Nicolaus Copernicus Biography: আজ আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি মহান ব্যক্তিদের জীবনী সমগ্র। মহান ব্যক্তি আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা। তাঁদের জীবনের ক্ষুদ্রতম অংশগুলি আমাদের জন্য শিক্ষামূলক হতে পারে। বর্তমানে আমরা এই মহান ব্যক্তিদের ভুলতে বসেছি। যাঁরা যুগ যুগ ধরে তাদের কর্ম ও খ্যাতির মধ্য দিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন এবং জ্ঞান, বিজ্ঞান, শিল্প ও সাহিত্যের জগতে এক অনন্য অবদান রেখেছেন এবং তাঁদের শ্রেষ্ঠ গুণাবলী, চরিত্র দ্বারা দেশ ও জাতির গৌরব বৃদ্ধি করেছেন। সেইসব মহান ব্যক্তিদের মধ্যে অন্যতম নিকোলাস কোপার্নিকাস (Nicolaus Copernicus) -এর সমগ্র জীবনী সম্পর্কে এখানে জানব।
Nicolaus Copernicus Biography In Bengali – নিকোলাস কোপার্নিকাস জীবনী
নাম | নিকোলাস কোপার্নিকাস |
জন্ম | 19 ফেব্রুয়ারি 1473 |
পিতা | নিকোলাস কোপার্নিকাস সিনিয়র |
মাতা | বারবারা ওয়াটজেনরোড |
জন্মস্থান | রয়্যাল প্রুশিয়া, পোল্যান্ড |
জাতীয়তা | পোলিশ |
পেশা | গণিতবিদ, জ্যোতির্বিদ |
মৃত্যু | 24 মে 1543 (বয়স 70) |
নিকোলাস কোপার্নিকাস কে ছিলেন? Who is Nicolaus Copernicus?
প্রাচীন গ্রীসের দার্শনিক – বিজ্ঞানী টলেমির একটি ধারণা থেকেই গঠিত হয়েছিল জ্যোতির্বিজ্ঞানের মূলভূমি। মানবসভ্যতার উষালগ্নে তিনি ঘোষণা করেছিলেন, পৃথিবী হল সৌরজগতের কেন্দ্রভূমি।
তার চারপাশে সদা আবর্তনশীল সূর্য চন্দ্র গ্রহ ও অসংখ্য নক্ষত্রের জগৎ। সেই যুগে মহাজ্ঞানী টলেমির এই ধারণাটিই মহাসত্যরূপে গৃহীত হয়েছিল।
তবুও প্রতিবাদ ধ্বনিত হয়েছিল সেই যুগেরই আর এক গ্রীক মনীসা পিথাগোরাসের কণ্ঠে। তিনি বলেছিলেন, টলেমির ধারণা একেবারেই ভ্রান্ত। সৌরজগতের কেন্দ্রে রয়েছে সূর্য – পৃথিবী নয়।
পৃথিবীই সূর্যের চারদিকে ঘোরে। এইভাবেই বিতর্কের শুরু। কিন্তু টলেমির ধারণা অপরিবর্তিতই রয়ে গেল। পরবর্তীকালে গ্রীক চিন্তাবিদ অ্যারিস্টটল পিথাগোরাসের তত্ত্বকে উড়িয়ে দিলেন মিথ্যা বলে। তিনি টলেমির তত্ত্বকেই সমর্থন করে বলেছিলেন, পৃথিবী স্থির, সূর্যসহ সমস্ত গ্রহ নক্ষত্র তার চারদিকে পরিক্রমা করে চলেছে এই তত্ত্বই সত্য। পিথাগোরাসের প্রতিবাদী কন্ঠ কিন্তু স্থির হয়ে যায়নি।
যে সত্যের ভিত্তিতে তিনি টলেমির তত্ত্বকে মিথ্যা বলে ঘোষণা করেছিলেন, সেই সত্যকে নতুন করে তুলে ধরেছিলেন নিকোলাস কোপার্নিকাস।
