প্রশান্তচন্দ্র মহলানবীশ জীবনী: আজ আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি মহান ব্যক্তিদের জীবনী সমগ্র। মহান ব্যক্তি আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা। তাঁদের জীবনের ক্ষুদ্রতম অংশগুলি আমাদের জন্য শিক্ষামূলক হতে পারে। বর্তমানে আমরা এই মহান ব্যক্তিদের ভুলতে বসেছি। যাঁরা যুগ যুগ ধরে তাদের কর্ম ও খ্যাতির মধ্য দিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন এবং জ্ঞান, বিজ্ঞান, শিল্প ও সাহিত্যের জগতে এক অনন্য অবদান রেখেছেন এবং তাঁদের শ্রেষ্ঠ গুণাবলী, চরিত্র দ্বারা দেশ ও জাতির গৌরব বৃদ্ধি করেছেন। সেইসব মহান ব্যক্তিদের মধ্যে অন্যতম প্রশান্তচন্দ্র মহলানবীশ (Prasanta Chandra Mahalanobis) -এর সমগ্র জীবনী সম্পর্কে এখানে জানব।
প্রশান্তচন্দ্র মহলানবীশ জীবনী – Prasanta Chandra Mahalanobis Biography In Bengali
নাম | প্রশান্তচন্দ্র মহলানবীশ |
জন্ম | 29th জুন 1893 |
পিতা | প্রবোধ চন্দ্র মহলানবীশ |
মাতা | – |
জন্মস্থান | কলকাতা, বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি, ব্রিটিশ ভারত (বর্তমানে কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ) |
জাতীয়তা | ভারতীয় |
পেশা | ভারতীয় বিজ্ঞানী এবং পরিসংখ্যানবিদ |
মৃত্যু | 28th জুন 1972 (বয়স 78) |
প্রশান্তচন্দ্র মহলানবীশ কে ছিলেন? Who is Prasanta Chandra Mahalanobis?
প্রশান্ত চন্দ্র মহলানবীশ (২৯ জুন ১৮৯৩- ২৮ জুন ১৯৭২) একজন ভারতীয় বিজ্ঞানী এবং পরিসংখ্যানবিদ ছিলেন। মহলানবিশ দূরত্ব নামক ধারণাটির জন্য এবং মুক্ত ভারতের দ্বিতীয় পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য হওয়ায় তিনি বিখ্যাত হয়ে আছেন। তিনি ভারতে নৃবিজ্ঞান বিষয়ে পড়াশোনা করেছিলেন। তিনি ভারতীয় পরিসংখ্যান ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং বড় আকারের নমুনা জরিপের নকশায় অবদান রেখেছিলেন। তাঁকে ভারতের আধুনিক পরিসংখ্যানের জনক বিবেচনা করা হয়।
রাশিবিজ্ঞানের জনক, সফল অধ্যাপক গবেষক প্রশান্তচন্দ্র মহলানবীশ তাঁর অপরিসীম পান্ডিত্যের জন্য দেশ বিদেশের প্রশংসা লাভ করেছিলেন। তাঁর অবদান বহুমুখী।
প্রশান্তচন্দ্র মহলানবীশ এর জন্ম: Prasanta Chandra Mahalanobis’s Birthday
১৮৯৩ খ্রিঃ ২৯ শে জুন কলকাতায় প্রশান্তচন্দ্রের জন্ম। তাঁর পিতার নাম প্রবোধচন্দ্র মহলানবীশ।
প্রশান্তচন্দ্র মহলানবীশ এর শিক্ষাজীবন: Prasanta Chandra Mahalanobis’s Educational Life
