Pablo Neruda Biography: আজ আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি মহান ব্যক্তিদের জীবনী সমগ্র। মহান ব্যক্তি আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা। তাঁদের জীবনের ক্ষুদ্রতম অংশগুলি আমাদের জন্য শিক্ষামূলক হতে পারে। বর্তমানে আমরা এই মহান ব্যক্তিদের ভুলতে বসেছি। যাঁরা যুগ যুগ ধরে তাদের কর্ম ও খ্যাতির মধ্য দিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন এবং জ্ঞান, বিজ্ঞান, শিল্প ও সাহিত্যের জগতে এক অনন্য অবদান রেখেছেন এবং তাঁদের শ্রেষ্ঠ গুণাবলী, চরিত্র দ্বারা দেশ ও জাতির গৌরব বৃদ্ধি করেছেন। সেইসব মহান ব্যক্তিদের মধ্যে অন্যতম কবি পাবলাে নেরুদা (Pablo Neruda) -এর সমগ্র জীবনী সম্পর্কে এখানে জানব।
Pablo Neruda Biography In Bengali – পাবলাে নেরুদা জীবনী
নাম | পাবলো নেরুদা [(রিকার্ডো এলীসার নেফতালি রিয়েস বাসোয়ালতো) (Ricardo Eliécer Neftalí Reyes Basoalt)] |
জন্ম | 12th জুলাই 1904 |
পিতা | জোসে দেল কারমেন রেয়েস মোরালেস |
মাতা | রোসা নেফতালি বাসো আল্টো ওপাজো |
জন্মস্থান | পারাল, মৌলে অঞ্চল, চিলি |
জাতীয়তা | চিলিয় |
পেশা | কবি, কুটনীতিবিদ, সিনেটর |
মৃত্যু | 23rd সেপ্টেম্বর 1973 (বয়স 69) |
পাবলো নেরুদা কে ছিলেন? Who is Pablo Neruda?
পাবলাে নেরুদা চিলির জাতীয় কবি পাবলাে নেরুদা লাতিন আমেরিকার কবি রূপেই প্রসিদ্ধ। দেশপ্রেম ও মানবতার আবেদনধর্মী কবিতার জন্য তিনি আজ সারাবিশ্বে পরিচিত।
পাবলো নেরুদা এর জন্ম: Pablo Neruda’s Birthday
আসল নাম নেফতালি রিকার্দো রেয়েজ বাসােয়ল (Neftali Ricardo Reyes Basoalto), জন্ম চিলির পারেলের রিকাডাে গ্রামে ১৯০৪ খ্রিঃ ১২ ই জুলাই।
পাবলো নেরুদা এর পিতামাতা ও জন্মস্থান: Pablo Neruda’s Parents And Birth Place
তার শৈশব ও কৈশাের কাটে দক্ষিণ চিলির সীমান্তবর্তী শহর তেমুকাতেয়। নেরুদার পিতা যােশে কামেন রেয়েজ ছিলেন আরাউফো প্রদেশে নতুন নতুন রেললাইন বসাবার কাজে নিযুক্ত।
সেখানকার বেশির ভাগ মানুষেরই জীবিকা ছিল পশুপালন ও কৃষি।
এই সরলপ্রাণ কৃষিজীবী মানুষদের সংস্কারমুক্ত সমাজ ও ধর্মের আবহাওয়ায় এবং বন্যপ্রকৃতির খােলামেলা পরিবেশে নেরুদা বড় হয়ে ওঠেন।
নেরুদার মা রােজা বাসােয়াল্টো ছিলেন স্কুল শিক্ষিকা। মাত্র তিন বছর বয়সেই নেরুদা মাতৃহারা হন। মায়ের মৃত্যুর পরে বাবা পুনরায় বিয়ে করে সপরিবারে চলে এসেছিলেন তেমুকোতে। স্কুলের পড়ায় বিশেষ মনােযােগ ছিল না নেরুদার।
পাবলো নেরুদা এর ছোটবেলা: Pablo Neruda’s Childhood
তিনি পড়তেন বাইরের বই -জুলে ভার্ন, ভিক্টর হুগাে, ওয়াল্টার স্কট, আর ম্যাক্সিম গাের্কির লেখার মধ্যে সারাক্ষণ ডুবে থাকতেন। এভাবেই শৈশব থেকে তার সাহিত্যপ্রতিভা বিকাশের সুযােগ লাভ করেছিল।
