ফিলিপ এডোয়ার্ড অ্যান্টন ভন লেনার্ড এর জীবনী – Philip Edward Anton von Lennard Biography in Bengali

ফিলিপ এডোয়ার্ড অ্যান্টন ভন লেনার্ড এর জীবনী – Philip Edward Anton von Lennard Biography in Bengali
ফিলিপ এডোয়ার্ড অ্যান্টন ভন লেনার্ড এর জীবনী – Philip Edward Anton von Lennard Biography in Bengali

আজ আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি মহান ফিলিপ এডোয়ার্ড অ্যান্টন ভন লেনার্ড জীবনী সমগ্র। মহান ব্যক্তি আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা। তাঁদের জীবনের ক্ষুদ্রতম অংশগুলি আমাদের জন্য শিক্ষামূলক হতে পারে। বর্তমানে আমরা এই মহান ব্যক্তিদের ভুলতে বসেছি। যাঁরা যুগ যুগ ধরে তাদের কর্ম ও খ্যাতির মধ্য দিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন এবং জ্ঞান, বিজ্ঞান, শিল্প ও সাহিত্যের জগতে এক অনন্য অবদান রেখেছেন এবং তাঁদের শ্রেষ্ঠ গুণাবলী, চরিত্র দ্বারা দেশ ও জাতির গৌরব বৃদ্ধি করেছেন। সেইসব মহান ব্যক্তিদের মধ্যে অন্যতম বিজ্ঞানী ফিলিপ এডোয়ার্ড অ্যান্টন ভন লেনার্ড (Philip Edward Anton von Lennard) -এর সমগ্র জীবনী সম্পর্কে এখানে জানব।

Table of Contents

ফিলিপ এডোয়ার্ড অ্যান্টন ভন লেনার্ড এর জীবনী – Philip Edward Anton von Lennard Biography in Bengali

নামফিলিপ এডোয়ার্ড অ্যান্টন ভন লেনার্ড
জন্ম১৮৬২ খ্রিঃ ৭ জুন
জন্মস্থানহাঙ্গেরির প্রেসবার্গ রাজ্যের মফস্সল শহর পজসোনিতে
পেশাপদার্থবিদ
মৃত্যু১৯৪৭ খ্রিঃ

ফিলিপ এডোয়ার্ড অ্যান্টন ভন লেনার্ড কে ছিলেন? Who is Philip Edward Anton von Lennard?

বিশ শতকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞান মনীষী লেনার্ড। পদার্থবিদ্যার ইতিহাসে তাঁর নামটি স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ আছে।

ফিলিপ এডোয়ার্ড অ্যান্টন ভন লেনার্ড এর জন্ম: Philip Edward Anton von Lennard’s Birthday

হাঙ্গেরির প্রেসবার্গ রাজ্যের মফস্সল শহর পজসোনিতে ১৮৬২ খ্রিঃ ৭ জুন এক সাধারণ পরিবারে লেনার্ডের জন্ম।

ফিলিপ এডোয়ার্ড অ্যান্টন ভন লেনার্ড এর শিক্ষাজীবন: Philip Edward Anton von Lennard’s Educational Life

অসাধারণ মেধা আর কৌতূহলের অধিকারী লেনার্ডের প্রাথমিক শিক্ষা লাভ হয়েছিল প্রকৃতির পাঠশালায়। নিজের চারপাশে যা দেখতেন, খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পর্যবেক্ষণ করতেন।

প্রকৃতি রাজ্যের বৈচিত্র্যের পরিচয় লাভ করতে গিয়ে বৃহত্তর ও মহত্তর কিছু জানার আগ্রহটি তাঁর মনে অঙ্কুরিত হয়ে ওঠে। এভাবেই বড় হয়ে উঠতে থাকেন তিনি।

একসময় পজসোনির স্কুলের গন্ডি সসম্মানে উত্তীর্ণ হন তিনি। উচ্চতর শিক্ষালাভের উদ্দেশ্যে উপস্থিত হন রাজধানী শহর বুদাপেস্টে। এখানে বুদাপেস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিদ্যা বিভাগে ভর্তি হন এবং যথাসময়ে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।

