আসুন জানি হাতের যত্ন কি ভাবে নেবেন

হাতের যত্নের জন্য আপনার যা জানা উচিত
হাতের যত্নের জন্য আপনার যা জানা উচিত

আসুন জানি হাতের যত্ন কি ভাবে নেবেন: আমাদের দেশের মেয়েরা সাধারণত মুখের যত্ন নিতেই ব্যস্ত থাকেন । হাত-পায়ের যত্নের ব্যাপারে তারা বেশ উদাসীন । কিন্তু হাত আমাদের যেমন প্রয়োজনীয় অঙ্গ তেমনি কোমল হাত ও কনকচাঁপার কলির মতো আঙুল সৌন্দর্যে যোগ করে নতুন মাত্রা ।

আসুন জানি হাতের যত্ন কি ভাবে নেবেন

জন্মগতভাবে সুন্দর হাতের অধিকারিণীর সংখ্যা খুবই কম । তবে যত্নের মাধ্যমে যে কেউ সুন্দর হাতের অধিকারিণী হতে পারেন । হাতের যত্নের জন্যে সামান্য কিছু নিয়ম পালন করতে হবে । তা হলে অনেক বয়স পর্যন্ত হাতের সৌন্দর্য ধরে রাখতে পারবেন ।

মেয়েদের প্রধানত রান্নাবান্না ও গৃহস্থালি কাজ বেশি করতে হয় । হাতই সেখানে ব্যবহৃত হয় বেশি । তরকারি ও তেল-মশলার দাগ প্রায় সময়ই হাতে লাগে । একটু লেবুর রস কিংবা তেঁতুল পানি দিয়ে হাতটা অনায়াসে পরিষ্কার করে নিতে পারেন ।

কেবল হাতের পাতা বা নখের যত্ন নিলেই হবে না, বাহুর যত্নও নিতে হবে । বাহু হতে নখ পর্যন্ত পুরোপুরি যত্ন নিলেই হবে হাতের যত্ন নেয়া ।

গোসলের সময় বেসন গুলিয়ে বাহুসহ সম্পূর্ণ হাতে ঘষে গোসল করতে পারেন । অনেকের কনুইয়ে কালো ছাপ পড়ে । সে ক্ষেত্রে প্রতিদিন এক টুকরো লেবু নিয়ে ঘষে নিলে দাগ উঠে যাবে ।

কুসুম গরম পানিতে হাত পরিষ্কার করা ভালো । গোসল শেষে কোনো হ্যান্ড লোশন কিংবা একটু গ্লিসারিন সমপরিমাণ পানির সাথে মিশিয়ে হাতে মেখে নিতে পারেন । তবে গ্লিসারিন মেখে রোদ লাগাবেন না । এতে চামড়া পুড়ে কালো হয়ে যাবে । গোসলের আগে অলিভ অয়েল হাতে ভালো ভাবে মালিশ করে নিতে পারেন ।

এতে হাত ভালো থাকবে । অনেকের হাতে আবার অসংখ্য লোম, যা অনেকে পছন্দ করেন না । ইচ্ছে করলে আপনি ওয়াক্সিং করে অনায়াসে সে হাত লোমমুক্ত করে নিতে পারেন । অনেকের হাত দেহের তুলনায় মোটা । তারা সহজ কোয়ান্টাম ব্যায়ামের মাধ্যমে হাত সুন্দর করে তুলতে পারেন ।

এবার আসা যাক হাতের আঙুল ও নখের যত্ন প্রসঙ্গে । হাতের আঙুলের নখের যত্নকে বলা হয় ম্যানিকিওর । এই ম্যানিকিওর সপ্তাহে একদিন, না পারলে ১৫ দিনে একদিন করলে ভালো হয় । এতে হাতের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাবে, পুরানো মরা চামড়া ও ময়লা সম্পূর্ণরূপে পরিষ্কার হবে ।

আরও পড়ুন- পায়ের যত্ন কিভাবে নেব

ম্যানিকিওর করার জন্যে কিছু জিনিস দরকার হয় । যেমন:

1. নেইল পলিশ তোলার জন্যে রিমুভার

2. এক বাটি হালকা গরম পানি ও সাবান

3. একটি ছোট তোয়ালে

4. নখ পরিষ্কার করার ব্রাশ

5. কিউটিকল ছুরি

6. হাতে ব্যবহারের ক্রিম বা অলিভ অয়েল

7. গ্লিসারিন বা গোলাপ পানি

8. নরম কাঠের কাঠি বা অরেঞ্জ স্টিক

9. এমারি বোর্ড বা শিরিস বোর্ড

নখের পরিচর্যার পদ্ধতি

প্রথমে নখে যদি নেইল পলিশ লাগানো থাকে তবে তা রিমুভার দিয়ে তুলে ফেলুন । ভালো করে নিজের ইচ্ছেমতো শেপ দিয়ে নখ কাটুন । তবে ডিম্বাকৃতি শেপ সুন্দর লাগে বেশি । এরপর এমারি বোর্ড দিয়ে নখগুলো ধীরে ধীরে সুন্দরভাবে ফাইল করে নিন ।

