National flag of India- ভারতের জাতীয় পতাকা গৃহীত হয় ২২ জুলাই ১৯৪৭
National flag of India: ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের পূর্বে ঔপনিবেশিক ভারতবর্ষের প্রায় প্রতিটি প্রদেশে ভিন্ন পতাকা ব্যবহৃত হত। কিন্তু ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহ পরবর্তী সময়ে ব্রিটিশ সরকার সমগ্র ভারতের জন্য এক রাজা সপ্তম অভিন্ন পতাকার সুপারিশ করেন।
ইংল্যান্ডের এডওয়ার্ডের শাসনকালে এটা ঠিক হল যে, পতাকাতে এমন প্রতীক ব্যবহার হবে যা ভারতীয় শাসককে চিহ্নিত করবে। ঠিক একই সময় ভারতীয় জাতীয়তাবাদীগণ চিন্তা করেছিল পতাকাতে প্রয়োজন ধর্মীয় প্রতীকের (যেমন- মাকালী, গো মাতা, অথবা গণপতি)।
ভারত ভিন্ন ভাষা-ভাষী, ধর্ম-সম্প্রদায়ের মিলনভূমি তাই হিন্দু ঐতিহ্যবাদী দেব-দেবীর প্রতীক বজনীয় হল। লর্ড কার্জন যখন বাংলা ভাগের সিদ্ধান্ত কার্যকর করেন ১৯০৫ সালে, সেই সময় বঙ্গভঙ্গ বিরোধী তথা স্বদেশি আন্দোলন শুরু হয় এবং প্রয়োজন হয়ে পড়ে এক নতুন পতাকার, যা ভারতবাসীকে ঐক্যবদ্ধ করবে।
আরও পড়ুন- সাধারণ জ্ঞান ভারতের জাতীয় সংগীত সম্পর্কে প্রশ্ন ও উত্তর
ফলশ্রুতিতে ‘বন্দেমাতরম’ নামে একটি পতাকা আত্মপ্রকাশ করেছিল। (National flag of India) এই পতাকা তিনটি রঙের সংমিশ্রণে গঠিত ছিল- লাল, সবুজ এবং হলুদ।
আটটি পদ্ম নিয়ে গঠিত পতাকাটি আট ব্রিটিশ প্রদেশ চিত্রিত করা হয়। একদম নীচে একটি সূর্য ও অর্ধচন্দ্র প্রতীক হিন্দু-মুসলমান দুই সম্প্রদায়কে নির্দেশ করছিল। মধ্যভাগে দেবনাগরী হরফে ‘বন্দেমাতরম’ লেখা হয়েছিল।
যদিও এই পতাকা আপামর জনগণের মধ্যে জাতীয়তাবাদী অনুভূতি জাগ্রত করতে ব্যর্থ হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে ভগিনী নিবেদিতা নতুন এক পতাকার নক্সা তৈরি করেছিলেন। যেটি ১৯০৬ সালের জাতীয় কংগ্রেসের অধিবেশনে প্রকাশ করা হয়।
কিন্তু এই নক্সা তেমন সাড়া ফেলেনি। ১৯১৬ সালে অ্যানি বেসান্ত ও তিলক ইউনিয়ন জ্যাক সহ, সূর্য ও অর্ধ চন্দ্র প্রতীক যুক্ত এক নতুন পতাকার নক্সা আত্মপ্রকাশ করেন।
আরও পড়ুন- ভারতের জাতীয় পতাকার নকশা (National flag of India)
তবে এই নক্সাও বাতিল হয়ে যায়। ১৯২০ সালে মহত্মা গান্ধি সকল ধর্ম-ভাষা-ভাষীর মানুষের ভাবপ্রবণতাকে সম্মান জানাতে তিন রঙা পতাকার নক্সা তৈরি করেন। সাদা রঙ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, সবুজ রঙ মুসলমান এবং লাল রঙ শিখ ও হিন্দু সম্প্রদায়কে প্রতিনিধিত্ব করত।
পতাকাটির মধ্যিখানে একটি সুতাকাটা চরকা শোভা পেত। জাতীয় কংগ্রেস মোটেও এই স্বাধীনতা সংগ্রামী তিন রঙা পতাকাটি গ্রহন করেনি। গান্ধি নির্মিত পতাকার নক্সাটিও সকল শ্রেণির খুব একটা পছন্দের ছিল না।
এমতাবস্থায় ১৯৩১ সালে পিঙ্গালি ভেঙ্কাইয়া নামে এক এক নতুন পতাকার নকশা আত্মপ্রকাশ করেন। যার উপরে ছিল গেরুয়া, মাঝে সাদা ও নিচে সবুজ রঙ এবং মধ্যখানে ছিল চরকার নক্সা। কংগ্রেসের অধিবেশনে ১৯৩১ সালে এই নক্সাটি অবশেষে গৃহীত হয়।
বদলে ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ স্বাধীনতা প্রাপ্তির অব্যবহিত পর গণপরিষদের রাষ্ট্রপতি হিসেবে ড. রাজেন্দ্রপ্রসাদ এই পতাকাটিকে সামান্য পরিবর্তন (মধ্যিখানে অশোকচক্র ব্যবহার) করে জাতীয় পতাকার মর্যাদা দেন।
২২ জুলাই গণপরিষদের অধিবেশনে প্রথম এই পতাকা স্বাধীন ভারতের জাতীয় পতাকা হিসেবে গৃহীত হয়।