Johannes Kepler Biography In Bengali – যোহান কেপলার জীবনী

Johannes Kepler Biography In Bengali – যোহান কেপলার জীবনী
Johannes Kepler Biography In Bengali – যোহান কেপলার জীবনী

Johannes Kepler Biography In Bengali – যোহান কেপলার জীবনী: আজ আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি মহান ব্যক্তিদের জীবনী সমগ্র। মহান ব্যক্তি আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা। তাঁদের জীবনের ক্ষুদ্রতম অংশগুলি আমাদের জন্য শিক্ষামূলক হতে পারে।

Johannes Kepler Biography In Bengali – যোহান কেপলার জীবনী

বর্তমানে আমরা এই মহান ব্যক্তিদের ভুলতে বসেছি। যাঁরা যুগ যুগ ধরে তাদের কর্ম ও খ্যাতির মধ্য দিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন এবং জ্ঞান, বিজ্ঞান, শিল্প ও সাহিত্যের জগতে এক অনন্য অবদান রেখেছেন এবং তাঁদের শ্রেষ্ঠ গুণাবলী, চরিত্র দ্বারা দেশ ও জাতির গৌরব বৃদ্ধি করেছেন। সেইসব মহান ব্যক্তিদের মধ্যে অন্যতম বিজ্ঞানী যোহান কেপলার (Johannes Kepler) -এর সমগ্র জীবনী সম্পর্কে এখানে জানব।

জোহানেস কেপলার জীবনী – Johannes Kepler Biography in Bengali

নামজোহানেস কেপলার
জন্ম27 ডিসেম্বর 1571
পিতাহেনরিক কেপলার
মাতাক্যাথারিনা কেপলার
জন্মস্থানস্টুটগার্ট ভাইল ডেআ স্টাট ফ্রি ইম্পেরিয়াল সিটি, হলি রোমান এম্পায়ার (বর্তমানে জার্মানির স্টুটগার্ট)
জাতীয়তাজার্মান
পেশাগণিতবিদ, জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও জ্যোতিষী
মৃত্যু15 নভেম্বর 1630 (বয়স 58)

জোহানেস কেপলার কে ছিলেন? Who is Johannes Kepler?

মানব ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ে বিজ্ঞানের নানা প্রতিভা পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়ে প্রচলিত অন্ধ সংস্কার ও ধ্যানধারণাকে পাল্টে দিয়ে সভ্যতাকে সত্যের আলোয় উদ্ভাসিত করেছেন।

প্রকৃতপক্ষে আমাদেব বর্তমান সভ্যতা সংস্কৃতির যা কিছু তা এই বিজ্ঞানী ও চিন্তাবিদ মানুষদেরই অবদান।

তাঁদের অক্লান্ত ও নিঃস্বার্থ পরিশ্রম ও নিষ্ঠায় গড়ে উঠেছে সভ্যতার বনিয়াদ, বিজ্ঞান হয়েছে সুগঠিত।

বিশ্বের বিজ্ঞান – নির্মাণের অন্যতম বিশিষ্ট স্থপতি হলেন যোহান কেপলার। জ্যোতির্বিজ্ঞানে তাঁর অবদান বিশ্ববন্দিত।

বিজ্ঞান-অবিজ্ঞানের আশ্চর্য এক সহাবস্থান লক্ষ করা যায় তাঁর জীবনে। দূরবীন নিয়ে মহাকাশের রহস্য সন্ধান করেছেন, কঠিন কঠিন অঙ্ক কষে দুরূহ সমস্যার সমাধান করেছেন। আবার এই যুক্তিবাদী মানুষই ভুতুড়ে ব্যাপারস্যাপার নিয়েও ছুটোছুটি করেছেন, মানুষের ভাগ্য বিচারের জন্য জ্যোতিষের ছক কেটে হিসেব নিকেশ করেছেন।

