গর্ভবতী মহিলাদের জন্যে কিছু ব্যায়াম: যোগা (Yoga) হল প্রাচীন ভারতে উদ্ভূত এক বিশেষ ধরনের শারীরিক ও মানসিক ব্যায়াম এবং আধ্যাত্মিক অনুশীলন প্রথা। শরীর, মন সুস্থ ও সবল রাখতে এবং রোগ মুক্তিতে যোগাসনের ভূমিকা আজ সুপ্রতিষ্ঠিত। এই প্রথা সারা বিশ্বে আজও প্রচলিত আছে। তাই আজ আমরা আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি গর্ভবতী মহিলাদের জন্যে কিছু ব্যায়াম। গর্ভবতী মহিলাদের জন্যে কিছু ব্যায়াম নিয়ে নিচে আলোচনা করা হল।
গর্ভবতী মহিলাদের জন্যে কিছু ব্যায়াম
গর্ভবতী মায়েরা সামান্য কিছু ব্যায়ামের দ্বারাই নিজের শরীরকে সুস্থ ও সবল রাখতে পারেন । সন্তান প্রসবের ব্যাপারে সাধারণত সব মেয়েরই একটা ভয় কাজ করে । তাই গর্ভাবস্থায় ব্যায়ামের মাধ্যমে পেটের মাংসপেশিকে মজবুত রেখে শিশুর বৃদ্ধি অব্যাহত রাখতে পারবেন । এছাড়া পেলভিস মাংসপেশির স্থিতিস্থাপকতা ঠিক রেখে নিরাপদে প্রসব করতে পারবেন ।
সবসময় একটা কথা মনে রাখবেন, গর্ভাবস্থায় সঠিকভাবে দম নেয়া উচিত । তাতে শরীরের দূষিত পদার্থ বেরিয়ে যেতে সাহায্য করে এবং ব্যায়ামের ফলে শরীরে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পায় বলে শরীর সুস্থ ও সবল রাখে ।
প্রতিদিন ১০/১৫ মিনিটের মতো ব্যায়ামই যথেষ্ট, এর বেশি করার প্রয়োজন নেই । বেশি ব্যায়াম গর্ভবতী মায়েদের জন্যে খুবই ক্ষতিকর ।
আরো পড়ুন- কোমরে ব্যথার রোগীদের জন্যে পরামর্শ
গর্ভবতী মহিলাদের প্রতিদিন সকালে ব্যায়াম করা ভালো ।
গর্ভবতী মহিলারা ব্যায়াম শেষে অবশ্যই ১০ মিনিট শবাসনে বিশ্রাম নিন এবং মনে মনে এ অবস্থা কল্পনা করুন- পরম করুণাময় আপনাকে একটি সুস্থ সুন্দর মেধাবী শিশু প্রসব করার ক্ষমতা দিয়েছেন । আপনি বেশ ভালো বোধ করছেন ।
ব্যায়াম শেষে বিশ্রাম নেয়ার পরে কুসুম গরম পানি দিয়ে গোসল অথবা তোয়ালে ভিজিয়ে সমস্ত শরীর মুছে ফেলুন ।
গর্ভবতী মহিলারাও খোলামেলা আলো-বাতাসপূর্ণ ঘরে ব্যায়াম করুন । শীতের সময় ঘরে ব্যায়াম করার পূর্বে বাতাস চলাচল করিয়ে নিয়ে ব্যায়াম করুন ।
আরো পড়ুন- স্থিরায়ন বা গোমুখাসন করার পদ্ধতি উপকারিতা
শেষ কথা হলো, গর্ভধারিণীর অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ব্যায়াম করা উচিত । সবসময় ডাক্তারের পরামর্শে চলা উচিত । ১৫ দিন অন্তর ডাক্তারের পরামর্শ নিন । ডাক্তারের পরামর্শে গর্ভধারণের নয় মাস পর্যন্ত ব্যায়াম করতে পারেন । তবে অবশ্যই মনে রাখবেন চিকিৎসক যদি আপনাকে ব্যায়াম করতে নিষেধ করেন কিংবা নির্দিষ্ট ব্যায়ামগুলোর মধ্যে যে কোনোটি বিশেষভাবে বারণ করেন তাহলে করবেন না । কেননা একজন চিকিৎসকই এসময় আপনার সম্পর্কে এবং অভ্যন্তরীণ শিশুর পজিশন সম্পর্কে ভালো বুঝবেন । নিজে নিজে ব্যায়াম করতে গিয়ে হিতে বিপরীত করবেন না ।
