সৌন্দর্যচর্চায় পোশাক পরিচ্ছদ কেমন হওয়া দরকার এই নিয়ে আমরা সবাই কম বেশি চিন্তিত থাকি । সভ্য় সমাজে মানুষকে সামাজিক ভাবে আকর্ষণীয় দেখানোর জন্য ও আভিজাত্যের জন্য পোশাক পরিচ্ছদ কিভাবে পরলে আকর্ষণীয় দেখায় সেটি সবারই জানা খুব প্রয়োজন । তাই আমরা এখানে সৌন্দর্যচর্চায় পোশাক পরিচ্ছদ কেমন হওয়া দরকার সেই সম্পর্কে জানাবো ।
সৌন্দর্যচর্চায় পোশাক
সাজের সাথে পোশাকের বিরাট সম্পর্ক । তাই এবার জেনে নিন ঋতু ভেদে কী রকম পোশাক পরবেন ।
রূপচর্চা ও সাজগোজের পরই আসে পোশাক এবং অলংকার । তাই সময় এবং আচার-অনুষ্ঠানের পরিপ্রেক্ষিতে এটি নির্বাচনে যদি ভুল করেন, তাহলে যতই রূপচর্চা করুন না কেন, সুন্দরী হোন না কেন, পরিপূর্ণভাবে আপনাকে সুন্দরী বলা যাবে না । দেখতেও স্মার্ট লাগবে না । নিখুঁত প্রসাধনের সাথে সাথে সুরুচিপূর্ণ পোশাক এবং গহনার একটা সামঞ্জস্য না থাকলে আপনাকে লাবণ্যময়ী মনে হবে না ।
এটি একটি অন্যটির পরিপূরক । শুধু সাজলেই হবে না, আবার শুধু ভালো ভালো পোশাক পরলেই সুন্দর লাগবে না । সাজের সাথে মানানসই পোশাক যেমন দেহের সৌন্দর্য অপরূপ করে তোলে, ঠিক তার উল্টো হলে আপনার স্বাভাবিক সৌন্দর্যটুকুও দৃষ্টির অগোচরে চলে যেতে পারে । সে জন্যে সাজগোজের সাথে পোশাক নির্বাচন করাও একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ বলে মনে করবেন ।
নিখুঁত প্রসাধন, সঠিক হেয়ার স্টাইল করার সাথে সাথে মানানসই রুচিসম্মত পোশাক ও অলংকার মিলিয়েই পরিপূর্ণ সাজগোজ বলা যাবে ।
আধুনিক কালে বিভিন্ন ধরনের পোশাক আমাদের দেশের মেয়েরা পরলেও শাড়ি এখনও জনপ্রিয়তার দিক থেকে প্রথম স্থানে রয়েছে । শাড়িতে শারীরিক অনেক খুঁতই ঢাকা যায় । যেমন ধরুন, একজনের খুব মোটা পা কিংবা খুব মোটা হাত- এগুলো অনায়াসেই শাড়ির অন্তরালে ঢেকে দেয়া যায় । এগুলো সালোয়ার-কামিজ কিংবা প্যান্ট-শার্ট পরে লুকিয়ে রাখার উপায় নেই । শাড়ির যেমন তুলনা নেই তেমনি আবার তাড়াহুড়ো করে কর্মব্যস্ত একজন নারী কর্মক্ষেত্রের জন্যে অল্প সময়ের মধ্যে তৈরি হওয়ার প্রয়োজনে সালোয়ার কামিজেরও তুলনা হয় না । পোশাক নির্বাচনে প্রথমে আসা যাক শাড়ির কথায় ।
জেনে নিন কোথায় কখন কেমন শাড়ি পরা উচিত
সৌন্দর্যচর্চায় শাড়ি
প্রথমে বুঝতে হবে আপনার গায়ের রং, উচ্চতা, বয়স কী ধরনের আর কোথায় অর্থাৎ কী ধরনের সামাজিক অনুষ্ঠানে বা কর্মক্ষেত্রে আপনি যাবেন । এসব দিক খেয়াল রেখে আপনি শাড়ি নির্বাচন করবেন । শুধু শাড়ি নয়, যেকোনো পোশাকের ক্ষেত্রেই এটি চিন্তা করতে হবে ।
প্রথমেই আসা যাক রঙের কথায় । অনেকেই আছেন যাদের প্রায় সব রঙের শাড়িতেই মানিয়ে যায় । আবার অনেকে সুন্দর বা গায়ের রং ফর্সা হওয়া সত্ত্বেও সব রং তাদের মানায় না । আবার যারা সুদেহী তাদের সব শাড়িতেই মানায় । তবে চেহারার সঙ্গে মানানসই শাড়ি কেনাই বুদ্ধিমতীর কাজ । বাজারে বিভিন্ন ধরনের শাড়ি পাওয়া যায় । যেমন দামি শাড়ির মধ্যে কাতান বেনারশি বালুচরি সিল্ক জর্জেট শিফন ফুলভয়েল জামদানি টাঙ্গাইল ধনেখালি শান্তিপুরি মিরপুরি মাদ্রাজি মনিপুরি টিস্যু ইত্যাদি – আরও কত কী । মোট কথা শাড়ি বাছাই করবেন শরীরের গড়ন, বয়স এবং অনুষ্ঠান অনুসারে ।
উচ্চতা, গড়ন ও রং অনুসারে কেমন শাড়ি পরা উচিত
আরো পড়ুন- পারিবারিক শিষ্টাচার গুলি যা মানুষকে সুখী ও পরিতৃপ্ত করে
মানুষের উচ্চতা তিন ধরনের । লম্বা, মাঝারি, খাটো । তেমনি দেহের গড়নও তিন ধরনের । যেমন পাতলা, মাঝারি ও মোটা । গায়ের রং তিন ধরনের । ফর্সা, শ্যামলা ও কালো ।
উচ্চতা অনুসারে শাড়ি পছন্দের প্রক্রিয়া
লম্বা মেয়েরা যদি চওড়া পাড়ের শাড়ি পরেন তাহলে বেশ মানাবে । এতে লম্বা কিছুটা কম লাগবে । প্রিন্ট হলে বড় ধরনের প্রিন্ট পরতে বাধা নেই । শাড়ির কাজগুলো শাড়ির দৈর্ঘ্যের দিকে হলে ভালো । প্রস্থে হলে অর্থাৎ খাড়া হলে দেখতে আরও লম্বা লাগবে ।
মাঝারি উচ্চতার মেয়েদের মোটামুটি সব ধরনের পাড় ও প্রিন্টে মানায় । তবে প্রস্থে প্রিন্ট ও কাজ করা হলে একটু লম্বা বেশি মনে হবে । পাড় বেশি চওড়া না, আবার বেশি ছোট নয়- এমন হলে ভালো লাগবে ।
খাটো মেয়েদের পোশাক পরার ক্ষেত্রে বেশ বাছবিচার করে পরতে হয় । খাটো মেয়েরা কখনই বড় পাড়ের শাড়ি, বড় প্রিন্টের বা শাড়ির দৈর্ঘ্যমুখী কাজওয়ালা শাড়ি পরবেন না । এতে আরও খাটো লাগবে । এদের শাড়ির পাড় সরু হলে কিংবা পাড় ছাড়া হলে ভালো লাগবে । প্রিন্ট হলে ছোট প্রিন্টের শাড়িতে কাজ করা কিংবা প্রিন্ট প্রস্থে (খাড়া) হলে ভালো । তাতে লম্বা লাগবে । খাটো মেয়েরা ফোলা শাড়ি পরবেন না, এতেও খাটো লাগবে ।
গড়ন অনুসারে শাড়ি পছন্দের প্রক্রিয়া
মোটা গড়নের গোলগাল মেয়েরা অবশ্যই ফুলে থাকে এমন শাড়ি কিংবা খুব ভারী কাজের অর্থাৎ যেসব শাড়ির পুরো জমিনে কাজ ভর্তি -এমন শাড়ি পরবেন না । এতে আরো মোটা দেখাবে । মোটা গড়নের মেয়েরা শরীরের সাথে লেগে থাকে এমন শাড়ি নির্বাচন করবেন ।
বেশি গাঢ় রঙের শাড়ি পরলেও মোটা লাগবে । ভারী জরিপাড় ধরনের শাড়িতেও মোটা লাগবে । কাতান পরলে শুধু পাড়-আঁচলে কাজ করা বা মধ্যে হালকা ছিট ছিট কাজ করা শাড়ি পরুন । শিফন হলে কিছুটা ভারী কাজের পরতে পারেন । এ শাড়িগুলো শরীরে লেগে থাকে । টিস্যু, মসলিন, ফুলে থাকা শাড়ি মোটেই পরবেন না । মোট কথা নিজেকে বেশি মোটা লাগে- এমন শাড়ি কখনো পরা উচিত নয় ।
মাঝারি গড়নের মেয়েদের সব ধরনের শাড়িই মোটামুটি চলে । তবে বেশি ফুলে থাকে এমন শাড়ি, যেমন টিস্যু বা মসলিন পরলে স্বাস্থ্য ভারী মনে হবে । তারা মোটামুটি সব কাজের সব প্রিন্টের শাড়িই পরতে পারেন ।
পাতলা বা রোগা গড়নের মেয়েরা এমন শাড়ি পরবেন যা একটু ফুলে ফেঁপে থাকে । ভারী কাজের, গাঢ় রঙের সবই তারা পরতে পারেন, এতে স্বাস্থ্য একটু ভালো দেখাবে । শুধু শরীরের সাথে লেগে থাকে এমন শাড়ি ভুল করেও পরবেন না ।
আরো পড়ুন- পারিবারিক দায়িত্ব নিতে জানুন আপনার কি কি করণীয়
গায়ের রং অনুসারে শাড়ি পছন্দের প্রক্রিয়া
ফর্সা রঙের মেয়েদের গাঢ় রঙের চেয়ে হালকা রঙে বেশি মার্জিত লাগে । ফর্সারও ধরন আছে । সাদা ফর্সা, গোলাপি ফর্সা, হলদে ফর্সা । সাদা ফর্সাদের হালকা রঙের পোশাক বেশি ভালো লাগে । গাঢ় হালকার মিশ্রণেও ভালো মানায় । গোলাপি বা লালচে ফর্সাদের মাঝামাঝি গাঢ় রং কিংবা হালকা দুটোই মানায় । হলদে ফর্সাদের সব রং-ই মানায় । তাদের পাড় গাঢ় রঙের এবং জমিনে হালকা রং-এসব শাড়ি মানাবে ।
হালকা গোলাপি, হালকা বেগুনি, সী গ্রীন, মস গ্রীন, ফিরোজাসহ নানা ধরনের হালকা রঙের জমিনে গাঢ় কাজ করা ইত্যাদি শাড়ি পরতে পারেন । রাতে বিয়ে বাড়িতে অথবা জমকালো কোনো অনুষ্ঠানে ভারী রঙের শাড়ি পরতে পারেন । অলংকার পরুন সোনালি কাজের শাড়ি হলে সোনার কিংবা ইমিটেশনে সোনার রং অথবা শাড়ির সাথে ম্যাচ করে সে রঙের পাথরের গহনা । তবে রূপালি রঙের কাজের সাথে সোনালি গহনা পরবেন না । এতে বেমানান মনে হবে । সোনালি বা রূপালি- কোনো কাজই নেই -এমন শাড়ি হলে অক্সিডাইস গহনাও পরতে পারেন ম্যাচ করে ।
শ্যামলা রঙের মেয়েদের জন্যে বাসন্তি, হলুদ, ডিমের কুসুম হলুদ, হালকা কমলা, মেরুন, সাদার সাথে লালের কম্বিনেশন পাড়, হালকা সবুজ- অর্থাৎ আপনার গায়ে ধরে দেখুন, মাথায় কাপড় ঘুরিয়ে ঘোমটা টেনে আয়নায় দেখে নিন – কী ধরনের রঙে আপনাকে উজ্জ্বল লাগে – সে ধরনের শাড়ি বেছে নিন ।
কালচে বেগুনি অর্থাৎ ঘন গাঢ় বেগুনি, নীল, গাঢ় ঘন কালচে সবুজ ইত্যাদি রং পরলে গায়ের রং আরও ময়লা লাগবে । তবে কালচে ব্লুতে (নেভি ব্লু) শ্যামলাদের ভালো লাগে । অনুষ্ঠানে বা পার্টিতে মেরুন রঙের মধ্যে সোনালি পাড় কাজ, নেভী ব্লু- তে জমকালো কাজ, মাস্টার ইয়েলো ইত্যাদি শাড়ি রাতের অনুষ্ঠানে পরতে পারেন ।
কালো মেয়েদের জন্যে রং বাছাই করা খুব মুশকিল । তবে ফিগার, চেহারা আকর্ষণীয় হলে শ্যামলা মেয়েদের যা পরলে ভালো দেখায় তাদেরও সে রং ভালো লাগবে । তবে কখনো কটকটে লাল রং পরবেন না । এটা দৃষ্টিকটু লাগবে ।
এছাড়া আজকাল নানা শেডের শাড়ি বেরিয়েছে । যে শাড়ি পরলে আপনাকে মানানসই মনে হবে সেটাই পরতে পারেন ।
অলংকার সোনা, রূপা, অক্সিডাইস (কালো), অক্সিডাইস (তামাটে) ইত্যাদি যা-ই পরুন না কেন শাড়ির সাথে কিংবা সালোয়ার-কামিজের সাথে মানানসই হতে হবে ।
সালোয়ার-কামিজ যারা পরেন তারাও মোটা, পাতলা, মাঝারি সম্পর্কে উল্লিখিত বিষয়গুলো অনুসরণ করুন । অর্থাৎ মোটা গড়নের মহিলারা ফুলে থাকে এমন মচমচে কাপড়ের সালোয়ার-কামিজ পরবেন না ।
পাতলা গড়নের মহিলারা লেগে থাকে এমন কাপড়ের সালোয়ার-কামিজ পরবেন না । একটু ভারী ধরনের ফোলা কাপড় পরুন ।
মাঝারি গড়নের মহিলারা সব ধরনের কাপড় পরতে পারলেও বেশি ফুলে থাকে- এমন সালোয়ার-কামিজ পরবেন না ।