জোহানেস কেপলার এর জন্ম: Johannes Kepler’s Birthday

জন্ম হয়েছিল ১৫৭১ খ্রিঃ জার্মানীর দক্ষিণ – পশ্চিমের শহর উইল – এ। যে পরিবারে তিনি জন্মেছিলেন বংশানুক্রমে তাদের পেশা ছিল ডাইনিবিদ্যা। পরিবেশ ছিল কুসংস্কার আর অন্ধবিশ্বাসের অন্ধকারে স্যাঁতসেতে।

জোহানেস কেপলার এর পিতামাতা ও জন্মস্থান: Johannes Kepler’s Parents And Birth Place

কেপলারের পিতা পিতামহ ছিলেন কুখ্যাত ডাইন। মানুষের অজ্ঞতা অন্ধবিশ্বাসই ছিল তাদের জীবিকার মূলধন।

তুকতাক আর জড়িবুটির ভাঁওতায় কত অসংখ্য লোকের যে তারা সর্বনাশ করেছিলেন তার কোন হিসেব ছিল না। অভিশাপের পাহাড়ে বসে তাঁরা নির্বিচারে নিজেদের পৈশাচিক ক্রিয়াকর্ম করে গেছেন।

মহাবিজ্ঞানী কেপলার এই নারকীয় পরিবেশে যাদুবিদ্যার বিষাক্ত রক্ত শরীরে নিয়েই জন্মেছিলেন।

কিন্তু আশ্চর্য এই যে তিনি তাঁর পরিবারের মধ্যে ছিলেন মস্ত ব্যতিক্রম। নারকীয় পারিবারিক আবহাওয়ার প্রভাব থেকে বেরিয়ে যুক্তিবাদী মন নিয়ে বিজ্ঞানের উদার আকাশে মুক্ত বিহঙ্গের মত তিনি আলোর গানে জগৎ মুখরিত করেছেন।

প্রকৃতির রাজ্যে এ যে এক অত্যদ্ভুত ব্যতিক্রম তাতে সন্দেহ নেই।

দুঃখ-দুর্দশা আর রোগভোগের স্থায়ী আবাসস্থল ছিল কেপলারের পরিবার। সেখানে তিনিও ছেলেবেলায় অসংখ্য রোগে ভুগেছেন। ফলে শরীর ছিল রুগ্ন ও দুর্বল৷

মাত্র চার বছর বয়সেই গুটি বসন্তে আক্রান্ত হয়ে প্রায় মরণাপন্ন হয়েছিলেন। সম্ভবতঃ ভবিষ্যতে তাঁকে দিয়ে অনেক বড় কাজ করানো হবে বলেই ভাগ্য তাঁকে সে যাত্রা বাঁচিয়ে দিয়েছিল।

এই অস্বাভাবিক রোগমুক্তির পর থেকেই অদ্ভুত পরিবর্তন এল কেপলারের জীবনে। যেন তার নবজন্ম হল।

জোহানেস কেপলার এর শিক্ষাজীবন: Johannes Kepler’s Educational Life

পরিবারের অভিভাবকদের ধাতে যার রেশ ছিল না বিন্দুমাত্র, লেখাপড়া ও বিদ্যা লাভের আগ্রহ ও উৎসাহ দেখা দিল তার মধ্যে।

সেই সময়ে শিশুশিক্ষা প্রসারের উদ্দেশ্যে আরটেমবারগের ডিউক বিভিন্ন স্থানে স্কুল খুলেছিলেন। এইসব স্কুলে প্রধানত শেখানো হত ধর্মচর্চা। সেই সঙ্গে বিজ্ঞান চর্চার পাঠও থাকত কিছু।

কেপলার বাড়ির কাউকে কিছু না জানিয়ে নিজেই একদিন ডিউকের এক স্কুলে গিয়ে নাম লেখালেন৷

ডাইণী – বাড়ির অন্ধকার গহ্বর থেকে সেই প্রথম মহাবিশ্বের মুক্ত আলোকে একজনের পদার্পণ ঘটল। ডিউকের এই স্কুলেই কেপলারের নতুন মনে নতুন স্বপ্ন সাধের জন্ম হয়েছিল। প্রকৃতির রহস্যকে তিনি দেখতে শিখেছিলেন অনুসন্ধিৎসা নিয়ে।

প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করে কুড়ি বছর বয়সে কেপলার টুবিনজেন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন।

জোহানেস কেপলার এর কর্ম জীবন: Johannes Kepler’s Work Life

এখানেই এক অধ্যাপক তাঁকে কোপারনিকাসের জ্যোতির্বিজ্ঞান সম্পর্কিত মতবাদের সঙ্গে পরিচিত করিয়ে দেন।

সেই সময়ে কোপারনিকাসের মতবাদ ছিল আইনত নিষিদ্ধ। টলেমির ভ্রাক্ত মতবাদই ছিল সরকার – স্বীকৃত।

‘মহাকাশে সূর্যকে কেন্দ্র করেই সবকিছু ঘোরে, এমন কি পৃথিবীও’ কোপারনিকাসের এই কথার সমর্থন বাইবেলে নেই কাজেই তা ধর্মবিরুদ্ধ, তাই নিষিদ্ধ।

টলেমিস্বীকৃত বাইবেলের ধারণা হল, পৃথিবী স্থির, সূর্য সহ সব কিছুই তার চারদিকে ঘোরে।

কেপলারের মনে গোপন বাসনা ছিল ভবিষ্যৎ জীবনে তিনি যাজকবৃত্তি গ্রহণ করবেন। তাই কোপারনিকাসের মতবাদ জেনেও তা নিয়ে তিনি বিশেষ মাথা ঘামাতে চাননি।

কিন্তু পরবর্তীকালে এক অজানা কারণে তিনি তার মত পরিবর্তন করেন। স্থির করেন পাদ্রী নয়, ভবিষ্যতে তিনি হবেন শিক্ষক।

অনুমান করা হয়, সেই অধ্যাপকের প্রভাবেই তাঁর চিন্তাজগতে নিঃশব্দে এই পরিবর্তন ঘটে গিয়েছিল।

টুবিনজেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়া শেষ করে সৌভাগ্যবশতঃ শিক্ষকতার চাকরিই জুটে গেল তাঁর।

অস্ট্রিয়ার স্ট্রাইরিয়া প্রদেশের রাজধানী গ্রাজ শহরের একটি কলেজে জ্যোতির্বিদ্যা ও গণিতশাস্ত্রের শিক্ষকের পদে নিযুক্ত হলেন তিনি।

জোহানেস কেপলার এর রচনা: Written by Johannes Kepler

এই কলেজে পড়াবার সময়েই পঁচিশ বছর বয়সে প্রথম বই লিখলেন কেপলার। প্রকাশিত হল The History of the Universe ।

এই গ্রন্থে তিনি লেখেন, ঈশ্বরের সৃষ্ট এই বিশ্বসৃষ্টির মূল রহস্য তিনি অধিগত করে ফেলেছেন।

সেই সময় পর্যন্ত বৃহস্পতি, শনি, মঙ্গল, পৃথিবী, বুধ ও শুক্র – মাত্র এই ছটি গ্রহ আবিষ্কৃত হয়েছিল। কেপলার তাঁর পক্ষে সম্পূর্ণ স্বাভাবিক যৌবনোচিত উচ্ছ্বাস এবং উদ্দীপনার সঙ্গে ঘোষণা করলেন, ত্রিমাত্রিক মহাকাশে মাত্র পাঁচটা সঠিক ঘনবস্তুই গঠন করা যায় এবং ঐ পাঁচটা ঘনবস্তুই ঠিক ঠিক ভাবে খাপে খাপে বসানো যায়।

দারুণ আবেগ এবং উদ্দীপনার সঙ্গে কেপলার তার নবাবিষ্কৃত তত্ত্বটির কথা যাঁদের জানালেন তাঁদের মধ্যে দুজন হলেন দুই জ্যোতির্বিদ গ্যালিলিও এবং টাইকো ব্রাহে।

তরুণ বিজ্ঞানীর গবেষণাকার্যের ধরন দেখে এই দুই বিজ্ঞানী খুশি হয়ে তার সঙ্গে যোগাযোগ করলেন।

বইয়ের বক্তৃতা এবং কেপলারের চিন্তার প্রবণতার মধ্যে ধর্মবিরোধী মনোভাবের আঁচ পেয়ে পাদ্রীসমাজে উষ্মা ছড়িয়ে পড়তে লাগল।

বিপদের গন্ধ পেয়ে কেপলার আগেভাগে শহর ছেড়ে পালিয়ে যান। সৌভাগ্যবশতঃ সেইসময় ব্রাহে তাঁকে সহকারী হিসেবে মনোনীত করলেন।

ব্রাহে এবং কেপলার দুজনেরই জ্যোতির্বিজ্ঞানের প্রতি প্রচন্ড আগ্রহ ছিল। তাদের বিশ্বাস ছিল সুদূর আকাশের গ্রহ নক্ষত্ররাই মানুষের প্রকৃতি এবং ভবিষ্যৎ নিয়ন্ত্রণ করে। বাস্তবিকপক্ষে, কেপলার ছিলেন প্রকৃতি ও প্রকৃতির সৌন্দর্যের উপাসক।

এ বিষয়ে তিনি নিজেই লিখেছেন, ‘মহাজাগতিক সুসমঞ্জস দৃশ্যগুলি দেখে আমি চরম পুলক অনুভব করি প্রতি মুহূর্তেই ‘। ব্রাহের সঙ্গে যোগযোগের প্রসঙ্গে তার অভিমত, ঈশ্বরই এই কাজ করেছেন এবং ঈশ্বরের নির্দেশেই তারা পরিচালিত হচ্ছেন।

বাস্তবিক পক্ষে, কেপলারের সঙ্গে ব্রাহের জীবন যেরূপ ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত হয়ে গিয়েছিল তাতে মনে হতো ঈশ্বরের একটি বিশেষ ইচ্ছা পূরণের জন্যই তাঁরা দুজনে পৃথিবীতে এসেছেন।

কেপলারের সবচেয়ে দুঃখের দিনগুলোতে পরম সহায়রূপে পাশে পাশে থেকেছেন ব্রাহে। তাকে ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্য দিয়েছেন, উৎসাহ দিয়েছেন।

১৬০১ খ্রিঃ ব্রাহের মৃত্যু হলে কেপলার তার জীবনের শ্রেষ্ঠ বন্ধু, পথপ্রদর্শককে হারান।

কিন্তু এর পরেই কেপলারের ভাগ্য খুলে যায়। তিনি সম্রাট দ্বিতীয় রুডলফের রাজসভায় শ্রেষ্ঠ গণিতবিদ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেন।

গণিতবিদ হিসেবে রাজসভায় কেপলারের কাজ ছিল দুটি। একদিকে তিনি সম্রাট ও তার সভাসদদের কোষ্ঠী ঠিকুজি তৈরি করতেন। অন্যদিকে অঙ্ক ও জ্যোতির্বিজ্ঞানের দুরূহতম প্রশ্নগুলির সমাধান করতেন।

রাজসভায় দিনে দিনে তার প্রভাব ও প্রতিপত্তি বৃদ্ধি পেতে থাকে।

সঙ্গী ও ১৬০৫ খ্রিঃ কেপলার তার নতুন গ্রন্থ New Astronomy প্রকাশ করেন। প্রকৃতপক্ষে এই গ্রন্থটিকেই জ্যোতির্বিজ্ঞানের প্রথম বই হিসেবে অভিহিত করা যায়।

এই গ্রন্থেই তিনি প্রথম উল্লেখ করেন প্রতিটি গ্রহ সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে চলেছে। কেপলার এই গ্রন্থে যে দুটি যুগান্তকারী সূত্রের কথা বলেছেন সেগুলো হল:

প্রথম সূত্র- প্রত্যেক গ্রহই ডিম্বাকৃতি পথে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে। ডিমের মত কক্ষপথে সূর্যের অবস্থান কোথায় ? না তার নাভিতে। ইংরাজিতে বলে ফোকাস।

এই সূত্রে কেপলার কক্ষপথে আবর্তনশীল গ্রহের অনিয়মিত গতিবেগকে দেখিয়েছেন।

দ্বিতীয় সূত্র- সূর্যের কেন্দ্র থেকে যদি কোনও গ্রহের কেন্দ্র একটা কাল্পনিক রেখা, যাকে বলে ইমাজিনারি লাইন টানা যায় তবে তা সবসময়েই সমান ক্ষেত্রফলকে সূচিত করবে।

এর দ্বারা কেপলার বোঝাতে চেয়েছেন যে গ্রহগুলো সূর্যের যত কাছে আসবে ততই তাদের গতিবেগ বাড়বে।

এই দুটি সূত্র ছাড়াও পরবর্তীকালে আরও একটি সুত্র কেপলার যোগ করেছেন। সেটি হল, যে কোন গ্রহ তার কক্ষপথে সূর্যকে একপাক ঘুরে আসার জন্য সময়ের যে দৈর্ঘ্য তৈরি করে তার নাম পর্যায়।

যে কোন দুইটি গ্রহের পর্যায়ের বর্গ সূর্য থেকে তাদের মধ্যবর্তী দূরত্বের ঘনফলের সমানুপাতিক।

১৬১৯ খ্রিঃকেপলার World Harmony নামে আর একটি গ্রন্থ প্রকাশ করেন। এই গ্রন্থে তিনি তাঁর জ্যোতির্বিজ্ঞান – সংক্রান্ত তৃতীয় সূত্রটি লিপিবদ্ধ করেছিলেন।

এই তিনটি সূত্রকে সৌরবিজ্ঞানের মাইলস্টোন বলা হয়ে থাকে।

বস্তুতঃ তিনি তার এই সূত্রের মাধ্যমে সৌরবিজ্ঞানকে ধর্মীয় প্রভাব থেকে মুক্ত করে এনেছেন।

বস্তুমুখী পদার্থবিজ্ঞানের সঙ্গে সৌরবিজ্ঞানের যে যোগ আছে তা তিনি সর্বপ্রথম দেখিয়ে দেন ৷

সৌর-সংসারকে ঘিরে যে গল্পগুজব আর কল্পপুরাণের জন্ম হয়েছিল, কেপলার একথায় সেগুলোকে নস্যাৎ করে দিলেন।

কেপলারের সূত্রগুলিই পৃথিবীর মানুষকে জ্যোতির্বিজ্ঞান সম্বন্ধে সঠিক জ্ঞান লাভে সাহায্য করে।

সূত্রগুলো কেপলারের মাথায় এসেছিল কিন্তু তিনি এগুলোর কোন গাণিতিক সূত্র দিতে পারেননি।

তবু এসব অত্যদ্ভুত কাজকর্মের জন্য আজও তিনি বিজ্ঞান – জগতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মনীষীরূপে পরিচিত হয়ে আসছেন।

কেপলার তার দ্বিতীয় গ্রন্থটি উৎসর্গ করেন ইংলন্ডের রাজা প্রথম জেমসের নামে। জেমস এই কারণে কেপলারকে ইংলন্ডে আমন্ত্রণ জানান।

কিন্তু কেপলার জার্মানী ছেড়ে ইংলন্ডে যেতে অস্বীকার করেন। যদিও জার্মানীর অর্থনৈতিক অবস্থা তখন খুবই শোচনীয়। ত্রিশ বর্ষব্যাপী যুদ্ধে নেমে তার খুবই নাজেহাল অবস্থা।

গ্যালিলিও এবং কেপলারের মধ্যে পারস্পরিক দেখা সাক্ষাৎ কখনও হয়নি। কিন্তু উভয়ের মধ্যে একটা চমৎকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল।

গ্যালিলিও অবশ্য কোপারনিকাসের তত্ত্বসংক্রান্ত তার গ্রন্থটিতে কেপলারের সূত্রগুলির কোন উল্লেখই করেননি।

হয়তো তিনি মনে করেছিলেন কেপলারের সূত্রগুলি অবাস্তব এবংকল্পনাবিলাসের ফল।

কেপলার কোষ্ঠী-ঠিকুজিতে বিশ্বাস করতেন। কিন্তু গ্যালিলিওর সেই বিশ্বাস ছিল না। হয়তো সেই কারণেই গ্যালিলিও এমন একটা ধারণা করেছিলেন।

১৬১০ খ্রিস্টাব্দেই উভয়ের মধ্যে সম্পর্ক ছিন্ন হয়। এরপর পরস্পরের মধ্যে আর কখনো যোগাযোগ ঘটেনি।

তবে গ্যালিলিও যখন দূরবীক্ষণ যন্ত্র আবিষ্কার করেন তখন তিনি কয়েকজন বিজ্ঞানীর কাছে যন্ত্রটি পাঠিয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে কেপলারও ছিলেন।

গ্যালিলিওর পাঠানো সেই দূরবীক্ষণ যন্ত্র দিয়েই কেপলার বৃহস্পতি গ্রহের উপগ্রহগুলিকে সর্বপ্রথম প্রত্যক্ষ করেন।

স্বচক্ষে দেখার আগে পর্যন্ত তিনি বিশ্বাসই করতেন না বৃহস্পতির কোন উপগ্রহ থাকতে পারে।

উপগ্রহগুলির একটি প্রতিশব্দ এর পরই কেপলার বের করেন। তাঁর ব্যবহৃত ‘ স্যাটেলাইট ’ আজও পর্যন্ত প্রচলিত রয়েছে।

এরপরে কেপলার শুরু করেন দূরবীক্ষণ নিয়ে ভাবনা চিন্তা। আলোকতরঙ্গগুলিকে লেন্স কিভাবে প্রতিসরিত করে এবং টেলিস্কোপ ও মানুষের চক্ষু কিভাবে কাজ করে, আমাদের কোন জিনিস দেখতে সাহায্য করে তার পরিপূর্ণ ব্যাখ্যা দিতে সক্ষম হন।

গ্যালিলিও তার টেলিস্কোপটি তৈরি করেছিলেন একটি উত্তল ও একটি অবতল লেন্সের সাহায্যে। কেপলার দুটি উত্তল লেন্স ব্যবহার করে আরও উন্নত ধরনের টেলিস্কোপ আবিষ্কার করেন।

Johannes Kepler Discoveries : যোহান কেপলার আবিষ্কার

আলোকবিজ্ঞান তথা দূরবীক্ষণ সংক্রান্ত তাঁর গবেষণা সে যুগে বিজ্ঞানের অগ্রগতিকে প্রভূত সাহায্য করেছিল।

প্যারাবোলা শ্রেণীর আয়না সমান্তরাল আলোকরশ্মি প্রতিফলিত করে। একথাও তিনিই প্রথম গবেষণার মাধ্যমে প্রমাণ করেন। তাঁর এই আবিষ্কারকে ভিত্তি করেই প্রায় একশো বছর পরে বিজ্ঞানী নিউটন প্রতিফলন দূরবীক্ষণ যন্ত্র উদ্ভাবনে সক্ষম হন।

এভাবে কেপলার শুধু জ্যোতির্বিজ্ঞানের নয়, আধুনিক আলোকবিজ্ঞানের ভিত্তি স্থাপন করেন।

অবশ্য আলোক প্রতিসরণের কোন সূত্র তিনি দিয়ে যেতে পারেননি। পরবর্তীকালে সেই কাজটি করেছিলেন তরুণ বিজ্ঞানী ইয়েল।

১৬১২ খ্রিঃ সম্রাট দ্বিতীয় রুডলফ মারা যান। নতুন সম্রাট হন ম্যাথিয়াস। নতুন সম্রাট তার রাজসভাতেও কেপলারকে রাখলেন কিন্তু যথোপযুক্তভাবে সময়মত বৃত্তি দিতে পারেননি।

১৬২০ খ্রিঃ কেপলারের মাতার মৃত্যু হয়। এই মৃত্যু ছিল খুবই দুঃখজনক। ডাইনিবৃত্তির অভিযোগে ভদ্রমহিলাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। অবশ্য কেপলারের জন্য তাঁকে কোনরূপ শাস্তি ভোগ করতে হয়নি। তবে যথেষ্ট যাতনা ভোগ করে তাঁকে মরতে হয়েছিল।

ইতিমধ্যে কেপলার প্রায় তিন বছর গভীরভাবে ব্রাহের পর্যবেক্ষণ এবং তার নিজস্ব উপবৃত্ত তত্ত্বকে মিলিয়ে একটি সূত্র আবিষ্কারের চেষ্টা করেন এবং অবশেষে গ্রহগুলির পরিভ্রমণ সম্বন্ধীয় নতুন একটি সারণী প্রকাশ করতে সমর্থ হন। এইসব গাণিতিক সমস্যা সমাধানের জন্য তিনি নেপিয়ার কর্তৃক সদ্য আবিষ্কৃত লগারিদম সারণী (Logarithmic table) ব্যবহার করেন।

বস্তুতপক্ষে, আবিষ্কারের পর লগারিদম সারণীকে সেই প্রথম একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যবহার করা হল।

জোহানেস কেপলার এর বিবাহ জীবন ও পরিবার: Johannes Kepler’s Marriage Life And Family

আশ্চর্য যে, ঠিক সেই সময়টাতেই কেপলারের সংসারে প্রচন্ড অসুবিধা চলে ছিল। স্ত্রী ও তেরোটি সন্তানের এক বিরাট সংসার নিয়ে প্রচন্ড আর্থিক সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েছিল তাঁকে।

জার্মানীর রাজনৈতিক এবং আর্থিক অবস্থাও তখন প্রচন্ড সংকটের মধ্য দিয়ে চলছিল। যুদ্ধ এবং ধর্ম সংক্রান্ত ব্যাপার নিয়ে দেশের আবহাওয়াও বিশৃঙ্খল হয়ে পড়েছিল।

কিন্তু অক্লান্তকর্মা বরেণ্য এই বিজ্ঞানী সব বাধাবিপত্তি অতিক্রম করে ১৬২৭ খ্রিঃ সারণীটি প্রকাশ করেন।

সারণীটি পরম শ্রদ্ধাস্পদ টাইকো ব্রাহের স্মৃতির উদ্দেশ্যে উৎসর্গীত হয়েছিল। এককালের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কও পৃষ্ঠপোষকতার কথা স্মরণে রেখে তিনি এই সারণীর নাম দেন Rudalphine Table ।

নিরলস বিজ্ঞান তাপস কেপলারের বিজ্ঞান সাধনা এর পরেও অব্যাহত ছিল। সূর্যের দিকে শুক্র এবং বুধের গতিপথ নিয়েও তিনি গবেষণা করেন।

এই গবেষণা তৎকালীন সময়ে অবশ্য বিশেষ স্বীকৃতি পায়নি। কিন্তু তার মৃত্যুর পর বিজ্ঞানী গ্যামেন্দি লক্ষ্য করেন, কেপলারের গণনা এবং মতামত দুই-ই নির্ভুল ছিল।

চাঁদের আকর্ষণে যে নদীতে জোয়ার ভাটা খেলে এই কথাও কেপলারই প্রথম জানিয়েছিলেন।

জোহানেস কেপলার এর মৃত্যু: Johannes Kepler’s Death

১৬৩০ খ্রিঃ বরেণ্য বিজ্ঞানী কেপলারের কর্মময় জীবনের অবসান ঘটে। রোজেনবার্গে তার মরদেহ সমাহিত করা হয়।

আরও পড়ুন-

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here