গর্ভবতী মায়েদের গর্ভাবস্থায় নানান জটিলতা দেখা যায় । যেমন কারো কারো বাচ্চা নষ্ট হয়ে যায় । গর্ভাবস্থায় রক্তস্রাব একটু একটু করে হয়ে থাকে । আরো নানান অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে । গর্ভবতী মায়েদেরকে ডাক্তাররা অনেক সময় সম্পূর্ণরূপে বেড রেস্ট নিতে বলেন । কাজেই যদি আপনার কখনো এরকম অবস্থা হয় আর আপনি ব্যায়াম করেন তাহলে আপনার মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে । তাই গর্ভবতী মায়েরা সবসময় ডাক্তারের পরামর্শেই ব্যায়াম করবেন । এ অধ্যায়ে গর্ভবতী মায়েদের জন্যে কিছু ব্যায়াম করার পদ্ধতি আলোচনা করা হলো, যা একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে করতে পারেন ।
বি.দ্র. : গর্ভাবস্থায় কোনো মতেই তাড়াহুড়ো করে ব্যায়াম করা উচিত নয় । প্রতিটি ব্যায়াম করার পর ২০/৩০ সেকেন্ড বিশ্রাম নিয়ে তবে অন্য একটি ব্যায়াম করতে হবে । ব্যায়ামের সময় আরামদায়ক পোশাক পরা উচিত ।
১ নম্বর ব্যায়াম
প্রথমে মাটিতে চিৎ হয়ে শুয়ে দুই হাঁটু ভাঁজ করে পায়ের পাতা দুটো মাটিতে রাখুন । হাত দুটো শরীরের দুপাশে রাখুন । এবার ধীরে ধীরে গভীরভাবে নাক দিয়ে দম নিতে নিতে হাত দুটো তুলে এনে (২ নং ছবির মতো)
মাথার পেছনে রাখুন । হাতের পিঠ মাটিতে, তালু ওপরের দিকে থাকবে । এরপর ধীরে ধীরে মুখ দিয়ে দম ছাড়তে ছাড়তে হাত দুটো পূর্বের অবস্থায় শরীরের দুপাশে এনে রাখুন । হাতের তালু মাটিতে থাকবে । এভাবে দুই বার করুন ।
আরো পড়ুন- ঘাড়ে ব্যথার রোগীদের জন্যে বিশেষ পরামর্শ
২ নম্বর ব্যায়াম
প্রথমে শরীরের দুপাশে হাত লাগিয়ে হাঁটুর ওপর ভর দিয়ে দাঁড়ান-নীল ডাউনের মতো করে (১ নং ছবির মতো) ।
এবার গভীরভাবে দম নিতে নিতে ধীরে ধীরে হাত দুটো (২ নং ছবির মতো)
কাঁধের দুপাশে রাখুন । তারপর ধীরে ধীরে মুখ দিয়ে দম ছাড়তে ছাড়তে হাত দুটো আগের অবস্থায় নিয়ে আসুন । এভাবে দুই বার করুন ।
৩ নম্বর ব্যায়াম
প্রথমে দুই পা জোড় করে মাটিতে বসুন এবং হাত দুটো শরীরের দুপাশে রাখুন; হাতের আঙুলগুলো বাইরের দিকে ফেরানো থাকবে । (১ নং ছবির মতো)
এবার দম নিতে নিতে (২ নং ছবির মতো) যতদূর সম্ভব কষ্ট না করে আরাম করে পা দুটো ফাঁক করুন । এর পর দম ছাড়তে ছাড়তে পূর্বের অবস্থায় (১ নং ছবির মতো) ফিরে আসুন ।