ফিলিপ এডোয়ার্ড অ্যান্টন ভন লেনার্ড এর কর্ম জীবন: Philip Edward Anton von Lennard’s Work Life

এবারে চলতে থাকে কর্মজীবনে প্রবেশের প্রস্তুতি। ঘুরতে ঘুরতে তরুণ লেনার্ড উপস্থিত হলেন ভিয়েনা শহরে। এখান থেকে আবার বুদাপেস্টে। এখানে সান্নিধ্য লাভ করলেন বিশ্ববিশ্রুত বিজ্ঞানী বুনসেনের।

সেই সময়ে এই সব্যসাচী বিজ্ঞানী পদার্থবিদ্যা ও রসায়ন নিয়ে গবেষণায় মগ্ন। কিছুদিন তাঁর সঙ্গে সহকারীর কাজ করলেন লেনার্ড। তাঁর মনেও অঙ্কুরিত হল গবেষণার বীজ।

বুনসেনের পরামর্শে লেনার্ড উপস্থিত হলেন অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায়।

পদার্থবিদ্যার সাম্প্রতিক গতিপ্রকৃতির সন্ধান নিলেন স্বনামখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী হেলমজের কাছে।

ভিয়েনা থেকে লেনার্ড এলেন জার্মানিতে। এখানেও স্থায়ী হতে পারলেন না। বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয়ে কলিনবার্গের তত্ত্বাবধানে কিছুদিন পদার্থবিদ্যার গবেষণা করে চলে গেলেন হাইডেনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে। এখান থেকেই ১৮৮৬ খ্রিঃ ডঃ কুইনিকের তত্ত্বাবধানে গবেষণা করে লেনার্ড পি-এইচ ডি হলেন। তখন তাঁর বয়স মাত্র ২৪ বছর।

এরপর নতুনতর গবেষণার কাজে হাইডেনবার্গেই কাটিয়ে দিলেন টানা ছয়টি বছর। এতদিনে তাঁর মনে জমে উঠেছে ক্রকসের মোক্ষণ নলের ক্যাথোড রশ্মি সম্পর্কে অপার কৌতূহল।

একপ্রকার বায়ুশূন্য নলে বিদ্যুৎপ্রবাহ সঞ্চালিত করার পর দেখা যায় একধরনের রশ্মি তীব্রভাবে নলের ক্যাথোড বা ঋণাত্মক বিদ্যুৎদ্বার থেকে বেরিয়ে আসে, তাই হল ক্যাথোড রশ্মি।

আরও পড়ুন: আর্কিমিডিস জীবনী

এই রহস্যময় রশ্মির প্রকৃতি নিয়ে বিজ্ঞানীরা নানাভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন। এটি কি সত্যই কোন অসাধারণ রশ্মি না আলোকেরই ভিন্নরূপ এ নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে বেড়ে উঠতে থাকে বিতর্ক।

এই প্রশ্নও অনেকে তুলেছেন, এই রশ্মি সম্পূর্ণরূপেই কি নল-আশ্রয়ী, না বাইরের আবহাওয়াতেও তা বর্তমান?

বাইরের জগতে বিজ্ঞানীদের মধ্যে যখন ক্যাথোড রশ্মি নিয়ে এমনি আলোড়ন তুলেছে, ঠিক সেই সময়েই হাইডেনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাগারে লেনার্ড স্বাভাবিকভাবেই আগ্রহান্বিত হয়ে ওঠেন ক্যাথোড রশ্মি সম্পর্কে।

