত্রপাত সুদূর প্রাচীনকাল থেকে। বহু মনীষীর আত্মত্যাগ, জীবনব্যাপী নিরলস শ্রম এই বিদ্যার অনেক রহস্যেরই উন্মোচন ঘটিয়েছে। নতু নতুন আবিষ্কারে শারীরবিদ্যা পুষ্টি ও প্রসার লাও করেছে।
তবুও ষোড়শ শতক পর্যন্ত মানুষের হৃদযন্ত্র ও রক্তবাহী নালিকার প্রকৃত কাজ কি, এ সম্পর্কে কোন। বিজ্ঞানীই সঠিক আলোকপাত করতে পারেন নি।
জীবদেহের হৃদযন্ত্রের শারীরবৃত্তীয় কার্যকারিতা সম্পূর্ণ অজানাই থেকে গিয়েছিল। সেই সময় পর্যন্ত হৃদযন্ত্র সম্পর্কে চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের যে ধারণা ছিল, তা হল, রক্ত হৃদযন্ত্র থেকে বেরিয়ে রক্তনলের মাধ্যমে এক তরঙ্গায়িত ধারায় শরীরের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে।
রক্তের শেষবিন্দুটি পর্যন্ত শরীরের কাজে নিয়োজিত না হওয়া পর্যন্ত এই তরঙ্গায়িত ধারায় রক্ত নির্গমন কাজ চলতে থাকে। যে রক্ত হৃদপিন্ড থেকে নির্গত হয় তা আর সেখানে কখনো ফিরে আসে না।
উইলিয়াম হারভে পুরনো এই ধ্যানধারণাকে পাল্টে দিয়ে হৃদযন্ত্র সম্পর্কে প্রকৃত তথ্য প্রকাশ করে চিকিৎসা জগতে নিয়ে আসেন বিপ্লব।
উইলিয়াম হার্ভে র জন্ম: William Harvey’s Birthday
উইলিয়াম হারভের জন্ম ইংলন্ডে ১৫৭৮ খ্রিঃ।
উইলিয়াম হার্ভে র পিতামাতা ও জন্মস্থান: William Harvey’s Parents And Birth Place
তাঁর বাবা ছিলেন লন্ডনের বিখ্যাত ব্যবসায়ী।
ছোটবেলা থেকেই হারভের স্বপ্ন ছিল বড় চিকিৎসক হবার। অন্তর্নিহিত প্রতিভাই তার মনে এই প্রবণতার জন্ম দিয়েছিল। মাত্র ঊনিশ বছর বয়সে কেমব্রিজ থেকে স্নাতক হবার পর তিনি স্থির করেন চিকিৎসা বিজ্ঞানে পাঠ নেবার জন্য ইতালি যাবেন।
উইলিয়াম হার্ভে র শিক্ষাজীবন: William Harvey’s Educational Life
রানী এলিজাবেথের সেই রাজত্বকালে সারা ইউরোপ জুড়ে খ্যাতি ছিল ইতালির পাদুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের।
সেখানে শারীর বিদ্যার সেরা প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন ফাব্রিয়াসের মত প্রথিতযশা বিজ্ঞানী। জীবিতকালেই তিনি অ্যানাটমির প্রবাদপুরুষে পরিণত হয়েছেন।
প্রাচীনপন্থীদের রক্তচক্ষুশাসনে ইউরোপের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়েই অ্যানাটমি শিক্ষার ভাল ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়নি।
একমাত্র ব্যতিক্রম পাদুয়া। এখানকার বিশ্ববিদ্যালয়ে জ্ঞানবিজ্ঞান চর্চার অবাধ স্বাধীনতা। চার্চের রক্তচক্ষুর শাসন সেখানে নেই।