৪ নম্বর ব্যায়াম
প্রথমে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ুন । পা দুটো ভাঁজ করে এবং হাত দুটো শরীরের দুপাশে রাখুন (১ নং ছবির মতো) ।
এবার দম নিতে নিতে হাত ও কনুই এবং পায়ের ওপর ভর দিয়ে কোমর আস্তে আস্তে (২ নং ছবির মতো) ওপরে তুলুন । এরপর দম ছাড়তে ছাড়তে ১ নং ছবির অবস্থায় ফিরেআসুন ।
আরো পড়ুন- প্রসব পরবর্তী ব্যায়াম
৫ নম্বর ব্যায়াম
প্রথমে (১ নং ছবির মতো) হাঁটুর ওপর ভর দিয়ে দাঁড়ান । এরপর (২ নং ছবির মতো)
কোমরে হাত দুটো রেখে দম নিতে নিতে শরীরের ওপরের অংশ ডান দিকে ঘোরান এবং দম ছাড়তে ছাড়তে পূর্বের অবস্থায় অর্থাৎ এক নম্বর পজিশনে নিয়ে আসুন । পুনরায় এভাবে কোমরে হাত রেখে শরীর এবার বাঁ দিকে ঘোরান এবং পূর্বের অবস্থায় (১ নং ছবির মতো)
ফিরিয়ে নিয়ে আসুন । ইচ্ছে করলে এ ব্যায়ামটি সোজা হয়ে মাটিতে দাঁড়িয়ে কোমরে হাত রেখেও করতে পারেন । তবে নিয়ম একই হবে । এভাবে দুই বার করতে পারেন ।
৬ নম্বর ব্যায়াম
প্রথমে পা দুটো সামান্য ফাঁক রেখে সোজা হয়ে মাটিতে দাঁড়ান (১ নং ছবির মতো) ।
এবার দম নিতে নিতে কোমর থেকে শরীরের ওপরের অংশ সামান্য সামনের দিকে ঝুঁকিয়ে দিন (২ নং ছবির মতো) । এবার দম ছাড়তে ছাড়তে আগের অবস্থায় ফিরে আসুন । এভাবে দুই বার করতে পারেন ।
৭ নম্বর ব্যায়াম
প্রথমে পা সামান্য ফাঁক রেখে কোমরে হাত রেখে মাটিতে সোজা হয়ে দাঁড়ান (১ নং ছবির মতো) ।
এবার দম নিতে নিতে কোমর থেকে শরীরের ওপরের অংশ ডান দিকে একটু বাঁকিয়ে দিন (২ নং ছবির মতো) ।
এবার দম ছাড়তে ছাড়তে পূর্বের অবস্থায় (১ নং ছবির মতো) ফিরে আসুন । একইভাবে দম নিতে নিতে শরীরের ওপরের অংশ বাম দিকে একটু বাঁকিয়ে দিন (৩ নং ছবির মতো) এবং দম ছাড়তে ছাড়তে পূর্বের অবস্থায় (১ নং ছবির মতো) ফিরে আসুন । এভাবে দুই বার করতে পারেন ।
৮ নম্বর ব্যায়াম
প্রথমে চেয়ারের পেছনে ডান হাত রেখে মাটিতে সোজা হয়ে দাঁড়ান । এবার দম নিতে নিতে ধীরে ধীরে (১ নং ছবির মতো)
বাঁ পা ওপরে তুলুন । মাটি থেকে এক ফুট পরিমাণ ওপরে । দম ছাড়তে ছাড়তে ধীরে ধীরে বাঁ পা নামান । এরপর ডান পা মাটি থেকে এক ফুট ওপরে তুলুন । দম ছাড়তে ছাড়তে ডান পা নামান (১ নং ছবির মতো) ।
বিশেষভাবে খেয়াল রাখুন যেন চেয়ারের ওপর বেশি ভার না পড়ে ।
বি.দ্র. : এই ৮ টি ব্যায়াম একদিনেই করবেন না । প্রতিদিন তিন/চারটি করে ব্যায়াম করতে পারেন । যদি একদিনেই করতে চান তাহলে কোনো ব্যায়ামই একবারের বেশি করবেন না ।