এ সময়ের অবস্থা জানিয়ে একসময়ে লেনার্ড নিজেই বলেছেন যে আটের দশকে, ছাত্রজীবনে তিনি নতুন কিছু একটা করার তীব্র তাগিদ অনুভব করতেন। কিন্তু ক্রুশের কাজ নিয়ে তাঁর কোন আগ্রহই সেই সময়ে ছিল না। কেন না, তিনি লক্ষ্য করেছেন, যেসকল গবেষক-বিজ্ঞানী ক্রুকশের নল নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন, হতাশা ছাড়া তাঁদের গবেষণার নিট ফল কিছু লাভ হয়নি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হয়তো সেই রহস্যময় অন্ধকারের আকর্ষণেই তিনি ক্রুকশের মোক্ষণ নল নিয়ে ভাবতে শুরু করেছিলেন।

ফিলিপ এডোয়ার্ড অ্যান্টন ভন লেনার্ড এর আবিষ্কার: Discovery by Philip Edward Anton von Lennard

হাইডেনবার্গে ডঃ কুইনিনের সহকারী হিসেবে গবেষণা করছিলেন সেসময়ে লেনার্ড। গবেষণায় থাকাকালীনই হঠাৎই বলতে গেলে আলোর সন্ধান পেয়ে গেলেন তিনি।

ক্রুকশের প্রায় বায়ুহীন পরিবেশকে আরও হালকা করবার উদ্দেশ্যে লেনার্ড তৈরি করলেন পারদ বায়ুকল। ক্যাথোড রশ্মি সংক্রান্ত গবেষণায় এটিই তাঁর প্রথম পদক্ষেপ।

যেই সময়ে অন্যান্য বিজ্ঞানীরা নিজেদের ভাবনাচিন্তাকে গন্ডিবদ্ধ করে রেখেছিলেন ক্যাথোড রশ্মির নলের বাইরে অবস্থানের সম্ভাবনার চুলচেরা বিচার নিয়ে, সেইসময় লেনার্ড ভাবলেন অন্য কথা। তিনি চিন্তা করতে লাগলেন রহস্যময় রশ্মিটিকে মোক্ষণ নলের বাইরে অর্থাৎ খোলা বাতাসে কোনভাবে আনা সম্ভব কিনা, সেই পন্থা নিয়ে।

এই উদ্দেশ্যে পারদ বায়ুকলের সাহায্যে তিনি ক্রুশের নলকে প্রায় বায়ুহীন করে ফেললেন। তারপর নলে পাঠালেন বিদ্যুৎপ্রবাহ। উপস্থিত করলেন ক্যাথোড রশ্মির পরিক্রমণ পথে ধাতব বাধাকেও। কিন্তু রশ্মি বাইরে এল না। চিন্তিত হয়ে পড়লেন লেনার্ড। আবার নতুন উপায় উদ্ভাবন করলেন। সিলিকার স্ফটিক নিয়ে কাজ করার কথা মনে হল তাঁর। কারণ সিলিকার স্ফটিক বা কোয়ার্জের ভেতর দিয়ে পরিচিত সব বিকিরণই সহজভাবে যাতায়াত করতে পারে।

নতুন বুদ্ধি মাথায় খেলতেই নতুনভাবে প্রস্তুতি নিলেন লেনার্ড। মোক্ষণ নল গড়ে তার ঋণ বিদ্যুৎদ্বারের ঠিক ওপরে একখন্ড কোয়ার্জ পাত বসিয়ে দিলেন। পাতটি ছিল ২.৪ মি.মি পুরু। অধীর আগ্রহ নিয়ে এবারে তিনি এই নতুন নলে বিদ্যুৎপ্রবাহ পাঠালেন।

না, এই উপায়ও কোন ফল প্রসব করল না। নল একই রকম দীপ্তিহীন রইল। নৈরাশ্যে ভেঙ্গে পড়লেন না লেনার্ড। আবার বসলেন পরীক্ষা-নিরীক্ষা নিয়ে।

এভাবে কাটল ১৮৯২ খ্রিঃ পর্যন্ত টানা ছয় বছর। সেই সময় অভাবিত একটা সুযোগ পেয়ে গেলেন অপ্রত্যাশিত ভাবে। বিশ্ববিখ্যাত জার্মান পদার্থবিদ হার্ৎজ তখন একজন যোগ্য সহযোগীর সন্ধান করে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়েছিলেন। বিজ্ঞাপনটি চোখে পড়তেই লেনার্ড যথারীতি আবেদনপত্র পাঠিয়ে দিলেন।