হারভে এসে ভর্তি হলেন পাদুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে। তিনি প্রাচীন গ্যালেন থেকে শুরু করে পুরনো নবীন সকল চিকিৎসকের অভিজ্ঞতা ও মতামত গভীর মনোযোগ সহকারে পাঠ করেন। হৃদযন্ত্র ও রক্তবাহী নালী বিষয়ে গভীর আগ্রহ বোধ করেন তিনি।
হৃদযন্ত্রের প্রকৃত রহস্য জানবার জন্য নিজের হাতেই শবব্যবচ্ছেদ করে চলেন দিনের পর দিন।
একদিন ফাব্রিয়াসের ক্লাসে মৃতদেহের বুক চিরে পরীক্ষা করতে গিয়ে চোখে পড়ে এক ধরনের মোটা শিরার সঙ্গে আলতো ভাবে লেগে আছে এক ভালভের শ্রেণী। এই ভালভগুলির বিষয়ে ফাব্রিয়াসও আলোকপাত করতে পারেন নি।
হারভের তাই জেদ চেপে যায়। তিনি বুঝতে পারেন শরীরের কোন জরুরী প্রয়োজনেই এই বিশেষ ভালভশ্রেণীর অবস্থান। সেই প্রয়োজন এবং তার ক্রিয়াপদ্ধতিই তাঁকে জানতে হবে।
১৬০২ খ্রিঃ হারভে পাদুয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডাক্তারি পাশ করে বেরলেন। তখানো তার মাথায় চেপে আছে হৃদযন্ত্রের স্বরূপ ও শিরা ধমনীতে রক্তের কাজের রহস্য।
যথাসময়ে লন্ডনে ফিরে আসেন তিনি। উচ্চতর শিক্ষালাভের জন্য ভর্তি হলেন কেমব্রিজে।
সেই সঙ্গে প্রাইভেট প্র্যাকটিস করবেন বলে একটা ক্লিনিকও খুললেন। এই প্র্যাকটিস নিয়ে কেটে গেল তেরটি বছর।
ডাক্তারদের এম. আর.সি.পি করবার প্রতিষ্ঠান হল লন্ডনের রয়াল কলেজ অব ফিজিশিয়ানস৷
উইলিয়াম হার্ভে র কর্ম জীবন: William Harvey’s Work Life
হারভে এই কলেজে অধ্যাপক মনোনীত হলেন। এখানে যোগ দেবার পর তিনি গবেষণার প্রশস্ত সুযোগ লাভ করলেন।
ইতিমধ্যে প্র্যাকটিসের সঙ্গে গবেষণার কাজ চালিয়ে হৃদযন্ত্র ও রক্তপ্রবাহের নানা বিষয়ে যথেষ্ট সুখ্যাতিও অর্জন করেছেন। ফলে হারভে হয়ে উঠলেন এই কলেজের প্রধান আকর্ষণ। তার ক্লাশে দেশ বিদেশের ছাত্রদের ভিড় ক্রমেই বেড়ে উঠতে লাগল।
William Harvey Discoveries : উইলিয়াম হার্ভের আবিষ্কার
হারভের আবিষ্কার হৃদযন্ত্রের রহস্যকে পরিষ্কার করলেও তার এই যুগান্তকারী আবিষ্কারকে মেনে নিতে পারছিলেন না অধিকাংশ ডাক্তার। তারা চিকিৎসার সাবেকী ধারণাই আঁকড়ে ছিলেন।
সবচেয়ে বড় কারণ হল হারভে তার আবিষ্কারের সপক্ষে যুক্তিসঙ্গত কোন প্রমাণ দেখাতে পারেন নি।
সব দেখেশুনেও দমলেন না হারভে। প্রমাণ সংগ্রহের চেষ্টায় একের পর এক পশুর হৃদযন্ত্র নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাতে লাগলেন।
দীর্ঘ গবেষণার পর হারভে সাফল্য লাভ করেন। তিনি দেখতে পান হৃদযন্ত্রে প্রথমে ঘটে সংকোচন। সেই সংকোচনের সঙ্গে সঙ্গেই রক্ত ঢুকে পড়ে রক্তনালিকা গুলিতে।