মাত্র দশ বছর বয়সেই কবিতা লেখা শুরু করেছিলেন। এই বয়সেই কবিতার বিষয় নির্বাচনের প্রতি ছিল তার সতর্ক নজর। কবিতা লেখার সুবাদে পরিচিত মহলে কবিখ্যাতি লাভ করেন ১৩ বছর বয়সের মধ্যেই।
এই সময়েই তার সঙ্গে পরিচয় হয় চিলির তৎকালীন বিখ্যাত কবি গ্যাব্রিয়েলা মিস্রালের।
গ্যাব্রিয়েলা ১৯৪৫ খ্রিঃ সাহিত্যে নােবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন। নেরুদার জীবনে তার প্রেরণা গভীর রেখাপাত করেছিল। স্কুলের পড়া শেষ করে নেরুদাফরাসী ভাষা শেখার জন্য ভর্তি হন সানটিয়াগাের অপর একটি স্কুলে।
কিন্তু তিনি নিজের সাহিত্যচর্চা নিয়ে এতই মেতে উঠেছিলেন যে পড়াশােনায় বেশি দূর অগ্রসর হতে পারলেন না।
পনের বছর বয়স থেকেই বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় পাবলাে নেরুদা ছদ্মনামে নিয়মিত কবিতা লিখতে শুরু করেছিলেন। জীবনে প্রতিষ্ঠিত কবি হওয়ারই স্বপ্ন দেখছেন তখন তিনি।
এই বয়সে তার কবিতার বিষয় ছিল প্রেম ভালবাসা, বিরহ, মৃত্যু এই অনুভূতির মধ্যে সীমাবদ্ধ। নেরুদার প্রথম কবিতার বই টুইলাইট প্রকাশিত হয় ১৯২৩ খ্রিঃ।
প্রথম বই প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই সমালােচকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন। উৎসাহিত হয়ে তিনি পরের বছরেই প্রকাশ করলেন দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ Veinte Poemas de amar বা কুড়িটি প্রেমের কবিতা।
বয়স কুড়িতে পৌছনাের আগেই নেরুদার কবিখ্যাতি সমস্ত দেশে ছড়িয়ে পড়ে।
ততদিনে তিনি অর্জন করেছেন নিজস্ব শৈলী ও বক্তব্য। বেরিয়ে এসেছেন প্রচলিত প্রকরণ ও ঢঙ -এর গন্ডি থেকে। কবিতার পাশাপাশি গল্প লেখাতেও হাত দিয়েছিলেন নেরুদা।
পাবলো নেরুদা এর রচনা: Written by Pablo Neruda
তার প্রথম উপন্যাস El habitante ysu caperanza বা নিবাসী ও তার আশা প্রকাশিত হয় ১৯২৬ খ্রিঃ। পরের বছর থেকেই শুরু হল নেরুদার বিচ্ছিন্ন কূটনৈতিক জীবন।
১৯২৭ খ্রিঃ থেকে পাঁচবছরের জন্য তাকে দূতাবাসের চাকরিতে নিয়ােগ করলেন চিলি সরকার।
দেশের বুদ্ধিজীবীদের সম্মান জানাবার এটাই ওই দেশের সরকারের প্রচলিত রীতি। নেরুদা প্রথমে গেলেন ব্রহ্মদেশ, সেখান থেকে রেঙ্গুন, তারপর কলম্বাে এবং পরে জাভায় কাটালেন নিঃসঙ্গ জীবন।
কবিতা রচনাই ছিল তার এই বিচ্ছিন্ন জীবনের সঙ্গী। প্রবাসবাসকালীন রচনা Residencia eu latierra বা পৃথিবীর বাসা কবিতাগুচ্ছ। দেশের বাইরে থাকার যন্ত্রণা ও একাকীত্ব স্মৃতিমেদুরতা ছিল এই কাব্যগ্রন্থের বিষয়বস্তু।
চিলি সরকারের কনসাল হয়ে ১৯৩৩ খ্রিঃ নেরুদা গেলেন স্পেনে।
বার্সিলােনা ও মাদ্রিদে এলেন জনসাধারণের ঘনিষ্ঠ সান্নিধে। স্পেনের গৃহযুদ্ধে নিহত কবি ফেদেরিকো গার্সিয়া কাফকা তাকে প্রভাবিত কবলেন।
পাবলো নেরুদা এর রাজনৈতিক জীবন: Pablo Neruda’s Political Life