হার্ৎজ নিজেও ছিলেন ক্যাথোড রশ্মি সম্পর্কে আগ্রহী। লেনার্ডের পরীক্ষার গতি-প্রকৃতিও তাঁর অজানা ছিল না। কাজেই তাঁর সহযোগীর কাজে লেনার্ডকেই সাগ্রহে বহাল করলেন হার্জ।

এবারে ক্যাথোড রশ্মির রহস্য উদ্ঘাটনে দুজনেই কোমর বেঁধে গবেষণায় নামলেন।

হার্ৎজ তাঁর গবেষণায় লক্ষ্য করলেন, খুব পাতলা ধাতব পাতও ক্যাথোড রশ্মিকে যাতায়াতের পথ করে দেয়। ব্যাপারটা নজরে আসার পরেই তিনি সোনা, রূপা ও অ্যালুমিনিয়ম দিয়ে তিনটি খুব পাতলা সছিদ্র পাত তৈরি করলেন। এই পাতগুলি পৃথকভাবে ক্রুকশের নলে ব্যবহার করার ফলে দেখা গেল, ক্যাথোড রশ্মি অতি সহজেই ওই সূক্ষ্ম ছিদ্র অতিক্রম করে যাচ্ছে। কেবল তাই নয় ওই ধাতুর নিশ্ছিদ্র অংশটিও তার গতিপথে কোন বাধার সৃষ্টি করে না।

এই পরীক্ষা নিয়েই হার্ৎজ ও লেনার্ড কাজে ডুবে রইলেন বন বিশ্ববিদ্যালয়ে। একদিন, তখন সবে সন্ধ্যা উৎরেছে, হার্ৎজ সছিদ্র অ্যালুমিনিয়াম পাত মোক্ষণ নলের বিদ্যুৎদ্বার নিয়ে ক্যাথোড রশ্মির প্রতিক্রিয়া পরীক্ষা করছিলেন। সামনে দাঁড়িয়ে লেনার্ড তা দেখছিলেন। হঠাৎ তাঁর মনে হল, সছিদ্র পাতলা ধাতুর পাতের ওপরে কিছু ক্ষারীয় ফসফরাস চূর্ণ ছড়িয়ে দিয়ে দেখা যেতে পারে ক্যাথোড রশ্মি নল থেকে বাইরে আসে কিনা। সঙ্গে সঙ্গে তাই করলেন এবং সবিস্ময়ে প্রত্যক্ষ করলেন ঈন্সিত সাফল্য।

এই সাফল্যের বিষয়ে তিনি পরে লিখেছেন “Lo and behold, the grains (of phosphor) glowed brightly there as well! Thus not only had the cathode rays passed out the interior of the discharge tube to which they had been hitherto confined, in addition and nobody could have predicdted this-they could pass through air of normal density. It thus became clear that a vast new field of investigation had opened up in front of me, a field that not only embraced hitherto unseen-phenomena but also gave promise of a break through into the unknown, Cathode rays, which had hitherto stubbornly cluded explana tion, had yielded their secret and, more important, now for the first time tests of maximum purity could be carried out.”

ক্যাথোড রশ্মিকে নলের বাইরে আনার চিন্তা মাথায় নিয়ে একের পর এক পরীক্ষার পর এভাবেই বৈজ্ঞানিক সাফল্য পেয়েছিলেন লেনার্ড।

আরও পড়ুন: জনাস সল্ক এর জীবনী

এই কাজের সূত্রেই ইউরোপের বিজ্ঞানী মহলে ছড়িয়ে পড়ল লেনার্ডের নাম। তাঁর এই পরীক্ষার সাফল্যের ফল হয়েছিল সুদূরপ্রসারী। পরবর্তীকালে বেকেরেল ও কুরি দম্পতি তাঁদের তেজস্ক্রিয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার সাফল্য পেয়েছিলেন লেনার্ডের এই পরীক্ষার সাফল্যের পথ ধরেই।

