প্রসব পরবর্তী ব্যায়াম- যোগা (Yoga) হল প্রাচীন ভারতে উদ্ভূত এক বিশেষ ধরনের শারীরিক ও মানসিক ব্যায়াম এবং আধ্যাত্মিক অনুশীলন প্রথা। শরীর, মন সুস্থ ও সবল রাখতে এবং রোগ মুক্তিতে যোগাসনের ভূমিকা আজ সুপ্রতিষ্ঠিত। এই প্রথা সারা বিশ্বে আজও প্রচলিত আছে। তাই আজ আমরা আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি প্রসবপরবর্তী ব্যায়াম। প্রসবপরবর্তী ব্যায়াম নিয়ে নিচে আলোচনা করা হল।
প্রসব পরবর্তী ব্যায়াম
মহিলা ভেবে থাকেন বাচ্চা প্রসবের পর ব্যায়াম করা যায় না । এটা ঠিক নয় । গর্ভাবস্থায় যেমন ব্যায়াম করা দরকার তেমনি প্রসবের পরেও প্রত্যেক মহিলার ব্যায়াম করা প্রয়োজন, যদি প্রসবের পর প্রসূতি মায়ের কোনো শারীরিক অসুবিধা না থাকে । শারীরিক অসুবিধা থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ব্যায়াম করবেন ।
বি.দ্র. : প্রসবপরবর্তী রক্তস্রাব সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর ব্যায়াম করুন ।
1. সকালবেলা নাশতার ঘণ্টাখানেক পরে ব্যায়াম করতে হবে ।
2. প্রতিটি ব্যায়াম খুব ধীরে-সুস্থে করুন; তাড়াহুড়ো করবেন না ।
3. প্রতিদিন ১০ মিনিটের বেশি ব্যায়াম করবেন না ।
4. প্রসবের পর ব্যায়াম করলে পেটের মাংসপেশি মজবুত রেখে জরায়ুকে সঠিক স্থানে ধরে রাখে এবং জরায়ু ও ডিম্বাশয়ের রক্ত চলাচল বৃদ্ধি করিয়ে তাদের সুস্থ ও সবল রাখে ।
5. ব্যায়াম করার পর সবশেষে অবশ্যই ১০ মিনিট শবাসনে বিশ্রাম নিন এবং কল্পনা করুন আপনার ফিগার খুব সুন্দর হচ্ছে, স্বাস্থ্য ভালো হচ্ছে ।
এবার ব্যায়ামের পদ্ধতিগুলো জেনে নিন ।
আরো পড়ুন: গর্ভবতী মহিলাদের জন্যে কিছু ব্যায়াম
১ নম্বর ব্যায়াম
প্রথমে চিৎ হয়ে মাটিতে শুয়ে পড়ুন । হাত দুটো শরীরের দুপাশে রাখুন । হাতের তালু যেন মাটিতে লেগে থাকে (১ নং ছবির মতো) ।
এবার নাক দিয়ে দম ১ নম্বর ব্যায়াম নিতে নিতে হাত ও পায়ের ওপর ভর দিয়ে কোমর আস্তে আস্তে (২ নং ছবির মতো)
ওপরে তুলুন । এরপর দম ছাড়তে ছাড়তে আগের অবস্থায় (১ নং ছবির মতো) ফিরে আসুন । এভাবে দুই বার করতে পারেন ।
২ নম্বর ব্যায়াম
প্রথমে মাটিতে চিৎ হয়ে শুয়ে হাত দুটো শরীরের দুপাশে রাখুন । হাতের তালু মাটিতে লেগে থাকবে (১ নং ছবির মতো) ।
এবার নাক দিয়ে দম নিতে নিতে পা দুটো হাঁটু থেকে ভাঁজ করে পায়ের গোড়ালি দুটোকে যতদূর সম্ভব (২ নং ছবির মতো)
নিতম্বের কাছে নিয়ে আসুন এবং দম ছাড়তে ছাড়তে আগের অবস্থায় (১ নং ছবির মতো) পা দুটো সোজা করে রাখুন । এভাবে দুই বার করুন ।
আরো পড়ুন: হাঁটুর ব্যথায় করণীয় ব্যায়াম
৩ নম্বর ব্যায়াম
চিৎ হয়ে মাটিতে শুয়ে পড়ুন । হাত দুটো শরীরের দুপাশে রাখুন । হাতের তালু মাটিতে লেগে থাকবে (১ নং ছবির মতো) ।
এবার নাক দিয়ে দম নিন । এরপর দম ছাড়তে ছাড়তে কনুই দুটোর ওপর ভর দিয়ে শরীরের ওপরের অংশ কোমর থেকে মাথা পর্যন্ত ওপরে তুলুন (২ নং ছবির মতো) ।
এবার দম নিতে নিতে শুয়ে পড়ুন আগের মতো । এভাবে দুই বার করুন ।
৪ নম্বর ব্যায়াম
চিৎ হয়ে মাটিতে শুয়ে পড়ুন । হাত দুটো শরীরের দুপাশে রাখুন । হাতের তালু মাটিতে লেগে থাকবে । এবার নাক দিয়ে দম নিতে নিতে পা দুটো হাঁটু থেকে ভাঁজ করে জোড় অবস্থায় (২ নং ছবির মতো)
বুকের কাছে নিয়ে আসুন এবং দম ছাড়তে ছাড়তে পা দুটো সোজা করে নিন । এভাবে দুই বার করতে পারেন ।
৫ নম্বর ব্যায়াম
প্রথমে হাত দুটো ভাঁজ করে তার ওপর মাথা রেখে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ুন (১ নং ছবির মতো) ।
এবার নাক দিয়ে দম নিতে নিতে পা দুটো হাঁটু থেকে ভাঁজ করে (২ নং ছবির মতো)
ওপরের দিকে উঠিয়ে রাখুন । এবার দম ছাড়তে ছাড়তে পা দুটো সোজা করুন । (১ নং ছবির অবস্থায় নিয়ে আসুন) এভাবে দুবার করুন ।
৬ নম্বর ব্যায়াম
শরীরের দুপাশে হাত রেখে মাটিতে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ুন । হাতের তালু মাটিতে লেগে থাকবে । এবার প্রথমে পা দুটো হাঁটু থেকে ভাঁজ করে পেটের ওপর নিয়ে আসুন (১ নং ছবির মতো) । এর পর (২ নং ছবি -২ ছবির মতো) একটার পর একটা পা বাই-সাইকেল চালানোর মতো ওঠান ও নামান । এভাবে দুই বার করতে পারেন ।
এভাবে তিন মাস এ ব্যায়ামগুলো করার পর আস্তে আস্তে কোয়ান্টাম যোগের সব ব্যায়ামই করতে পারবেন । অবশ্য শারীরিক কোনো বিশেষ অসুখ থাকলে ব্যায়ামে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে ।
বি.দ্র. : ব্যায়াম করার পূর্বে অবশ্যই ব্যায়ামের নিয়মাবলি পড়ে নেবেন । যেসব মহিলা অপারেশনের মাধ্যমে বাচ্চা প্রসব করেছেন তারা শারীরিক বিশেষ কোনো অসুখ কিংবা অসুবিধা না থাকলে প্রথম দিকে হাঁটা-চলা এবং তিন মাস পর সব ব্যায়ামই করতে পারবেন । ব্যায়াম করার পূর্বে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন ।