হাত-পায়ের যত্নে ও সৌন্দর্যচর্চায় মেহেদি

হাত-পায়ের যত্নে ও সৌন্দর্যচর্চায় মেহেদি
হাত-পায়ের যত্নে ও সৌন্দর্যচর্চায় মেহেদি

হাত-পায়ের যত্নে ও সৌন্দর্যচর্চায় মেহেদি ভূমিকা অপরিসীম। সভ্য় সমাজে মানুষকে সামাজিক ভাবে আকর্ষণীয় দেখানোর জন্য ও আভিজাত্যের জন্য পোশাক পরিচ্ছদ, হাত-পায়ের যত্নে ও সৌন্দর্যচর্চায় মেহেদি করায় আকর্ষণীয় দেখায় সেটি সবারই জানা খুব প্রয়োজন । তাই আমরা এখানে হাত-পায়ের যত্নে ও সৌন্দর্যচর্চায় মেহেদি কেমন হওয়া দরকার সেই সম্পর্কে জানাবো ।

হাত-পায়ের যত্নে ও সৌন্দর্যচর্চায় মেহেদি

‘হলুদ বাটো মেন্দি বাটো বাটো ফুলের মৌ’ বাঙালি নারীর সৌন্দর্যচর্চায় অন্যান্য প্রাকৃতিক উপাদানের মতো মেহেদির ব্যবহারও সার্বজনীন । ঈদের দিনে বিশেষ সাজগোজের মধ্যে মেহেদি একটা বিশিষ্ট স্থান দখল করে আছে । আজকাল গ্রাম বা শহর- যেখানেই হোক, ঈদের দিনে হাত-পা মেহেদিরঞ্জিত না হলে যেন সাজটাই অপূর্ণ থেকে যায়।

হাত-পায়ের যত্নে ও সৌন্দর্যচর্চায় মেহেদি

সৌন্দর্যচর্চায় মেহেদির ব্যবহার আজ নতুন নয় । প্রাচীনকাল থেকেই এর ব্যবহার চলে আসছে । পাঁচ হাজার বছর আগে মিশরের মেয়েরা হাতে, পায়ে ও চুলে মেহেদি লাগাতো । এমনকি মৃত্যুর পর মমির চুল ও নখ মেহেদি দিয়ে রঞ্জিত করে দিতো । বাগদাদের খলিফাদের যুগে নারীর সৌন্দর্যচর্চার অন্যতম প্রধান উপকরণ ছিলো মেহেদি ।

উপমহাদেশে মেহেদির প্রচলন হয় মোঘল আমল থেকে । মোঘল রমণীদের সৌন্দর্যচর্চায় মেহেদির ভূমিকা ছিলো অনন্য । হাতে-পায়ে মেহেদির নকশী কাজ তখন থেকেই চালু হয় । সম্রাজ্ঞী নূরজাহান মেহেদির নকশী কাজ খুবই পছন্দ করতেন ।

মোঘল হেরেম থেকে রাজপুত নারীদের মধ্যে মেহেদির প্রচলন শুরু হয় । তারপর ক্রমান্বয়ে তা উপমহাদেশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে । আর এখন এর ব্যবহার করে না এমন মহিলার সংখ্যা খুবই কম ।

মেহেদি শুধু সৌন্দর্যবৃদ্ধির জন্যেই নয়, হাত-পায়ের ত্বকের জন্যেও অত্যন্ত উপকারী । মেহেদি পাতা ছাড়াও এর ফল-ফুল ও মূল বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে ব্যবহার করা হয় । এই ব্যাপক ব্যবহারের ফলে বিভিন্ন স্থানে এর পরিচিতি বিভিন্ন নামে । মেহেদি কোথাও মেদি, মেন্দি, কোথাও মৌকা, কোথাও মদয়ন্তিকা, আবার কোথাও গিরিমল্লিকা বা বনমল্লিকা নামে পরিচিত । মধ্য এশিয়ায় এটি পরিচিত ‘আল-খান্না’ নামে ।

আর আরবে পরিচিত ‘হেনা’ নামে । ইংরেজি হেনা (Henna) শব্দটি এসেছে আরবি হেন্না শব্দ থেকে । মেহেদির বোটানিকেল নাম হচ্ছে Lawsonia Inermis Linni । এটি Lythreaceae পরিবারের অন্তর্ভুক্ত ।

হাতে মেহেদি লাগানো কঠিন কাজ নয় । সাধারণভাবে আমাদের দেশের মেয়েরা গাছ থেকে প্রয়োজন মতো পাতা তুলে নিয়ে ডাটা বোঁটা ফেলে ধুয়ে শিলপাটায় মিহি করে বেটে নেয় । বাটা যত মিহি হবে পেস্ট তত সুন্দর, লাগানো তত সহজ এবং রং তত উজ্জ্বল হবে । অনেক সময় শহরে টাটকা মেহেদি পাতা যোগাড় করতে অসুবিধা । তাই আপনি ইচ্ছে করলে টাটকা পাতা রোদে শুকিয়ে গুঁড়ো করে চেলে শিশি ভরে কিংবা পলিথিন প্যাকে মুখ আটকে রেখে দিতে পারেন ।