ফিলিপ এডোয়ার্ড অ্যান্টন ভন লেনার্ড এর পদার্থবিদ্যা গবেষনা: Philip Eduard Anton von Lennard’s Physics Research

এই একটি মাত্র গবেষণার সাফল্যের সুবাদেই লেনার্ড ১৮৯৪ খ্রিঃ ব্রেসলু বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিদ্যা বিভাগে অধ্যাপকের চাকরি পেয়ে গেলেন। রেসলু বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরির দুবছরের মাথায়ই, ১৮৯৬ খ্রিঃ আহ্বান এল হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। ছাত্র ও গবেষক জীবনের একটা বড় অংশ এককালে তাঁর কেটেছিল সেই শিক্ষায়তনেই। লেনার্ড তাই সাড়া না দিয়ে পারলেন না।

অবিলম্বেই তিনি হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দিলেন তাত্ত্বিক পদার্থ বিদ্যার অধ্যাপকের পদে।

সেখানে কাজ করার পরেই তিনি যোগ দিলেন বিশ্ববিখ্যাত কিয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে। এবারে পদার্থবিদ্যার প্রধান অধ্যাপক পদ চাকরির সঙ্গে এখানে লেনার্ড পেলেন পদার্থবিদ্যায় গবেষণার উপযোগী পরিবেশও।

পদার্থ বিদ্যার গবেষণার জন্য বিশেষ করে ক্যাথোড রশ্মি সংক্রান্ত কাজের জন্য ১৯০৫ খ্রিঃ লেনার্ডকে দেওয়া হল নোবেল পুরস্কার। তখন তাঁর বয়স ৪৩ বছর। এই ভাবেই বিশ্বখ্যাতি লাভ করলেন তিনি।

কিয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে ইলেকট্রনের উৎস সম্পর্কিত তথ্য নিয়ে গভীর গবেষণা শুরু করলেন লেনার্ড। তিনি লক্ষ্য করলেন কোনও এক গ্যাসের আবহে ইলেকট্রনের স্রোত পাঠালে গ্যাসীয় কণা তড়িৎবাহী হয়ে ওঠে। কেবল তাই নয়, এই অবস্থায় ইলেকট্রনের নিজস্ব শক্তি অপরিবর্তিতই থেকে যায়। আর সেই শক্তি ওই গ্যাসের মধ্যে নিজস্ব শক্তি প্রভাবে গড়ে তোলে তড়িৎবাহী বা আয়নিত গ্যাসীয় অঞ্চল।

আরও পড়ুন: চিকিৎসক জীবক জীবনী

লেনার্ড এই সমীক্ষা প্রবন্ধাকারে প্রকাশ করলেন। সঙ্গে সঙ্গেই ইউরোপের আধুনিক পদার্থবিদদের মধ্যে আলোড়ন পড়ে গেল। পরের বছরেই এক চমকপ্রদ প্রবন্ধ প্রকাশ করে লেনার্ড তুলে ধরলেন যে কোনও পদার্থের পরমাণুর ভেতরকার বিচিত্র চিত্র।

সেই প্রবন্ধে তিনি জানালেন যে বহু পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্যদিয়ে পরমাণু সম্পর্কে যা অনুমান করতে পেরেছেন, তা হল, পদার্থের অতি ক্ষুদ্র কণার সমবায়ই হল পরমাণু। প্রতিটি কণাই শক্তিসমৃদ্ধ–এগুলোর নাম হতে পারে dynamide । এই ডিনামাইডগুলো প্রত্যেকেই নিজস্ব স্বাতন্ত্র্য অক্ষুণ্ণ রেখে এক নির্দিষ্ট দূরত্বে অবস্থান করে।