আর ভালভগুলো এমনভাবে সংস্থাপিত ও ক্রিয়াশীল যে তারা রক্তকে সর্বদা এক মুখে অর্থাৎ ভেতর থেকে বাইরে, নয়তো বাইরে থেকে ভেতরে যেতে সাহায্য করে। হারভে আরও লক্ষ্য করেন রক্ত হৃদযন্ত্রের ডান দিকের ভেনট্রিকল বা নিলয় থেকে সরাসরি ফুসফুসে চলে যায়। তার পথ হল ফুসফুসমুখী ধমনী যার নাম পালমনারি আরটারি।
ফুসফুস থেকে রক্তস্রোত হৃদযন্ত্রের ডান দিকের আরিকল বা অলিন্দ দিয়ে ফের হৃদযন্ত্রের দিকে প্রবাহিত হয়।
তার গতির মাধ্যম হল ফুসফুস অভিমুখী শিরা বা পালমনারি ভেইন। এইভাবে রক্ত বাম অলিন্দ থেকে ছুটে যায় বাম নিলয়ে। সেখান থেকে পাম্প হয়ে সোজা হাজির হয় মহাধমনীতে।
সেখান থেকে শরীরের বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে থাকা ধমনীর ভেতর দিয়ে শরীরের বিভিন্ন দিকে চলে যায়।
এরপর বিশেষ শিরার ভেতর দিয়ে সেই রক্ত ডান অলিন্দ পথে ডান নিলয়ে ফিরে যায়। এইভাবেই সম্পূর্ণ হয় শরীরের রক্তচক্র।
হারভে শেষ সিদ্ধান্ত করেন এইভাবে, হৃদযন্ত্রের স্পন্দনই নিয়ন্ত্রণ করে রক্তের এই বৃত্তাকার অবিরাম প্রবাহকে। রক্ত একবার নয়, বারবারই হৃদযন্ত্রে ফিরে আসে।
হারভে এ বিষয়ে যে গবেষণাধর্মী প্রবন্ধটি প্রস্তুত করতে থাকেন, নানা পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে তার প্রমাণ সংগ্রহ করতে কেটে গেল দীর্ঘ দশটি বছর।
গবেষণা সম্পূর্ণ করে Anatomical exercise on the motion of the heart and blood নামে বই প্রকাশ করলেন ১৬২৮ খ্রিঃ।
এবারে তাঁরা কেউ অবহেলায় দূরে সরিয়ে রাখতে পারল না হারভের সিদ্ধান্তকে। বাধ্য হয়েই বিরুদ্ধবাদীদের পুরনো পথ থেকে সরে আসতে হল। এভাবেই যুক্তি ও সত্যের কাছে যুগে যুগে হার মেনেছে অসত্যের অচলায়তন ৷
দেখতে দেখতে বছর তিনের মধ্যেই হৃদযন্ত্র ও রক্তপ্রবাহের ওপর হারভের গবেষণা সারা ইউরোপের চিকিৎসাব্যবস্থায় স্থান করে নিল।
এই সময়েই ইংলন্ডের সম্রাট প্রথম চার্লস হারভেকে তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক নিযুক্ত করলেন।
১৬৩৯ খ্রিঃ ইংলন্ড জুড়ে দেখা দিল গণঅভ্যুত্থান। দেখতে দেখতে তা গৃহযুদ্ধের আকার লাভ করে সারা ইংলন্ডে ছড়িয়ে পড়ল। প্রথম চার্লস সিংহাসনচ্যুত হলেন ১৬৪২ খ্রিঃ।
দেশ ছেড়ে পালাতে হল তাঁকে। তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক হারভেকেও দেশত্যাগী হতে হল।