আরো পড়ুন- কীভাবে স্টাইলিশ সাজবেন দেখুন

প্রয়োজনে একটু গরম জল দিয়ে পেস্টের মতো বানিয়ে হাতে-পায়ে নিজের ইচ্ছেমতো ডিজাইন করে নিতে পারেন । এছাড়া বাজারে আজকাল গুঁড়ো মেহেদি এবং লিকুইড মেহেদিও পাওয়া যায় । তা দিয়েও হাত রাঙাতে পারেন । তবে তাজা মেহেদির রঙের উজ্জ্বলতাই ভিন্ন ।

হাতে ডিজাইন করার ক্ষেত্রে সাধারণত মেয়েরা কাঠি, শলা, টুথপিক দিয়ে তুলে তুলে ডিজাইন করে থাকে । এতেও সুন্দর নকশা আঁকা যায় । তবে সময় বেশি লাগে । আজকাল কম সময়ে সূক্ষ্ম ডিজাইন করার জন্যে প্লাস্টিক কোণ ব্যবহার করা হয় । প্লাস্টিক কোণ বানানো এমন কঠিন কিছু নয় । আপনি নিচের ছবি দেখে অনায়াসে নিজেই এই কোণ বানাতে পারেন ।

মেহেদির পেস্ট বানানোর পদ্ধতি

1. শুধু পরিষ্কার কাঁচা পাতা মিহি করে বেটে নিতে পারেন ।

2. মিহি করে বাটা কাঁচা পাতার পেস্টের সাথে একটু বুর রস মিশিয়ে নিতে পারেন ।

3. কাঁচা পাতার পেস্টের সাথে চা বা কফির কড়া লিকার মেশাতে পারেন । এতে মেহেদির রং গাঢ় হয় ।

4. কাঁচা পাতার পেস্টের সাথে সামান্য পান খাওয়ার খয়ের মেশাতে পারেন । এতেও রং গাঢ় হবে ।

5. মেহেদি পাতার শুকনো গুঁড়ো হলে তা দিয়ে পেস্ট বানানোর জন্যে একটু গরম জলেতে মিশিয়ে একঘণ্টা রেখে দিতে হবে । তাহলেই পেস্ট ব্যবহারের উপযোগী হবে ।

6. গুঁড়ো পেস্টের সাথেও লেবুর রস , চা বা কফির লিকার বা খয়ের মেশাতে পারেন ।

7. পেস্টের ঘনত্ব ঠিক করার জন্যে প্রয়োজনমতো লেবুর রস ও একটু চিনি গোলানো জল পেস্টের সাথে মিশিয়ে নিতে পারেন ।

হাত-পায়ের যত্নে ও সৌন্দর্যচর্চায় মেহেদি

এভাবে পেস্ট বানিয়ে নিয়ে নিজের ইচ্ছেমতো ডিজাইন করে হাতে-পায়ে লাগিয়ে নিতে পারেন । মেহেদি লাগানোর পর যদি দেখেন উঠে যেতে চায় তাহলে লেবুর রস ও চিনি গোলা জল ভিন্ন পাত্রে নিয়ে তুলোতে ভিজিয়ে মেহেদির প্রলেপের ওপর আস্তে আস্তে চেপে চেপে দেবেন । এতে পেস্ট ঝরে পড়বে না ।

আরো পড়ুন- অলংকার বা গহনা কিভাবে পরলে আকর্ষণীয় দেখায়

দুই থেকে চার ঘণ্টা পর্যন্ত মেহেদি হাতে রাখা উচিত । পুরো মেহেদি শুকিয়ে যাবার পর ভোঁতা ছুরি কিংবা চামচ দিয়ে তুলে ফেলবেন । এবার খাঁটি সর্ষের তেল মেখে হাত দুটো চুলোর আগুনের কাছে ধরে দুই/তিন মিনিট সেঁকে নিন । খেয়াল রাখবেন সেঁকতে গিয়ে আবার হাত পুড়িয়ে না ফেলেন । রঙের ঔজ্জ্বল্য ও স্থায়িত্ব বৃদ্ধির জন্যে দুই/তিন ঘণ্টা জলেতে হাত ভেজাবেন না ।

সবশেষে মনে রাখবেন ধৈর্যের সঙ্গে সূক্ষ্ম ডিজাইনে মেহেদি লাগিয়ে অনায়াসেই আপনি আপনার শৈল্পিক মনের পরিচয় ফুটিয়ে তুলতে পারেন । হতে পারেন আকর্ষণীয় ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here