নিকোলাস কোপার্নিকাস এর জন্ম: Nicolaus Copernicus’s Birthday
এই মহাবিজ্ঞানীর তত্ত্বের ভিত্তিতেই উত্তরকালে আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানের জয়যাত্রা শুরু হয়েছিল। পোলান্ডের ভিস্টলা নদীর তীরবর্তী টোরুন (Tarun) নামে বন্দর শহরে ১৪৭৩ খ্রিঃ কোপার্নিকাসের জন্ম। মাত্র দশ বছর বয়সেই পিতৃহারা হন তিনি।
তাঁর মামা ছিলেন পোল্যান্ডের একজন বিশিষ্ট বিশপ। পিতার মৃত্যুর পর কোপার্নিকাস মামার কাছেই মানুষ হতে থাকেন। বাবা ছিলেন বাণিজ্যের মানুষ।
তাঁর কাছে বাল্য বয়স থেকে দেশ-বিদেশেব সাগর ও বন্দরের রোমাঞ্চকর গল্প শুনে কল্পনার এক স্বপ্নরাজ্য গড়ে উঠেছিল কোপার্নিকাসের মনে। মামা ছিলেন বাস্তববাদী, সবকিছুকে যাচাই বাছাই করে প্রকৃত সত্যের সন্ধান করবার প্রবণতা ছিল তার স্বভাবজাত।
মামার সান্নিধ্যে কোপার্নিকাসের মধ্যেও এই গুণ সঞ্চারিত হল। মামার শিক্ষা ও সাহচর্যে বেড়ে উঠতে লাগলেন তিনি। ১৪৯২ খ্রিঃ উনিশ বছর বয়সে কোপার্নিকাস ভর্তি হন পোল্যান্ডের বিখ্যাত ক্রাকো বিশ্ববিদ্যালয়ে।
এখানে অধ্যয়ন করার সময়েই অঙ্ক ও জ্যোতির্বিজ্ঞানের অধ্যাপক ব্রুদেস্কির সান্নিধ্যে এসে কোপার্নিকাসের জীবনে এলো গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন। জ্যোতির্বিজ্ঞানের প্রতি প্রবলভাবে আকৃষ্ট হলেন তিনি। ১৪৯২ খ্রিঃ বিখ্যাত হয়ে আছে আরও একটি কারণে।
নিকোলাস কোপার্নিকাস এর শিক্ষাজীবন: Nicolaus Copernicus’s Educational Life
সেই বছরই ইতালীয় নাবিক কলম্বাস নতুন এক মহাদেশ আমেরিকা আবিষ্কার করেন। জ্যোতির্বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করার প্রবল আগ্রহ সত্ত্বেও কোপার্নিকাসকে কিন্তু পড়তে হল চিকিৎসাশাস্ত্র।
মানবহিতৈষী মামার ইচ্ছা ডাক্তার হয়ে কোপার্নিকাস আর্ত মানবের সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করুন। বিশপ মামার ইচ্ছা অপূর্ণ রাখেননি কোপার্নিকাস। কৃতিত্বের সঙ্গে ডাক্তারি পাশ বরে আর্ত মানবতার সেবার কাজে আত্মনিয়োগ করলেন।
কিছুকাল পরে মামার অনুমতি নিয়ে উচ্চতর শিক্ষা লাভের জন্য কোপার্নিকাস ইতালিতে গেলেন। ভর্তিহলেন বোলগানা বিশ্ববিদ্যালয়ে। গণিত ও জ্যোতির্বিজ্ঞান হল তার বিষয়।
সেই সময় পর্যন্ত জ্যোতির্বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে গ্রীক মনীষীদেরই প্রাধান্য। আবার অঙ্কের ক্ষেত্রে তার প্রাচীন ধারাটি ধারণ করে আছেন আরব পন্ডিতগণ। দুই বিষয়ের মূল ধারার সঙ্গে পরিচিত হবার জন্য কোপার্নিকাস প্রথমে গ্রীক ও আরবী ভাষা শিক্ষা করতে লাগলেন।