ছাত্র হিসেবে প্রশান্তচন্দ্র বরাবরই ছিলেন কৃতী। বিদ্যালয়ের পড়াশোনা শেষ করে প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন ৷ আই এসসি পাশ করার পর বিদেশে পাড়ি দেন।
কেমব্রিজে পড়াশোনা করেন। কেমব্রিজ থেকে গণিত ও পদার্থবিদ্যায় প্রথম শ্রেণীর অনার্স সহ ট্রাইপস পেয়ে ইন্ডিয়ান এডুকেশনাল সার্ভিসে যোগদান করেন। দেশে ফিরে এসে প্রেসিডেন্সিতে অধ্যাপক নিযুক্ত হন। প্রথমে ছিলেন অস্থায়ীপদে পরে স্থায়ী পদ লাভ করেন।
প্রশান্তচন্দ্র মহলানবীশ এর কর্ম জীবন: Prasanta Chandra Mahalanobis’s Work Life
১৯১৫ খ্রিঃ থেকে ১৯৪৮ খ্রিঃ পর্যন্ত একটানা তেত্রিশ বছর পেনিডেন্সিতে অধ্যাপনা করেন।
শেষের দিকে কয়েক বছর অধ্যক্ষের পদে ছিলেন। রাশিবিজ্ঞানে গভীর অধ্যয়ন ও গবেষণা ছিল প্রশান্তচন্দ্রের। এ বিষয়ে তাঁকে উদ্বুদ্ধ করেছিল পাশ্চাত্যের কার্ল পিয়ার্সনের রচনা ও গবেষণা।
প্রগাঢ় নিষ্ঠা ও একাগ্রতা নিয়ে রাশিবিজ্ঞানের ওপর গবেষণা করতেন তিনি। আশপাশের অনেকেই ব্যাপারটাকে অনেকটা উপহাসের দৃষ্টিতেই দেখত। বলত তার খেয়ালিপনা। এই উপেক্ষা ও অবহেলা অবদমিত করতে পারেনি প্রশান্তচন্দ্রকে।
আরও পড়ুন: ব্লেজ পাস্কাল জীবনী
এককালে তিনিই হয়ে উঠলেন রাশিবিজ্ঞানের পথিকৃৎ। প্রায়োগিক গবেষণাটির পাশাপাশি তাত্ত্বিক গবেষণাতেও নিরলস পরিশ্রম করেছেন। তারই সম্পাদনায় প্রকাশিত হত গবেষণা পত্রিকা ‘সংখ্যা’।
পরবর্তীকালে প্রতিষ্ঠা করেন ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিসটিকাল ইনসটিটিউট। এখানেই ভারতে প্রথম কম্পিউটার বসে প্রশান্তচন্দ্র ও হোমি জাহাঙ্গির ভাবার চেষ্টায়৷ স্ট্যাটিসটিকাল ইনসটিটিউট এক নিরস্তর গবেষণার ক্ষেত্র। কৃষিক্ষেত্র থেকে জাতীয় অর্থনীতি পর্যন্ত এখানকার গবেষণার ব্যাপ্তি। তার গবেষণার আলোয় আলোকিত উপকৃত হয়েছে বিভিন্ন দিক।
প্রধানমন্ত্রী নেহরুর অনুরোধে প্রশান্তচন্দ্র জাতীয় আয় বৃদ্ধি, এমনকি বেকারি সমস্যার সমাধানেও নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন। প্ল্যানিং কমিশনের সঙ্গেও যুক্ত হয়েছিলেন।
প্রশান্তচন্দ্রের ছিল নিখাদ সাহিত্য প্রীতি। রবীন্দ্রনাথের ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্য লাভেরও সৌভাগ্য হয়েছিল তার। প্রেসিডেন্সিতে অধ্যাপনার সময়েই ব্রাহ্মসমাজের সংস্কার সাধনে ব্রতী হয়েছিলেন।
একাজে তাঁকে ব্রাহ্ম নেতাদের প্রবল বিরোধিতার সম্মুখীন হতে হয়েছিল। প্রশান্তচন্দ্রের ইচ্ছা ছিল রবীন্দ্রনাথের প্রকৃত স্বীকৃতি আসুক ব্রাহ্মসমাজ থেকে।