একটা বাটিতে হালকা গরম সাবান পানি নিয়ে তার মধ্যে হাত দুটো ১৫/২০ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন । দেখবেন নখের চারপাশের ত্বক (cuticle) নরম হয়ে গেছে ।

এবার ব্রাশের সাহায্যে ব্রাশ করে ভালো ভাবে হাত ধুয়ে নিন ।

কিউটিকলের মরা ত্বক কিউটিকল ছুরি দিয়ে পরিষ্কার করে নিন । তারপর তোয়ালে দিয়ে হাত ভালো ভাবে শুকনো করে মুছে নিয়ে ক্রিম ম্যাসাজ করে নিন অথবা অলিভ অয়েল হালকা গরম করেও ম্যাসাজ করতে পারেন ।

অরেঞ্জ স্টিকের ভোঁতা দিক দিয়ে নখের গোড়ায় ক্রিম লাগিয়ে নিন । রাতে শোবার আগে গ্লিসারিনের সাথে সমপরিমাণ গোলাপ পানি মিশিয়ে হাতে মেখে নিতে পারেন ।

এতে হাতের ত্বক নরম থাকবে এবং হাত ফাটবে না । এছাড়া আপনি কোনো ভালো হ্যান্ড লোশন ব্যবহার করতে পারেন কিংবা অলিভ অয়েল ম্যাসাজ করে নিতে পারেন । হাতে নেইল পলিশ লাগালে ভালো দেখে লাগাবেন । প্রথমে একবার পাতলা করে দিয়ে শুকিয়ে নিয়ে, দ্বিতীয়বার লাগাবেন । এভাবে তৃতীয়বারও লাগিয়ে নিতে পারেন । এছাড়া মেহেদি দিয়েও হাত রাঙাতে পারেন ।

নখের যত্নের টুকিটাকি

1. নখ পাতলা হলে বা ভেঙে গেলে মাস তিনেক প্রতিদিন জেলাটিন খেলে ঠিক হয়ে যাবে ।

2. নখের পুষ্টির জন্যে এ, বি, সি ও ডি ভিটামিনযুক্ত খাবার খাবেন ।

3. সপ্তাহে দু/তিন দিন ক্যাস্টর অয়েল লাগাবেন অথবা অলিভ অয়েল হালকা গরম করে নখে মালিশ করবেন ।

4. প্রতিদিন হাতের ব্যায়াম ও ম্যাসাজ করবেন ।

5. লাল আভাযুক্ত নীল দেখলে বুঝবেন নখের স্বাস্থ্য ভালো । নীল আভাযুক্ত দেখলে বুঝবেন নখের রক্ত প্রবাহ দুর্বল ।

6. অতিরিক্ত গরম পানি বা অতিরিক্ত ঠান্ডা পানিতে নখ ভেজাবেন না ।

7. হাত সারাক্ষণ পানিতে ভেজাবেন না । এতে হাতের ত্বক ফেটে যেতে পারে । হাত কম ভেজানোই ভালো ।

8. সপ্তাহে একদিন ম্যানিকিওর করা উচিত ।

9. প্রতিদিন রাতে হাত ধুয়ে ভালো ভাবে মুছে নিয়ে কোনো ভালো ক্রিম, লোশন বা অলিভ অয়েল হালকা গরম করে ম্যাসাজ করতে পারেন । অল্প খরচে গ্লিসারিনের সাথে সমপরিমাণ পানি মিশিয়ে হাতের বাহু হতে আঙুলের ডগা পর্যন্ত মেখে নিতে পারেন ।

10. হাতের আঙুল গোড়া থেকে ডগা পর্যন্ত একটু হালকাভাবে মোচড় দেয়ার মতো মালিশ করবেন । এতে আঙুলের গাঁট যাদের মোটা তারা উপকার পাবেন ।

11. প্রতিদিন ১০ বার হাতের ব্যায়াম করলে হাতে রক্ত সঞ্চালন ভালো হয়ে হাত সুন্দর থাকবে । হাত মুষ্টিবদ্ধ করে মুষ্টি খুলে আঙুলগুলো যতদূর সম্ভব ছড়িয়ে দেবেন । এভাবে একবার মুষ্টিবদ্ধ করবেন, একবার ছাড়বেন । এভাবে প্রতিদিন ১০ বার করুন ।

12. সবসময় পুরানো নেইল পলিশ তুলে ফেলে নতুন নেইল পলিশ লাগাবেন । গরমের দিনে হালকা মিষ্টি রঙের নেইল পলিশ ভালো লাগবে । শীতে গাঢ় রং ভালো লাগবে । রাতের অনুষ্ঠানে আপনি গাঢ় রঙের নেইল পলিশ ব্যবহার করতে পারেন ।

13. আজকাল অল্প বয়সী মেয়েরা নখের ওপর লাগানোর জন্যে নেইল পলিশ দেয়ার পর বিভিন্ন রঙের ফুল বা ডিজাইন ব্যবহার করে বৈচিত্র এনে থাকে । তবে পোশাকের সাথে মিলিয়ে পার্লি অথবা নন-পার্লি নেইল লশ ব্যবহার করলে কোমল সৌন্দর্য ফুটে ওঠে ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here