ছবি আঁকা ও কবিতা লেখার অভ্যাস ছিল কৈশোর থেকেই। ভাষা শিক্ষার ফাকে ফাঁকে তারও চর্চা চলতে লাগল। বোলগানা বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার কাজ চলাকালীনই রোম বিশ্ববিদ্যালয়ের আহ্বান পেলেন।
নিকোলাস কোপার্নিকাস এর প্রথম জীবন: Nicolaus Copernicus’s Early Life
সেখানে জ্যোতির্বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপকের পদে যোগ দিলেন৷ সঙ্গে থাকল বিস্তৃত গবেষণার সুযোগ। টলেমীর জ্যোতিতত্ত্ব ও বিভিন্ন দার্শনিক মনীষীর মতামত নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করতে গিয়েই সহসা একদিন এক জিজ্ঞাসার সম্মুখীন হতে হল। গভীর চিন্তা আশ্রয় করল কোপার্নিকাসকে। তিনি লক্ষ্য করলেন টলেমির জ্যোর্তিতত্ত্বের বিরুদ্ধেও মতামত রেখেছেন অনেক মনীষী।
তাঁরা বলেছেন, পৃথিবী নয়, সূর্যই সৌরজগতের কেন্দ্র। অথচ টলেমির স্পষ্ট উক্তি, পৃথিবী স্থির, সৌরজগতের সমস্ত কিছুই পৃথিবীকে কেন্দ্র করে নিজস্ব কক্ষপথ ধরে বৃত্তাকারে ঘুরছে।
কোপার্নিকাসের মনে প্রশ্ন জাগে, পৃথিবী যদি স্থির হবে, তাহলে পৃথিবীর বুকে ঋতু বৈচিত্র্য ঘটে কি করে? দূর আকাশের তারাদেরই বা বছর বছর স্থান বদল ঘটে কেন? এই প্রশ্নটি মাথায় চেপে বসল। তিনি বুঝতে পারলেন, তত্ত্বটি সম্পূর্ণ করবার সুযোগ হয়নি কোন মনীষীর।
আরও পড়ুন: জন বার্ডন স্যান্ডার্সন হলডেন জীবনী
এতকাল এই অসম্পূর্ণ বিষয় নিয়ে ছাত্রদের মধ্যে বক্তৃতা দিয়ে তাঁদেরও রাখা হয়েছে প্রকৃত সত্য থেকে দূরে। নিজেকেই নিজে ধিক্কার দিলেন কোপার্নিকাস।
শেষ পর্যন্ত রোম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপনার কাজে ইস্তফা দিয়ে চলে এলেন বাড়িতে। ততদিনে মামা বৃদ্ধ হয়েছেন।
কোপার্নিকাস তার সেবাযত্নের সঙ্গে পুনরায় দরিদ্রের সেবার নিয়োজিত করলেন নিজেকে। কিন্তু যে জিজ্ঞাসার তাড়নায় অধ্যাপনার কাজ পরিত্যাগ করে এসেছিলেন তা কিন্তু অন্তরে সদা জাগরুক ছিল।
সৌরজগতের যথার্থ রূপটি জানার আগ্রহে দিনের পর দিন চলল তার আকাশ পর্যবেক্ষণ। দিনের বেলা চার্চের কাজ আর দরিদ্রের সেবার কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়।