কিন্তু প্রবীণ ব্রাহ্মদের অনেকেই রবীন্দ্রনাথকে পছন্দ করতেন না। কবি প্রেমের গান লিখেছেন, গোরা -এর মত বিতর্কিত উপন্যাস লিখেছেন -এই অভিযোগে সমাজের কার্যনির্বাহক সমিতিতে নেওয়া হচ্ছিল না রবীন্দ্রনাথকে।
সমিতির সভায় প্রশান্তচন্দ্র ও সুকুমার রায়ের প্রস্তাব ছিল রবীন্দ্রনাথকে সাম্মানিক সদস্যপদ দেওয়া হোক। রবীন্দ্রনাথকে নির্বাচনের প্রশ্নে বৈঠকের পর বৈঠক হল, কিন্তু বারবারই প্রস্তাব নাকচ হয়ে গেল। শেষ পর্যন্ত রবীন্দ্রনাথের সমর্থনে প্রশান্তচন্দ্র ‘কেন রবীন্দ্রনাথকে চাই’, এই নামে একটি পুস্তিকা লিখে প্রকাশ করলেন।
শেষ পর্যন্ত ভাবাবেগের দ্বারা চালিত প্রাচীনপন্থী রবীন্দ্রবিরোধীদের সকল চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে গেল! ১৯২১ খ্রিস্টাব্দের বার্ষিক অধিবেশনে ব্যালট-ভোটে রবীন্দ্রনাথ সম্মানিত সদস্য নির্বাচিত হন।
আরও পড়ুন: উইলিয়াম হার্ভে জীবনী
রবীন্দ্রনাথ প্রশান্তচন্দ্রকে অত্যন্ত স্নেহ করতেন। তার বিবাহ অনুষ্ঠানেও তিনি উপস্থিত ছিলেন। শান্তিনিকেতনের ব্রহ্মচর্যাশ্রমের ছাত্র না হওয়া সত্ত্বেও রবীন্দ্রনাথের আগ্রহে প্রশান্তচন্দ্র আশ্রমিক সঙ্ঘের সদস্য হয়েছিলেন। সঞ্চয়িতার আগে চয়নিকা নামে রবীন্দ্রনাথের নির্বাচিত কবিতার একটি সংকলন প্রচলিত ছিল।
সেই সংকলনের কবিতা বাছাই করেছিলেন প্রশান্তচন্দ্র। কবির বিদেশ ভ্রমণের সময়েও তিনি সস্ত্রীক সঙ্গী হয়েছিলেন।
প্রশান্তচন্দ্রের স্ত্রী রানী মহলানবীশও ছিলেন রবীন্দ্রনাথের স্নেহধন্যা। শিক্ষাবিদ ও বিজ্ঞানী হিসেবে প্রশান্তচন্দ্রের অবদান সুবিদিত।
আরও পড়ুন: আন্দ্রে ভেসালিয়াস জীবনী
রাশিবিজ্ঞানের প্রচার ও প্রসারে তিনি ছিলেন অক্লান্তকর্মী। তারই চেষ্টায় এদেশে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরে রাশিবিজ্ঞানের পঠন – পাঠনের সূত্রপাত হয়। রাশিবিজ্ঞানের ওপর প্রশান্তচন্দ্রের আবিষ্কার মহলানবীশ ডিসট্যান্স নামে পরিচিত। নৃতত্ত্ব এবং আবহাওয়াতত্ত্বেও তার দান স্মরণীয়।
১৯২২ খ্রিঃ বঙ্গীয় সরকারের আহ্বানে বন্যার উৎপত্তি সম্পর্কে তার গবেষণা ছিল অত্যন্ত ফলপ্রসূ। বিভিন্ন সময়ে প্রশান্তচন্দ্র ভারত সরকারের উপদেষ্টার কাজ করেছেন।
প্রশান্তচন্দ্র মহলানবীশ এর মৃত্যু: Prasanta Chandra Mahalanobis’s Death
এদেশে দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার কাঠামো তিনিই রচনা করেন। প্রশান্তচন্দ্রের জীবনের শ্রেষ্ঠ কীর্তি ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিসটিকাল ইনসটিটিউট প্রতিষ্ঠা। তিনি রয়্যাল সোসাইটির ফেলো নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৭১ খ্রিঃ ২৮ শে জুন প্রশান্তচন্দ্রের মৃত্যু হয়।