কিন্তু প্রত্যেকটি কণার মধ্যেই রয়েছে সমসংখ্যার দুই ভিন্ন তড়িৎ-ধর্মিতা। এমন তড়িৎ-শক্তি সমৃদ্ধ পরমাণুগুলোর বাইরের চেহারাটি একেবারেই সাদামাটা। লেনার্ড আরও লিখেছেন যে, পরমাণুর ভেতরের ১০০,০০০০০০০ ভাগের এক ভাগ বাদে বাকি সম্পূর্ণ অংশই মহাশূন্য।

পরমাণু সম্পর্কে লেনার্ডের এই তত্ত্ব নতুনভাবে আলোকিত করে তুলল আধুনিক বিজ্ঞান গবেষণার ক্ষেত্রকে। সেই আলোক ধরেই পরবর্তীকালে ইলেকট্রনের তত্ত্ব নিরূপণে লরেনৎর্জ সাফল্যের দুয়ারে পৌঁচেছেন।

এর পরেই লেনার্ডের গবেষণা এক নতুন পথে দিক পরিবর্তন করে। তাঁর ধ্যানজ্ঞান নিবিষ্ট হয় বর্ণালী সংক্রান্ত গবেষণায়। তিনি খুঁজে ফিরতে থাকেন বর্ণালীর নানা রেখা, তার প্রকৃতি ও উৎস।

এই গবেষণায় লেনার্ডের সামনে ছিল তাঁর পূর্বসূরী বিজ্ঞানী, রাইডবার্গ, কেসার ও রুঙ্গে-এর গবেষণার প্রদীপ।

আরও পড়ুন: নিকোলাস কোপার্নিকাস জীবনী

পদার্থবিদ্যার এই তিন দিকপাল বিজ্ঞানী বর্ণালী সংক্রান্ত গবেষণায় জানতে পেরেছিলেন যে সত্য তা হল, কোনও ধাতু নির্গত বর্ণালী রেখাগুলিকে দুই বা তারও বেশি শ্রেণীতে সাজানো যায় দ্বিতীয়তঃ, বর্ণালীরেখার সকল শ্রেণীর তরঙ্গ দৈর্ঘ্যগুলির মধ্যে থাকে এক আশ্চর্য গাণিতিক সম্পর্ক।

পূর্বসূরীদের এই প্রদীপ সামনে রেখে লেনার্ড খুঁজে পেয়ে গেলেন এক নতুন পথ। তিনি জানতে পারলেন, বর্ণালীরেখার এক এক শ্রেণীতে রয়েছে পরমাণুর এক এক পরিবর্তিত অবস্থা। আর এই পরিবর্তিত পারমাণবিক অবস্থাই নির্দিষ্ট শ্রেণীর পরিচয় নির্দেশ করে।

লেনার্ড এ-ও জানতে পারলেন, পরিবর্তিত পারমাণবিক অবস্থাগুলি হৃত উলেকট্রনের সংখ্যা ধরে আলাদা আলাদা করা যায়। আলোকের দূত লেনার্ড তাঁর কৃতিত্বের জন্য স্বীকৃতি পেয়েছেন তাঁর দেশে ও বিদেশের বহু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। নরওয়ের অসলো বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে দিয়েছে সম্মানজনক ডি. এস-সি উপাধি।

ফিলিপ এডোয়ার্ড অ্যান্টন ভন লেনার্ড এর পুরস্কার ও সম্মান: Philip Edward Anton von Lennard’s Awards And Honors

১৯০৫ খ্রিঃ পেয়েছেন পদার্থ বিদ্যার নোবেল। একই বছরে ফ্রাঙ্কলিন পদক। জার্মান রেইখের ঈগল পান ১৯৩৩ খ্রিঃ।

ফিলিপ এডোয়ার্ড অ্যান্টন ভন লেনার্ড এর মৃত্যু: Philip Edward Anton von Lennard’s Death

১৯৪৭ খ্রিঃ বিশ্বখ্যাত পদার্থ বিজ্ঞানী লেনার্ডের জীবনাবসান ঘটে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here