তাই রাতে তিনি ছাদে গিয়ে ওঠেন মহাকাশের নক্ষত্রদের গতিবিধি বুঝবার জন্য। অসীম বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে থাকেন আকাশের দিকে। ঘন্টার পর ঘন্টা কেটে যায় এভাবে।
কখনো প্রাচীন পান্ডুলিপি খুঁজে সৌরসংসারের পরিচয় ঝালিয়ে নেন। গাণিতিক হিসাবনিকাশে ডুবে যান। এইভাবে একসময় গড়ে ওঠে কোপার্নিকাসের গ্রহ আবর্তনের তত্ত্ব।
আরও পড়ুন: রেনে দেকার্ত জীবনী
মঙ্গল, বৃহস্পতি, শুক্র ও শনি এই চার গ্রহের স্থানাঙ্ক নির্ণয় করতেও সমর্থ হন। এরপর চলে নিজস্ব ছকে সত্যতা নির্ণয়ের পালা। কিছুকালের মধ্যেই বুঝতে পারলেন গ্রহ – তারাদের গতিধারা নিয়ে তার গাণিতিক ছক নির্ভুল।
উল্লসিত হয়ে ওঠেন কোপার্নিকাস। গ্রহ – তারাদের নিত্যকালের পথ-পরিক্রমার সঠিক নিয়মটি এতদিনে ধরতে পেরেছেন তিনি। ১৫০৯ খ্রিঃ থেকে ১৫১১ খ্রিঃ মধ্যে কোপার্নিকাস তার সূর্যকেন্দ্রিক তত্ত্বের আবিষ্কার সম্পূর্ণ করলেন।
তার তত্ত্বের সারকথা হল, সৌর-মন্ডলের সকলেই এমনকি পৃথিবীও স্থির নয়-সকলেই চলমান নিজস্ব কক্ষপথে। সূর্যকে ঘিরেই চলে তাদের পরিক্রমণ। সূর্যই সৌরমন্ডলের কেন্দ্র।
প্রথমে বুধ তারপর একে একে শুক্র, পৃথিবী ও চাঁদ, মঙ্গল, বৃহস্পতি, শনি, সেই সঙ্গে অসংখ্য নানাজাতের নক্ষত্র সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে চলেছে। পৃথিবী তার নিজস্ব কক্ষপথে লাটিমের মত আবর্তিত হতে হতে তার সূর্য প্রদক্ষিণের কাজ সম্পূর্ণ করে।
নিজস্ব কক্ষে এভাবে পাক খায় বলেই পৃথিবীতে চলে দিন আর রাতের অবিরাম যাতায়াত। সমগ্র কাজটিই চলে প্রকৃতি নির্দিষ্ট একটি গাণিতিক রীতিতে।
গণিতের হিসাব থেকেই বলে দেওয়া সম্ভব কখন কোন গ্রহ কক্ষপথের কোন স্থানাকে অবস্থান করছে। গ্রহণের সময় নির্দেশ করাও সম্ভব পরিপাটি গণিত থেকে।
ষোল শতকের প্রথম দশকে দেশজুড়ে চলেছে রেনেসাঁ বা পুনর্জাগরণের ঢেউ। চিন্তাশীল মানুষদের নেতৃত্বে ক্রমশ ধসে পড়ছে পুরনো ভাবনা-চিন্তা।
পারিপার্শ্বিকের এই সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়েও কোপার্নিকাস তার নবাবিষ্কৃত তত্ত্বের কথা ঘোষণা করবার সাহস পেলেন না। সমাজে চার্চের অনুশাসন তখন সুদৃঢ়।
প্রকৃতির সহজ সত্যের কথাও ধর্মাশ্রয়ী প্রাচীনপন্থীর দল মেনে নিতে চাইবে না কিছুতেই। সুবিধাভোগী প্রাচীনের দল প্রকৃতির সত্যকেই ঘোষণা করবে বাইবেল-বিরোধী প্রচারণা বলে।
আরও পড়ুন: মার্শাল ওয়ারেন নীরেনবার্গ জীবনী
চার্চের রাজত্বে ধর্মদ্রোহীর দন্ডবিধান অনিবার্য। বাধ্য হয়ে স্বাধীন চিন্তার আলোকপ্রাপ্ত রেনেসাঁর নেতৃবৃন্দের শরণাপন্ন হতে হয় তাকে৷ বক্তৃতা আলোচনা ইত্যাদিরও ব্যবস্থা হয়।
কিন্তু কোথাও নিজের তত্ত্ব প্রকাশ করবার সাহস পেলেন না কোপার্নিকাস। রেনেসাঁর কর্মকর্তারাও তাকে অভয় দেবার সাহস দেখাতে পারলেন না। প্রোটেস্ট্যান্ট ধর্মের পিতা প্রগতিমনা মার্টিন লুথার -এর কানেও একসময় কোপার্নিকাসের অভিনব তত্ত্বের কথা পৌঁছল।
কিন্তু হলে হবে কি, প্রতিবাদী ধর্মের ভিত্তিও যে সেই বাইবেল। আর কোপার্নিকাসের কথা যে বাইবেলের ঘোষণার বিপরীত। মার্টিন লুথার সমর্থন তো করলেনই না উল্টে মন্তব্য করলেন, “ He is a fool who wants to turn the whole art of astronomy upside down “।
কোপার্নিকাস হতাশ হলেন। জ্যোতির্বিজ্ঞানের পৃথিবী কেন্দ্রিক তত্ত্ব যা বাইবেল স্বীকৃত, তা যে মিথ্যা, মহাবিশ্বের সব কিছুরই গতি যে সূর্যকেন্দ্রিক এবং তাই-ই প্রাকৃতিক সত্য -একথা মেনে নেবার মত প্রস্তুত মানসিকতার মানুষ যে একটিও নেই দেশে। কিন্তু সত্যের পূজারী যে সে তো নির্ভীক – সত্যপ্রকাশে কুণ্ঠা যে মিথ্যার কাছে হেরে যাবার সামিল।
অনেক চিন্তাভাবনার পর কোপার্নিকাস মনস্থির করে নিলেন। জীবন অস্তাচলের পথে, আর সময় বেশি পাওয়া যাবে না। পৃথিবী থেকে চলে যাবার আগেই এই মহাসত্যের ঘোষণা প্রচার করতে হবে।
আরও পড়ুন: টাইকো ব্রাহে জীবনী
দ্য রিভলিউশান অব হেভেনলি স্ফিয়ার বা দ্য রেভলিউশনিবাস অরবিয়াস সিলেসটিয়াম এই নাম দিয়ে নিজের তত্ত্বের সম্পূর্ণ বিবরণ বিবৃত করে একটি বই রচনা করলেন কোপার্নিকাস।
এই বৈপ্লবিক বইটি তিনি উৎসর্গ করলেন মহামান্য পোপ তৃতীয় পলের নামে। কোপার্নিকাস জানতেন তার বই চার্চের রোষদৃষ্টিতে পড়বে। কিন্তু পোপের নাম যুক্ত থাকলে হয়তো যাজকরা এই বই -এর ওপর হামলা করতে ইতস্ততঃ করবে।
এই আশাতেই বইটির সঙ্গে পোপের নাম যুক্ত করে দিয়েছিলেন। একতরুণ জার্মান পন্ডিতের প্রবল আগ্রহে কোপার্নিকাস তার বইয়ের পান্ডুলিপি তাঁকে দেন। ১৫৪৩ খ্রিঃ কোপার্নিকাস যখন শয্যায় তখন তার বহু বছরের পরিশ্রম বই আকারে প্রকাশিত হয়।
জীবিতকালে কোপার্নিকাস তার নিজস্ব মতবাদের স্বীকৃতি না পেলেও ১৫৮২ খ্রিঃ পোপ গ্রেগরি ক্যালেন্ডার সংশোধন করেন সূর্যকেন্দ্রিক তত্ত্বের ভিত্তিতেই। সৌরজগৎ যে সৌরকেন্দ্রিক এই মতবাদের প্রথম প্রবক্তা ছিলেন কোপার্নিকাসের ১৮০০ বছর আগেকার সামোসের গ্রীক জ্যোতির্বিদ অ্যারিসটারকাস। কোপার্নিকাস সেই মতবাদকে নির্ভুল গাণিতিক যুক্তিতে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন।
