পড়াশোনায় মনোযোগ বৃদ্ধির বিজ্ঞানসম্মত কার্যকরি উপায়: মন দিয়ে লেখাপড়া করতে আমরা কে না চাই ? কিন্তু কেন চাই, তা কী কখনও জিজ্ঞেস করেছি নিজেকে ? মা’র লাগাতার বকবক বন্ধ করার জন্য পড়তে চাই, কিংবা ক্লাসে সবচেয়ে ভাল দেখতে মেয়েটির মনোযোগ আকর্ষণ করার জন্য পড়তে চাই, নাকি পাড়ার অহঙ্কারী পিন্টুদার মতো ঝটপট চাকরি, বিদেশযাত্রা, সুন্দর বাড়ি আর মস্ত বিলিতি গাড়ি চাই বলে পড়তে চাই ? সবক’টা কারণই গ্রহণযোগ্য, মোটিভেশন হিসেবে ফেলনা নয় কোনওটাই ।
পড়াশোনায় মনোযোগ বৃদ্ধির বিজ্ঞানসম্মত কার্যকরি উপায় – Free Tips
কিন্তু মুশকিল হল, কোনও কারণে যদি এই কারণগুলো গৌণ হয়ে যায় তোমার জীবনে, তখন পড়াশোনা করবে কীভাবে ? ধরো, যদি মা’র বকবক হঠাৎ কোনও অজানা কারণে বন্ধ হয়ে যায়, সুন্দরী মেয়েটি ট্রান্সফার নিয়ে চলে যায় অন্য স্কুলে, কিংবা রিসেশনের ধাক্কায় পিন্টুদা মুখ চুন করে চাকরি নেয় কাছাকাছি অফিস-পাড়ায় ? সেই জন্য লেখাপড়াকে ভালবাসা দরকার । পৃথিবীর সব বিষয় ভালবেসে পড়া যায় না ঠিকই, কিন্তু কোনও না-কোনও একটা সাবজেক্ট আমাদের সকলেরই অন্তত একটু ভাল লাগতে বাধ্য ।
অবাধ্য মনকে বশে আনার টিপ্স – Free Tips
পরীক্ষার আগের শেষ ক’টা দিন মুখ ডুবিয়ে, উদ্ভ্রান্তের মতো পড়ার চেয়ে ঢের ভাল সারাবছর ধরে রোজ মোটে দু’ঘণ্টা করে পড়া ।
ঠান্ডা মাথায় ভেবে দ্যাখো, চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে যেখানে সাত-আট ঘণ্টা শুধু ঘুমিয়েই কাটে, সেখানে দু’ঘণ্টা এমন কী সময় ? রোজ যদি পড়ার বইগুলো একবার অন্তত দেখতে পাও, তা হলে ওদের সঙ্গে একটু চেনাজানা হয়ে যাবে । যাদের রোজ দেখি, তাদের প্রতি এমনিতেই আমাদের মায়া পড়ে যায়, বইগুলোও তার ব্যতিক্রম নয় ।
একদম গোড়াতেই লেখাপড়াকে ভালবাসার কথা বলেছিলাম না ? শুনতে যতই আহ্লাদিমার্কা লাগুক, পড়াশোনাকে মনে-মনে ভালবেসে ফেলতে পারলে তোমারই লাভ, যাকে বলে good investment ।
পড়ার সময়টা খুব ভাল করে প্ল্যান করবে । হাটের মাঝখানে পড়ার কনসেপ্টটা সকলের জন্য নয় । সুতরাং চেষ্টা করো এমন একটা জায়গা বেছে নিতে, যেখানে ইচ্ছেমতো কেউ ঢুকে পড়বে না, গাঁকগাঁক করে টেলিভিশন চলবে না, দশবার টেলিফোন বাজবে না ।
পড়তে-পড়তে মন যতই উড়ুউড়ু হোক না কেন, টেবিল ছেড়ে উঠবে না । অঙ্ক করতে-করতে ক্লান্ত হয়ে গেলে, ভূগোলের ম্যাপ নিয়ে বসে পড়ো । কিন্তু ভাল লাগছে না বলে, টিভির সামনে বসে পড়বে না ।
যে অবাধ্য পড়া কিছুতেই মুখস্থ হচ্ছে না, তার মোক্ষম দাওয়াই হল ছবি আঁকা । একটা জুতসই চার্ট কিংবা নানা রঙে রাঙানো রঙিন ম্যাপ মনের মধ্যে একবার গেঁথে গেলে, ভুলে যাওয়ার আর কোনও আশঙ্কা থাকে না ।
ছোটো ভাই, বোন বা মা-কে ধরে কোনও একটা বিষয় পড়িয়ে দেখেছ কখনও ? শুরু থেকে বিষয়টা বুঝিয়ে পড়াও ওঁদের, বলো, বুঝতে না পারলে প্রশ্ন করতে । যে প্রশ্নের উত্তর দিতে পারলে না, সেটা নোট করে নাও । পরে স্যারকে জিজ্ঞেস করে নিলেই হবে । তবে, এখন ইন্টারনেটের যুগে স্যার, ম্যাডাম বা সিধুজ্যাঠার প্রয়োজন আস্তে-আস্তে কমেই যাচ্ছে । কী বল ?
সকলের শেষে আবার গোড়ার কথাতেই ফিরে আসি, কীরকম করে পড়লে পড়ায় মন বসবে ? তবে তার চেয়েও বেশি দরকার নিজেকে জিজ্ঞেস করে জেনে নেওয়া, কেন পড়তে চাই ? এর উত্তর হল, জানার আনন্দে । জানতে চাই । দেখবে, এই কথাটা out of fashion হবে না কোনওদিন । পড়া দিয়ে ভরা গরমের দুপুরগুলোয় ওই ভাবনাটাই একটু যা ভরসা দেবে ক্লান্ত মনকে ।