কূটনৈতিক জীবনে এসে ধীরে ধীরে আকৃষ্ট হলেন রাজনীতির প্রতি। পালাবদল এলাে কবিতাতেও। তাঁর লেখায় ধ্বনিত হল সরকার হত্যার বিরুদ্ধে আবেগময় প্রতিবাদ। এই কারণে তাকে হারাতে হল কনসালের পদ ১৯৩৭ খ্রিঃ।
১৯৪০ খ্রিঃ থেকে ৪৩ খ্রিঃ পর্যন্ত তিন বছর কনসাল রূপে মেক্সিকোতে কাটালেন। এই সময়েই নেরুদা মার্কসবাদে বিশ্বাসী হয়ে উঠলেন। হয়ে উঠলেন পুরােপুরি সৈনিক।
১৯৪৫ খ্রিঃ নেরুদা কমিউনিস্ট পার্টিতে যােগ দেন এবং চিলির আইনসভা সিনেটের সদস্য নির্বাচিত হন।
রাজনীতিতে যােগ দেবার পর দেশের সাধারণ মানুষের প্রতি ভালবাসাই তাকে প্রেসিডেন্ট ভিদেলার জনস্বার্থ বিরােধী কাজের সমালােচনা করতে উৎসাহ যােগাল।
এই সময় গ্রেপ্তার হবার আশঙ্কায় তাকে আত্মগােপন করতে হল। তার সরকার বিরােধী ছড়া তখন ফিরতাে লােকের মুখে মুখে। চিলির মহাকাব্য বলে কথিত CantoGeneral বাকান্ড সর্বময় প্রকাশিত হল ১৯৫০ খ্রিঃ।
১৯৫২ খ্রিঃ নাগাদ চিলির বামপন্থী বিরােধী আইন কিছুটা শিথিল হলে নেরুদা দেশে ফিরে এলেন।
এই সময় তাঁর কবিতার ধরন -ধারণ সম্পূর্ণ পাল্টে গেল। তার লেখা হয়ে উঠল সমাজের বৃহত্তর অংশের আদরণীয়।
পাবলো নেরুদা এর বিবাহ জীবন ও পরিবার: Pablo Neruda’s Marriage Life And Family
তিনি হলেন সাধারণের প্রিয় কবি। ১৯৫৫ খিঃ নেরুদা বিয়ে করলেন মাতিল দে উরুতীয়াকে। বিয়ের অব্যবহিত আগে এবং পরে লিখলেন অসংখ্য প্রেমের কবিতা। ১৯৫৯ খ্রিঃ প্রকাশিত হল তার প্রেম বিষয়ক সনেট শতক Cien Sonetos dc amar।
বয়স পঞ্চাশ উত্তীর্ণ করে কবি তাঁর কবিতার মােড় ফিরিয়েছিলেন। বিষয়বস্তু হয়ে উঠেছিল ভ্রমণ, রাজনীতি এবং ব্যক্তিগত জীবনে সুখ -দুঃখের হিসেব নিকেশের প্রসঙ্গ।
১৯৬৭ খ্রিঃ প্রকাশিত হয় তার গীতিনাট্য Fulgar 4 muirte de Joaquin Murieta বা হােয়াকিন মুরিয়েতের মহিমা ও মৃত্যু এবং মানব প্রগতি ও সৃষ্টি সম্পর্কে অতিকথনমূলক কবিতা La eshada encendida বা জাজ্বল্যমান তরবারি। ইতিমধ্যে চিলির রাজনৈতিক পটভূমিতে এলাে পরিবর্তন।
পাবলো নেরুদা এর পুরস্কার ও সম্মান: Pablo Neruda’s Awards And Honors
১৯৭০ খ্রিঃ সালভাদর অলিন্দে চিলির প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন। নেরুদাকে রাষ্ট্রদূত হয়ে যেতে হল প্যারিসে।
এখানে অবস্থান কালেই নেরুদা পেলেন তার সাহিত্যের সর্বোচ্চ মর্যাদার স্বীকৃতি নােবেল পুরস্কার (১৯৭১ খ্রিঃ)।
এর আগে তিনি পেয়েছিলেন আন্তর্জাতিক শান্তি পুরস্কার এবং লেনিন ও স্তালিন পুরস্কার। চিলিতে গৃহযুদ্ধের মুখে মুখে রােগাক্রান্ত নেরুদা ফিরে এলেন দেশে।
তার স্মৃতিকথা Conficsoque he vivido: Memorias (১৯৭১ খ্রিঃ) -এর চূড়ান্ত রূপ দিলেন।
পাবলো নেরুদা এর মৃত্যু: Pablo Neruda’s Death
রােগাক্রান্ত অবস্থাতেই ১৯৭১ খ্রিঃ ২৩ শে সেপ্টেম্বর চিলির প্রিয় মানুষ নেরুদা শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন।
আরও পড়ুন-