নিকোলাস কোপার্নিকাস মৃত্যু: Nicolaus Copernicus’s Death
১৫৪৩ খ্রিঃ পোলান্ডে এই কর্মময় প্রাণবন্ত জ্ঞানপিপাসু বিজ্ঞানী শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। কোপার্নিকাসকে কেবল আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানের রূপকার বললে তার পরিচয় সম্পূর্ণ হয় না।
তিনি ছিলেন একাধারে ভাষাবিদ, বৈজ্ঞানিক, চিকিৎসক, গণিতজ্ঞ, পুরোহিত, অর্থনীতিবিদ এবং রাজনীতিজ্ঞ। ১৪৯১ খ্রিঃ থেকে ১৪৯৪ খ্রিঃ পর্যন্ত ক্রাকাও বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা লাভ কালে তিনি যে কেবল গণিত ও জ্যেতির্বিদ্যায় ব্যুৎপত্তি লাভ করেছিলেন তাই নয়, এখানে নানা যন্ত্রপাতির ব্যবহার গ্রহনক্ষত্রাদি পর্যবেক্ষণ করার কলাকৌশল আয়ত্ত করেন। ১৫০৩ খ্রিঃ ফেরারা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ধর্মযাজক সম্পর্কিত আইনের ওপর ডক্টরেট ডিগ্রি পান।
১৫০৬ খ্রিঃ পাদুয়া থেকে ফিরে এসে যখন চার্চের কাজে পিতৃব্যের সহযোগী হন সেই সময় সপ্তম শতাব্দীর বাইজেনটাইন কবি Theophylactus Simacotta এর ৮৫ টি কবিতা গ্রীক থেকে ল্যাটিনে অনুবাদ করেন। ১৫০৯ খ্রিঃ ক্রাকাও থেকে তা পুস্তাকাকারে প্রকাশ করেন।
আরও পড়ুন: ইয়োহানিস গুটেনবার্গ জীবনী
১৫২২ খ্রিঃ কোপার্নিকাস একটি পুস্তিকা প্রকাশ করেন। তাতে দেশে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করার উপায় ব্যক্ত করেন।
কোপার্নিকাস জানতেন good money এবং bad money দুটোই যদি একই সঙ্গে বাজারে চালু থাকে তাহলে জনসাধারণ ভাল টাকা রেখে মন্দ টাকা চালাবে, এর ফলে মুদ্রাস্ফীতি হবে -এই ধারণা অর্থনীতিতে গ্রেসামের সূত্র নামে খ্যাত। কোপার্নিকাস সুপারিশ করেন, মুদ্রা প্রবর্তনের ক্ষমতা কেবলমাত্র রাষ্ট্রের হাতে থাকা উচিত৷
যাজক থাকাকালীন তাঁকে অনেক রাজনৈতিক সঙ্ঘাতও সামাল দিতে হয়েছে। ১৫৪২ খ্রিঃ পর্যন্ত কোপার্নিকাসের জীবন বহুবিধ কর্মকান্ডের মধ্যে কাটে। এই দীর্ঘসময়ে তিনি তাঁর তত্ত্ব প্রকাশ না করে তাকে নানাভাবে উন্নততর করার চেষ্টা করেছেন।
তবে ১৫১২ খ্রিঃ পিতৃব্যের মৃত্যুর অব্যবহিত পরে কোপার্নিকাস একটি পান্ডুলিপি প্রস্তুত করেছিলেন তার নাম Commintariolus অথবা Small Commentary । এই পান্ডুলিপিতে তিনি তার সূর্যকেন্দ্রিক তত্ত্বের কথা লিখে রেখেছিলেন।
আরও পড়ুন: নিকোলাস কোপার্নিকাস উইকিপিডিয়া