কবি চন্ডীদাস জীবনী – Poet Chandidas Biography In Bengali

কবি চন্ডীদাস জীবনী – Poet Chandidas Biography In Bengali
কবি চন্ডীদাস জীবনী – Poet Chandidas Biography In Bengali

কবি চন্ডীদাস জীবনী: আজ আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি মহান ব্যক্তিদের জীবনী সমগ্র। মহান ব্যক্তি আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা। তাঁদের জীবনের ক্ষুদ্রতম অংশগুলি আমাদের জন্য শিক্ষামূলক হতে পারে। বর্তমানে আমরা এই মহান ব্যক্তিদের ভুলতে বসেছি। যাঁরা যুগ যুগ ধরে তাদের কর্ম ও খ্যাতির মধ্য দিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন এবং জ্ঞান, বিজ্ঞান, শিল্প ও সাহিত্যের জগতে এক অনন্য অবদান রেখেছেন এবং তাঁদের শ্রেষ্ঠ গুণাবলী, চরিত্র দ্বারা দেশ ও জাতির গৌরব বৃদ্ধি করেছেন। সেইসব মহান ব্যক্তিদের মধ্যে অন্যতম সাধক কবি চন্ডীদাস -এর সমগ্র জীবনী সম্পর্কে এখানে জানব।

কবি চন্ডীদাস জীবনী – Poet Chandidas Biography In Bengali

নামচন্ডীদাস
জন্ম১৩৭০, শতখালী, ধোপাখালী পাড়া, শালিখা উপজেলা (মাগুরা)
সঙ্গীরজকিনী রামী
বিষয়কবিতা/পদাবলী
ধরনবৈষ্ণব পদাবলী
ভাষাবাংলা
মৃত্যু১৪৩০

প্রাচীন বঙ্গের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি চন্ডীদাস। তাঁর রচিত পদ এক সময়ে বাঙ্গালীর মুখে মুখে ফিরত। আধুনিককালেও সহজিয়া সাধকদের ঐশীভাবনা ও প্রেরণার আধার চন্ডীদাসের পদ।

প্রাকআধুনিককালের সর্বাধিক জনপ্রিয় কবি চন্ডীদাসের নাম ও রচনা ছাড়া তাঁর সম্বন্ধে জানবার সুযোগ খুবই কম। চৈতন্যদেবের জীবনীকারদের মধ্যে অনেকের লেখায়ই পাওয়া যায়।

চৈতন্যদেব নিজেও চন্ডীদাসের পদের অনুরাগী ছিলেন। চৈতন্যদেবের সমকালীন রূপ গোস্বামীর রচনাতে চন্ডীদাসের রচনার উল্লেখ রয়েছে। এই দুটি সূত্রই চন্ডীদাস সম্বন্ধে জানবার প্রাথমিক মাধ্যম।

এ থেকে জানা যায়; কবি চন্ডীদাস চৈতন্যদেবের পূর্ববর্তীকালে বর্তমান ছিলেন। খুব বেশি দিনের কথা নয়। বর্তমান শতাব্দীতেই চন্ডীদাস নামাঙ্কিত বেশ কিছু পদ ও একটি পুঁথি আবিষ্কৃত হয়েছে।

পুঁথিটির নাম শ্রীকৃষ্ণকীর্তন। বিশেষজ্ঞদের অনুমান পুঁথিটির মূল নাম ছিল শ্রীকৃষ্ণসন্দর্ভ। বসন্তরঞ্জন রায় এই পুঁথি আবিষ্কার করেন এবং তাঁরই সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়। পুঁথিটি পালাগানের আকারে লিখিত। ভণিতায় নাম পাওয়া যায় বড়ুচন্ডীদাস এবং অনন্ত বড়ুচন্ডীদাস।

এই পুঁথি আবিষ্কারের পর থেকেই চন্ডীদাস বিষয়ে নানারকম সমস্যা দেখা দিয়েছে। সমস্যা হল পুঁথির প্রায় কোন পদের সঙ্গেই প্রচলিত চণ্ডীদাসের পদের মিল নেই। তাছাড়া পুঁথির ভাযাও অত্যন্ত প্রাচীন এবং এর বিষয়ে গৌড়ীয় বৈষ্ণবধর্মের কোন প্রভাব দেখা যায় না।

দীর্ঘকাল পন্ডিতদের মধ্যে বিচার বিশ্লেষণ চলে। পরে সিদ্ধান্ত হয় উক্ত পুঁথির রচয়িতা বড়ুচন্ডীদাস চৈতন্য পূর্ববর্তীযুগে বর্তমান ছিলেন। চৈতন্যদেব যে চন্ডীদাসের পদ আস্বাদন করতেন বলে জানা যায় ইনি তিনি নন। এই ভাবেই একচন্ডীদাসের অস্তিত্ব স্বীকৃত হয়।

চৈতন্যদেব যাঁর পদ আস্বাদন করতেন তিনি হলেন দ্বিতীয় চন্ডীদাস। অনুমান করা হয় তাঁর আর্বিভাব হয়েছিল প্রাকচৈতন্যকালে অথবা প্রায় সমকালীন সময়ে। এই দ্বিতীয় চন্ডীদাসের পদই দীর্ঘকাল বঙ্গভূমে প্রচলিত।

