আজকের এই সভ্য় সমাজের মানুষকে সামাজিক ভাবে আকর্ষণীয় দেখায়। তার কারণ হলো সৌন্দর্যচর্চা বা রূপচর্চা। সৌন্দর্যচর্চা বা রূপচর্চা স্নানের ভূমিকা অপরিসীম। তাই আমরা এখানে সৌন্দর্যচর্চার স্নানের ভূমিকা সম্পর্কে জানাবো।
সৌন্দর্যচর্চা স্নান (গোসল)
স্নান সুস্বাস্থ্য ও ত্বকের সৌন্দর্য রক্ষায় স্নান (স্নানের) কোনো জুড়ি নেই । আমাদের এই গ্রীষ্মপ্রধান অঞ্চলে ঘাম, ময়লা ও ক্লান্তিজনিত অবসাদ দূরীকরণে মনের মতো স্নান কাজ করে টনিকের মতো । একারণেই যুগ যুগ ধরে গোসলকে শুধুমাত্র আবশ্যিক কাজ হিসেবে দেখা হয় নি; বরং একে আনন্দময় ও কার্যকর করার জন্যে নানা মাত্রা সংযোজন করা হয়েছে । কথিত আছে, মিশরের রানী ক্লিওপেট্রা প্রতিদিন একশত গাধার দুধ দিয়ে স্নান করতেন । সম্রাজ্ঞী নূরজাহানের স্নান লাগতো সহস্ৰ গোলাপ ।
স্নান করার জন্যে বিভিন্ন দেশে তৈরি হয়েছিল হাম্মাম খানা । আর মরুভূমির মানুষেরা সবসময়ই স্বপ্ন দেখতো দরিয়ার হাম্মামে স্নান করার । দরিয়ার হাম্মাম মানে প্রবহমান নদী ।
পল্লী বাংলায় গ্রামের ধার দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীতে যে কেবল মাত্র পুরুষেরাই গোসল করতো তা নয়; কলসি কাঁখে দল বেঁধে পল্লীবালারাও জলেতে অবতরণের আনন্দে মেতে উঠতো । নদীর জলেতে সাঁতার কেটে গোসল করার যে আনন্দ, তা থেকে শহরবাসীরা বঞ্চিত তাতে কোনো সন্দেহ নেই । তবে একটু সহজ বুদ্ধি প্রয়োগ করলেই গোসল যেমন ত্বক পরিষ্কারে সহায়ক হতে পারে তেমনি ক্লান্তি-অবসাদও দূর করতে পারে ।
তাই আসুন গোসলের পূর্বে কী করলে আপনার ত্বকের সৌন্দর্য ও মনের প্রফুল্লতা বজায় থাকবে তা নিয়ে আলোচনা করি ।
আরো পড়ুন- সৌন্দর্যচর্চার গোপন ইতিহাস
স্নান করার আগে শরীরকে অবশ্যই ঠান্ডা করতে হবে । বাইরে থেকে ঘাম নিয়ে অথবা রান্না ঘরের কাজ সারার পর পরই স্নান করতে যাবেন না । অবশ্যই 10 মিনিট শরীরটাকে জুড়িয়ে নেবেন । সাবান ও বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদান বাদে প্রাকৃতিক উপায়েও আপনি সুন্দরভাবে পরিপূর্ণ এবং তৃপ্তিকর স্নান করতে পারেন ।
তবে এর আগে আপনাকে আপনার ত্বক সম্পর্কে সচেতন হতে হবে; জানতে হবে আপনার ত্বক শুষ্ক, স্বাভাবিক, তৈলাক্ত না মিশ্র । যা-ই হোক না কেন- এর পরিচর্যায় প্রাকৃতিক ভেষজ উপাদান রয়েছে যার কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই ।
গোসলের জন্যে সাবানের পরিবর্তে অল্প খরচে বেসন বা আটা অনায়াসে ব্যবহার করতে পারেন । হাত-পায়ের দাগ, ময়লা তোলার জন্যে একটুকরো লেবু নিতে পারেন । গা ঘষার জন্যে ব্যবহার করতে পারেন ধুনদুলের খোসা কিংবা ছোট তোয়ালেকে ব্যান্ডের মতো করে মুখে ইলাস্টিক লাগিয়ে নিজেই গ্লাভস- এর মতো বানিয়ে নিতে পারেন ।
শুষ্ক ত্বক হলে বেসনের সাথে মধু মিশিয়ে মুখে মেখে নিন এবং গোসলের পাঁচ মিনিট আগে সারা শরীরে মাখন অথবা অলিভ অয়েল বা নারকেল তেল ভালো করে মেখে নিন ।
এবার সারা শরীরে জল ঢেলে দিন । এবার জল দিয়ে তৈরি বেসন বা আটার পেস্ট সারা শরীরে সাবানের মতো ঘষে নিয়ে জল ছেড়ে স্নান করতে পারেন । মনে রাখবেন সুস্থ শরীরে কখনোই অতিরিক্ত ঠান্ডা জল বা শরীরের তাপমাত্রার চেয়ে উষ্ণ জল ব্যবহার করবেন না । আপনার ত্বক তৈলাক্ত হলে বেসন বা আটার সাথে শুধু জল মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে সমস্ত শরীরে, মুখে ব্যবহার করতে পারেন ।
মিশ্র ত্বক হলে শুষ্ক স্থানে মধু ও বেসনের পেস্ট এবং তৈলাক্ত স্থানে জল ও বেসনের পেস্ট লাগিয়ে নেবেন । তারপর পর্যাপ্ত জল দিয়ে ভালোভাবে স্নান সেরে নিন ।
এবার যদি আপনি সুগন্ধিযুক্ত জল গোসলে ব্যবহার করতে চান তবে তা প্রাকৃতিক উপায়ে বানানোর পদ্ধতি জেনে নিন ।
আরো পড়ুন- সৌন্দর্যচর্চার মৌলিক সত্য
1 . একবালতি জলেতে কয়েকটি তাজা লেবুপাতা চটকে নিতে পারেন । ঐ জল শরীরে ঢেলে নিলে শরীর থেকে লেবুর হালকা মিষ্টি গন্ধ ভেসে আসবে ।
2. একমগ জলেতে কমলা লেবুর খোসা পাঁচ মিনিট ফুটিয়ে নিয়ে ঠান্ডা করে একবালতি পানিতে মিশিয়ে শরীরে ঢালতে পারেন । এতে মিষ্টি সুন্দর গন্ধ পাওয়া যাবে ।
3. একবালতি জলেতে কয়েকটি তাজা গোলাপের পাপড়ি পাঁচ/ছয় ঘণ্টা ভিজিয়ে রেখে তা দিয়েও স্নান করতে পারেন । এই জল ব্যবহার করলে শরীর থেকে গোলাপের হালকা গন্ধ আসবে । এভাবে বেলী ফুল দিয়েও জল তৈরি করে নিতে পারেন ।
4. গোলাপ ফুলের পরিবর্তে অল্প গোলাপ জল জলেতে ঢেলে নিয়ে ব্যবহার করতে পারেন ।
5. যারা অতিরিক্ত ঘামেন তারা স্নান সেরে বালতির জলেতে অল্প ফিটকিরি মিশিয়ে গায়ে ঢেলে নিতে পারেন । এতে সেই দিন আপনি ঘাম ও ঘামের দুর্গন্ধ থেকে রেহাই পাবেন ।
এবার ভেজা তোয়ালে বা গামছা দিয়ে শরীর ভালোভাবে মুছে ফেলুন । গোসলের সময় আপনার যেসব প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র দরকার তা হলো
1. শরীর ঘষার ব্রাশ বা ছোবড়া (ধুনদুলের ছোবড়া হাতে সেলাই করে নিতে পারেন)
2. নাইলনের তৈরি স্পঞ্জ- যা স্টেশনারি দোকানে পাওয়া যায়
3. তোয়ালে বা গামছা
4. সাবান বা প্রাকৃতিক উপাদান (বেসন, আটা কিংবা ময়দা)
5. তেল (গোসলের একঘণ্টা পূর্বে ভালো করে শরীরে ম্যাসাজ করে নিন, এতে ত্বক মসৃণ থাকে)