মুকুন্দ দাস এর জীবনী সমগ্র – Mukunda Das Biography in Bengali- আজ আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি মহান ব্যক্তিদের জীবনী সমগ্র। মহান ব্যক্তি আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা। তাঁদের জীবনের ক্ষুদ্রতম অংশগুলি আমাদের জন্য শিক্ষামূলক হতে পারে। বর্তমানে আমরা এই মহান ব্যক্তিদের ভুলতে বসেছি। যাঁরা যুগ যুগ ধরে তাদের কর্ম ও খ্যাতির মধ্য দিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন এবং জ্ঞান, বিজ্ঞান, শিল্প ও সাহিত্যের জগতে এক অনন্য অবদান রেখেছেন এবং তাঁদের শ্রেষ্ঠ গুণাবলী, চরিত্র দ্বারা দেশ ও জাতির গৌরব বৃদ্ধি করেছেন। সেইসব মহান ব্যক্তিদের মধ্যে অন্যতম লেখক মুকুন্দ দাস -এর সমগ্র জীবনী সম্পর্কে এখানে জানব।
মুকুন্দ দাস এর জীবনী সমগ্র – Mukunda Das Biography in Bengali
নাম | মুকুন্দ দাস (যজ্ঞেশ্বর) |
জন্ম | 22nd ফেব্রুয়ারি 1878 |
জন্মস্থান | ঢাকা জেলার বিক্রমপুর পরগণার বানরী গ্রামে |
পিতা | গুরুদয়াল দে |
মাতা | শ্যামাসুন্দরী দেবী |
জাতীয়তা | ব্রিটিশ ভারতীয় |
পেশা | কবি |
মৃত্যু | 18th মে 1934 (বয়স 56) |
মুকুন্দ দাস পিতামাতা ও জন্মস্থান: Mukunda Das parents and birthplace
বাংলার চারণকবি মুকুন্দদাসের জন্ম ঢাকার বানরী গ্রামে। পিতার নাম গুরুদয়াল দে। তাঁর পিতৃদত্ত নাম ছিল যজ্ঞেশ্বর।
মুকুন্দ দাসের শিক্ষাজীবন: Educational life of Mukunda Das
গুরুদয়াল কাজ করতেন বরিশালে এক ডেপুটির আদালতে। কর্মসূত্রে তাকে বরিশালে থাকতে হতাে। পরে সপরিবারে এখানেই এসে বসবাস করেন। এখানেই বাল্যের স্কুলের পড়া আরম্ভ হয় মুকুন্দ দাসের।
সংসারে স্বচ্ছলতার অভাব ছিল। তাই স্কুলের পড়া বেশিদূর এগোয়নি। ফলে কিশাের বয়স থেকেই পিতার মুদি দোকানে বসতে আরম্ভ করেন। ছেলেবেলা থেকেই ছিলেন স্বাধীনচেতা আর অত্যন্ত দুরন্ত
গানের গলা ছিল মিষ্ট। শুনে শুনেই গান তুলতে পারতেন। বরিশালের তৎকালীন নায়েব বীরেশ্বর গুপ্ত একটি কীর্তনের দল করেছিলেন।
মুকুন্দ সেই কীর্তনদলে যােগ দেন ১৯ বছর বয়সে। পরে নিজেই একটি দল গড়েন। নানা পূজাপার্বণে কীর্তনের দল নিয়ে বরিশালের বিভিন্ন স্থানে যেতে হত। এইভাবে অনেক কীর্তনীয়া দলের সঙ্গে যােগাযােগ হয়।
তিনি পছন্দমত গান অন্য কীর্তনীয়াদের কাছ থেকেটুকে রাখতেন। পরে এইসব উপাদান তার কীর্তন সঙ্গীত নামক সংকলন গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত হয়।
আরও পড়ুন- বিপ্লবী রাসবিহারী বসু এর জীবনী সমগ্র
মুকুন্দ দাস ১৯০২ খ্রিঃ বৈষ্ণবমন্ত্রে দীক্ষা নেন রামানন্দ বা হরিবােলানন্দ নামের একসর্বত্যাগীসাধুর কাছে। দীক্ষাগ্রহণের পরতার নাম হয় মুকুন্দ দাস। পরবর্তীকালে এই নামেই তিনি দেশবিখ্যাত হন।
বরিশালের মুকুটহীন সম্রাট বলে আখ্যাত মনস্বী অশ্বিনীকুমার দত্তের সংস্পর্শে এসে মুকুন্দ দাস স্বদেশ মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ হন।
তাঁরই প্রেরণায় মুকুন্দ দাস হয়ে ওঠেন বাংলার চারণকবি। সম্প্রদায়গত কোনপ্রকার গোঁড়ামি তার মধ্যে ছিল না। বৈষ্ণব ও শাক্তর ভেদাভেদ যেমন তিনি মানতেন না তেমনি মন্দির মসজিদের পার্থক্যও কখনাে করেন নি। তাঁর সাধন সঙ্গীত গুলিতে এই ভাবসমন্বয়ের প্রকাশ ঘটেছিল।
মুকুন্দ দাসের কর্ম জীবন: Mukunda Das’s Work Life
মুকুন্দ দাস নিজেই যাত্রাপালা ও গান রচনা করতেন। গানে সুর সংযােজনও নিজেই করতেন। মনােমােহন চক্রবর্তী, হেমচন্দ্র মুখােপাধ্যায় এবং অশ্বিনীকুমার দত্তের গানও করতেন তিনি।
একসময় বরিশাল হিতৈষী পত্রিকায় লিখতে আরম্ভ করেন। মুকুন্দ দাসের দলের যাত্রাগান এমনই জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল যে সারা বরিশাল তাকে গানের দল নিয়ে ঘুরতে হত। সেই সময়ে বিভিন্ন দেশবরেণ্য নেতা এবং স্বয়ং রবীন্দ্রনাথতার গান শুনে মুগ্ধ হন। তাঁর মাতৃপূজা যাত্রাপালাটি যুবকদের স্বদেশচেতনায় উদ্বুদ্ধ করত।
স্বদেশী আন্দোলনে বিশেষ করে বিদেশী বর্জন আন্দোলনে মুকুন্দ দাস বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন। বঙ্গনারী রেশমীচুড়ি আর পরাে না তার এই গানটি এক সময়ে বাংলার গ্রামে গ্রামে তীব্র উন্মাদনা জাগিয়েছিল।
অশ্বিনীকুমারের নিকট স্বদেশমন্ত্রে দীক্ষিত হবার পরে মুকুন্দ দাস গ্রামে গ্রামে দেশাত্মবােধক গান ও স্বদেশী যাত্রাভিনয় করে বেড়াতেন। ফলে তিনি বরিশালে ইংরাজ সরকারের কোপদৃষ্টিতে পড়েন। ১৯০৮ খ্রিঃ তাঁঁকে একবার গ্রেপ্তার করা হয়। পরে জামিনে মুক্ত হন।
মুকুন্দ দাস এর জীবনী সমগ্র – Mukunda Das Biography in Bengali
মাতৃপূজা গীত সংকলনের ‘ছিল ধান গােলা ভরা, শ্বেতহঁদুরে করল সারা গানটির জন্য তাঁর জরিমানা হয়। তিন বছর কারাদণ্ডও ভােগ করতে হয়। ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলনে মুকুন্দ দাস অংশ গ্রহণ করেছিলেন তার সংগীত ও যাত্রাপালা নিয়ে। তার গানের মাধ্যমে তিনি জনসাধারণকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন।
এই সূত্রে তিনি দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন এবং সুভাষচন্দ্রেরও সংস্পর্শে এসেছিলেন। বাংলার জনগণই তাকে শ্রদ্ধার সঙ্গে চারণকবি আখ্যা দিয়েছিল। গান করে তিনি সারাজীবনে ৭ শত মেডেল ও বহু পুরস্কার পেয়েছিলেন। মুকুন্দ দাসের উল্লেখযােগ্য রচনা সাধন সঙ্গীত, পল্লীসেবা, ব্রহ্মচারিণী, পথ, সাথী, সমাজ, কর্মক্ষেত্র প্রভৃতি।
মুকুন্দ দাস এর মৃত্যু: Death of Mukunda Das
১৯৩৪ খ্রিঃ ১৮ ই এপ্রিল বাংলা মায়ের চারণ সন্তান মুকুন্দ দাস পরলােক গমন করেন।
আরও পড়ুন-