পুথির ভণিতায় রচয়িতার নামের সঙ্গে কোন উপাধিযুক্ত হয়নি।

অবশ্য অনেকের অনুমান এঁর রচনাগুলিতেই কেবল দ্বিজচন্ডীদাস ভণিতা যুক্ত হয়েছে। প্রথম চন্ডীদাস বড়ুচন্ডীদাসের শ্রীকৃষ্ণকীর্তন আবিষ্কৃত হবার কিছুকাল পূর্বে নীলরতন মুখোপাধ্যায়ের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় চন্ডীদাস পদাবলী।

এই সংকলনে অনেক নতুন পদের সন্ধান মেলে। পদের অনেকগুলিরই ভণিতায় পাওয়া যায় দীন চন্ডীদাস নাম। কিছুকাল পরে এই ভণিতাযুক্ত আরও অনেক নতুন পদ প্রকাশিত হয় মণীন্দ্রমোহন বসু সম্পাদিত দীন চন্ডীদাসের পদাবলী গ্রন্থে। বিচারে নিরূপিত হয়েছে এই চন্ডীদাসনামাঙ্কিত পদগুলি ভাবে ও ভাষায় অত্যন্ত দীন।

পূর্ববর্তী দুই চন্ডীদাসের পদাবলীর তুলনায় নিতান্তই খেলো ও অকিঞ্চিৎকর। অনুমান করা হয়, ইনি চৈতন্যপরবর্তীযুগে আবির্ভূত হন এবং তৃতীয় চন্ডীদাসরূপেই তাঁকে বিবেচনা করা হতে থাকে। চন্ডীদাস নামাঙ্কিত কিছু পদ আছে যাতে সহজপন্থী সাধনার পরিচয় স্পষ্ট। এগুলির ভণিতায় পাওয়া যায় তরুণীরমণ প্রভৃতি নাম।

অনাথ সহজিয়া, রজকিনী, রামী প্রভৃতি শব্দও এই পদগুলিতেই পাওয়া যায়। পন্ডিতজনের অনুমান ইনিই সহজিয়া সাধন মার্গের সাধক চন্ডীদাস এবং চতুর্থ চন্ডীদাস রূপেই এঁকে বিবেচনা করা হয়ে থাকে।

প্রাকআধুনিক যুগের বাঙ্গালীর সর্বাধিক প্রিয় কবি চন্ডীদাস সম্পর্কে আলোচনায় এই চারজন চন্ডীদাসকেই স্বতঃসিদ্ধভাবে মেনে নিতে হয়।

চন্ডীদাস সম্বন্ধে অনেক কাহিনী বঙ্গদেশে প্রচলিত। এই সব কাহিনী পাওয়া যায় ‘চন্ডীদাসের জীবনী’ বলে একখানি প্রাচীন গ্রন্থে। তবে এই গ্রন্থটির প্রামাণিকতা স্বীকৃত হয়নি। গল্পগুলি কল্পিত কাহিনী বলেই বিবেচিত হয়েছে। তবে এটা ঠিক, অষ্টাদশ শতাব্দীর কোন কোন বৈষ্ণব কড়চায় চন্ডীদাস ও রজকিনী কাহিনীর আভাস পাওয়া যায়।

এতে জানা যায় কোন এক চন্ডীদাস সহজিয়াপন্থী ছিলেন। তাঁরই সাধন সঙ্গিনী ছিলেন এক রজকিনী। এই রজকিনীর নাম কিন্তু সর্বত্র এক নয়। কোথাও রামী, কোথাও তারা, কোথাও রামতারা।

চন্ডীদাসের জন্মভূমি বলে বহুকাল থেকে দুটি স্থানের নাম বিখ্যাত হয়ে রয়েছে। তাদের একটি বীরভূম জেলার নানুর গ্রাম। অন্যটি বাঁকুড়া জেলার ছাতনা গ্রাম।

কথিত যে, চন্ডীদাস দেবী বাশুলীর উপাসক ছিলেন। উক্ত দুই গ্রামেই বাশুলীদেবীর মন্দির বর্তমান।

এই দুই গ্রাম নিয়েও পন্ডিতদের বাদানুবাদের অন্ত নেই। কোনটি চন্ডীদাসের প্রকৃত জন্মস্থান তা সঠিকভাবে নিরূপণ সম্ভব না হলেও নানুরে চন্ডীদাসের স্মরণে প্রতি বৎসর অনুষ্ঠিত মেলা ও সহজিযাপন্থী বাউল সম্প্রদায়ের সমাবেশ দেশ বিখ্যাত।

চন্ডীদাসের একটি বিখ্যাত পদ উদ্ধৃত হল:

সুখের লাগিয়া এঘর বাঁধিনু
অনলে পুড়িয়া গেল।
অমিয় সাগরে সিনান করিতে
সকলি গরল ভেল৷৷
সখি! কি মোর করমে লেখি!
শীতল বলিয়া ও চাঁদ সেবিনু।
ভানুর কিরণ দেখি।।
উচল বলিয়া অচলে চড়িতে
পড়িনু অগাধ জলে।
লছমী চাহিতে দারিদ্র বেঢ়ল
মাণিক হারানু হেলে।।
নগর বসালাম সাগর বাঁধিলাম
মানিক পাবার আশে।
সাগব শুকাল মানিক লুকাল
অভাগী-করম-দোষে।।
পিয়াস লাগিয়া জলদ সেবিনু
বজব পড়িয়া গেল।
কহে চণ্ডীদাস শ্যামের পীরিতি
মরণ-অধিক শেকল।।

আরও পড়ুন-

Join Our Telegram Channel

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here