কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য এর জীবনী: আজ আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি মহান ব্যক্তিদের জীবনী সমগ্র। মহান ব্যক্তি আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা। তাঁদের জীবনের ক্ষুদ্রতম অংশগুলি আমাদের জন্য শিক্ষামূলক হতে পারে। বর্তমানে আমরা এই মহান ব্যক্তিদের ভুলতে বসেছি। যাঁরা যুগ যুগ ধরে তাদের কর্ম ও খ্যাতির মধ্য দিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন এবং জ্ঞান, বিজ্ঞান, শিল্প ও সাহিত্যের জগতে এক অনন্য অবদান রেখেছেন এবং তাঁদের শ্রেষ্ঠ গুণাবলী, চরিত্র দ্বারা দেশ ও জাতির গৌরব বৃদ্ধি করেছেন। সেইসব মহান ব্যক্তিদের মধ্যে অন্যতম কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য -এর সমগ্র জীবনী সম্পর্কে এখানে জানব।
কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য এর জীবনী – Sukanta Bhattacharya Biography in Bengali
নাম | সুকান্ত ভট্টাচার্য |
জন্ম | 15th আগস্ট 1926 |
জন্মস্থান | কলকাতা, বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি, ব্রিটিশ ভারত |
পিতা | নিবারণ ভট্টাচার্য |
মাতা | সুনীতি দেবী |
জাতীয়তা | ব্রিটিশ ভারতীয় |
পেশা | কবি |
মৃত্যু | 13th মে 1947 (বয়স 20) |
সুকান্ত ভট্টাচার্য কে ছিলেন? Who is Sukanta Bhattacharya?
সংগ্রামী এক যুব-মানস রূপেই আকস্মিকভাবে বাংলা সাহিত্য ক্ষেত্রে আবির্ভাব হয়েছিল কিশাের কবি সুকান্তের। আবার অকালে তাঁঁর বিদায়ও ছিল এক আকস্মিক ঘটনা।
সুকান্ত ভট্টাচার্যর প্রথম জীবন: Sukanta Bhattacharya’s Early Life
বাংলাদেশের দুর্ভিক্ষ, বিধ্বংসী মহাযুদ্ধের হাহাকার- এমনি এক বিপর্যস্ত পরিবেশের মধ্যেই গড়ে উঠেছিল সুকান্তের কবি-মানস। প্রখর সমাজ নিষ্ঠার সঙ্গে স্বদেশ ও ইতিহাস চেতনায় সাম্যবাদ, মানবপ্রেম ছিল তাঁর কাব্যের উপজীব্য। স্বদেশ ও সমাজের দুঃখদুর্দশা, শশাষণ, লাঞ্ছনা, তাঁর মধ্যে এক আপােসহীন সংগ্রামী মনােভাবের জন্ম দিয়েছিল। তথাকথিত কবিসুলভ আত্মকেন্দ্রিক রােম্যান্টিক কল্পনাবিলাস তাঁর কাব্যে কোথাও প্রশ্রয় পায়নি।
একারণেই তিনি হয়ে উঠেছিলেন জনজীবনের একান্ত আপনার সংগ্রামী কবি।
সুকান্ত ভট্টাচার্যর জন্ম: Sukanta Bhattacharya’s Birthday
কলকাতার কালীঘাট অঞ্চলে ১৯২৫ খ্রিঃ ১৫ ই আগস্ট জন্ম হয় কবি সুকান্তের।
সুকান্ত ভট্টাচার্যর পিতামাতা ও জন্মস্থান: Sukanta Bhattacharya’s Parents And Birth Place
তাদের পৈতৃক নিবাস ছিল অধুনা বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলার কোটালিপাড়ায়।
তাঁর পূর্বপুরুষরা ভাগ্যান্বেষণে কলকাতায় এসে বেলেঘাটা অঞ্চলে বসবাস করেন। যজন-যাজন ছিল পারিবারিক বৃত্তি। সুকান্তর পিতার নাম নিবারণচন্দ্র ভট্টাচার্য, মাতা সুনীতি দেবী। তিনি ছিলেন পিতামাতার দ্বিতীয় সন্তান। বিদ্যাশিক্ষার শুরু হয়েছিল স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয় কমলা বিদ্যামন্দিরে। বাল্য বয়সেই ছড়া কবিতা লিখতেন। চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ার সময়ে স্কুলের হাতেলেখা ত্রিকায় ছড়া ও গল্প লিখে কবি খ্যাতি লাভ করেন। ছাপা অক্ষরে তাঁর প্রথম প্রকাশিত রচনা বিবেকানন্দের জীবনী, প্রকাশিত হয়েছিল শিখা পত্রিকায়।
সুকান্তর পারিবারিক পরিবেশর্তার মানসিক বিকাশের অনুকূল ছিল না। দারিদ্য ছিল পরিবারের নিত্য সহচর। আবাল্য অভাব অনটনের মধ্যেই কাটাতে হয়েছে তাকে। এই পারি পার্শ্বিকতায় থেকেই সুকান্তর অদম্য কবি প্রতিভা তাঁর কাব্যের উপাদান সঞ্চয় করেছে।
সাধারণ দুঃখক্লিষ্ট জীবনকে তিনি ঘনিষ্ঠভাবে দেখার ও উপলব্ধি করার সুযােগ পেয়েছিলেন বলেই ভাবীকালে সমাজবাদ ও সাম্যবাদের একনিষ্ঠ সৈনিক হয়ে উঠতে পেরেছিলেন তিনি।
আরও পড়ুন- গ্রিক মহাকাব্যিক কবি হোমারের জীবনী সমগ্র
দুঃসময়ে, দুর্দিনেও তিনি বিশ্বাসের ভূমিচ্যুত হননি। ১৯৪১ খ্রিঃ রবীন্দ্রপ্রয়াণ উপলক্ষে সুকান্ত রেডিওতে স্বরচিত কবিতা পাঠ রেছিলেন।
গল্পদাদুর আসরে তিনি আবৃত্তিও করতেন। স্কুলে থাকতেই সুকান্ত ১৯৪১-৪২ খ্রিঃ মার্কসবাদী চিন্তাধারার সংস্পর্শে আসেন।
সুকান্ত ভট্টাচার্যর রাজনৈতিক জীবন: Sukanta Bhattacharya’s Political Life
কমিউনিস্ট পার্টির কাজ করেছেন অক্লান্তভাবে। ১৯৪৫ খ্রিঃ সুকান্ত বেলেঘাটা দেশবন্ধু হাইস্কুল থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষা দেন। পরের বছর থেকেই তাঁর শরীরে ক্ষয় রােগ ধরা পড়ে।
আরও পড়ুন- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিভিন্ন গল্পের চরিত্র
মাঝেমাঝেই অসুস্থ হয়ে পড়তে থাকেন। অক্ষম দেহ নিয়েও অক্লান্তভাবে তিনি লিখে গেছেন। অধুনালুপ্ত স্বাধীনতা পত্রিকার কিশাের সভা অংশের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন সুকান্ত।
তাঁর উদ্যোগে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে কিশাের বাহিনী নামে কিশাের সংগঠনও গঠিত হয়েছিল।
সুকান্ত ভট্টাচার্যর মৃত্যু: Sukanta Bhattacharya’s Death
১৯৪৭ খ্রিঃ ১৩ ই মে রােগভােগে সংগ্রামী কিশাের কবির মৃত্যু হয়।
সুকান্ত ভট্টাচার্যর রচনা: Written by Sukanta Bhattacharya
সেই সময় তাঁর বয়স ছিল একুশ বছর। ছাড়পত্র, ঘুমনেই, পূর্বাভাস সুকান্তর বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ। অন্যান্য রচনা মিঠেকড়া, অভিযান, হরতাল প্রভৃতি।
সুকান্ত ভট্টাচার্যের বিখ্যাত কবিতা
গন্ধ এনেছে তীব্র নেশায়, ফেনিল মদির,
জোয়ার কি এল রক্ত নদীর?
নইলে কখনো নিস্তার নেই বন্দীশালায়।
সচারাচর কি সামনা সামনি ধূর্ত পালায়?
কাজ নেই আর বল্লাল সেন-ই আমলে,
মুক্তি পেয়েছি ধোঁয়াতে নিবিড় শ্যামলে,
তোমাতে আমাতে চিরদিন চলে দ্বন্দ্ব।
ঠাণ্ডা হাওয়ায় তীব্র বাঁশির ছন্দ।
মনেরে জাগায় সাবধান হুঁশিয়ার।
খুঁজে নিতে হবে পুরাতন হাতিয়ার
পাণ্ডুর পৃথিবীতে।
আফিঙের ঘোর মেরু-বর্জিত শীতে
বিষাক্ত আর শিথিল আবেষ্টনে
তোমারে স্মরিছে মনে।
সন্ধান করে নিত্য নিভৃত রাতে
প্রতিদ্বন্দ্বী, -উচ্ছল মদিরাতে।।
(পূর্বাভাস কাব্যগ্রন্থ)
Q. সুকান্ত ভট্টাচার্য ছদ্মনাম কী?
কিশোর কবি
Q. সুকান্ত ভট্টাচার্যের বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থের নাম কী
ছাড়পত্র
Q. ছারপত্র কবে প্রকাশ হয়?
১৯৪৭ সালে।
Q. সুকান্ত ভট্টাচার্যের প্রথম কবিতার নাম?
সুকান্ত ভট্টাচার্য ছোটবেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যখন পড়তেন তখনই তিনি কবিতা ছড়া লিখতে শুরু করেন। সেই সময় তিনি “সঞ্চয়” নামে একটি হাতে লেখা পত্রিকা প্রকাশ করলেন। তাঁর লেখা কবিতা ওই সময় ‘শিখা’ নামে একটি পত্রিকাতেও প্রকাশিত হয়েছিল।