হারভের ঘরবাড়ি ধ্বংস হল বিদ্রোহীদের রোষে। তাঁর গবেষণার অমূল্য কাগজপত্র পুড়িয়ে বক্তৃৎসব করা হল। তার ঐতিহাসিক যন্ত্রপাতি, যা দিয়ে তিনি হৃদযন্ত্রের বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে যুগান্তকারী আবিষ্কার সম্ভব করে তুলেছিলেন, সেসব ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে নিশ্চিহ্ন করা হল।
বিদেশে এই মর্মান্তিক সংবাদ শোনার সঙ্গে সঙ্গেই শোকে দুঃখে ভেঙ্গে পড়লেন হারভে।
প্রথম জীবনে কীট-পতঙ্গের প্রজননের ওপরে প্রচুর গবেষণা করেছিলেন হারভে। সেই সব আর কোন দিনই বিশ্ববিজ্ঞানের অঙ্গনে হাজির হতে পেল না। বিজ্ঞানের এক নতুন সম্ভাবনার পথ চিরতরে ধ্বংস হয়ে গেল বিপ্লবীদের রোষানলে।
কিন্তু অসীম মনোবল ছিল হারভের। ধীরে ধীরে ধাতস্থ করলেন নিজেকে। নতুন প্রেরণার আগুন জ্বালিয়ে তুললেন নিজের মধ্যে। নির্বাসনের জীবনেই নতুন গবেষণার কাজে হাত দেন। এবারে তার কাজের বিষয় হল, প্রজনন ও ভ্রুণগঠন সম্পর্কে।
পাদুয়াতে থাকার সময়েই এই বিষয়ে কাজ করবার সংকল্প নিয়েছিলেন। এতদিনে সর্বনাশা বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে সেই সুযোগ পাওয়া গেল। পরীক্ষার জন্য যে হরিণ দরকার হত, অভয়ারণ্য থেকেই তা পাওয়া গেল। তার অনুরোধে নির্বাসিত রাজাই সেই ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন।
নির্বাসনের দিনগুলোর একঘেয়ে জীবন হারভে কাটালেন ভ্রুণঘটিত গবেষণায় ডুবে থেকে।
নানা অসুবিধার জন্য যদিও তিনি গবেষণা সম্পূর্ণ করতে পারেননি, তবু তার প্রারব্ধ কাজই উত্তরকালের জীবতত্ত্ববিদদের প্রেরণার ইন্ধন জুগিয়েছিল। যৌন কোষ ও ভ্রুণের গঠন নিয়ে জীববিদ্যায় নতুন গবেষণার পথ সুগম করেছিল।
জীবনের অধিকাংশ সময়ই হারভে ব্যয় করেছিলেন পশুদের প্রজনন সম্পর্কে গবেষণায় ৷ এই বিষয় নিয়েই তার তৃতীয় বইটি প্রকাশিত হয় ১৬৫১ খ্রিঃ।
সারা ইউরোপেই এই বই অভাবিত জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল। প্রাচীনকাল থেকে বিজ্ঞানের যত বিষয়ের ওপর গবেষণা হয়েছে, এর মধ্যে হারভের গবেষণা – প্রজনন বিষয়টি ছিল অভিনব। ইতিপূর্বে এই বিষয় নিয়ে কাজ করবার কথা কেউ চিন্তাও করতে পারেন নি। এই কারণেই হারভেকে বলা হয় চিকিৎসাবিজ্ঞানের নতুন পথের পথিকৃৎ।
কি করে বিজ্ঞানের আলোয় বিজ্ঞানীকে পথ দেখে অগ্রসর হতে হয় সেই সম্পর্কে উত্তরকালের বিজ্ঞানীদের জন্য হারভে রেখে গেছেন তার মূল্যবান পরামর্শ – ….. ” Without frequent observation and reterated experiment the mind goes astray after phantoms and appearances. “
উইলিয়াম হার্ভে র মৃত্যু: William Harvey’s Death
১৬৫৭ খ্রিঃ হারভে মৃত্যুমুখে পতিত হল।
আরও পড়ুন-