অলংকার বা গহনা কিভাবে পরলে আকর্ষণীয় দেখায়

অলংকার বা গহনা কিভাবে পরলে আকর্ষণীয় দেখায়
অলংকার বা গহনা কিভাবে পরলে আকর্ষণীয় দেখায়

অলংকার বা গহনা: অলংকার বা গহঅলংনা কিভাবে পরলে আকর্ষণীয় দেখায় এই নিয়ে আমরা সবাই কম বেশি চিন্তিত থাকি। সভ্য় সমাজে মানুষকে সামাজিক ভাবে আকর্ষণীয় দেখানোর জন্য ও আভিজাত্যের জন্য অলংকার বা গহনা কিভাবে পরলে আকর্ষণীয় দেখায় সেটি সবারই জানা খুব প্রয়োজন । তাই আমরা এখানে কার বা গহঅলংনা কিভাবে পরলে আকর্ষণীয় দেখায় সেই সম্পর্কে জানাবো ।

অলংকার বা গহনা কিভাবে পরলে আকর্ষণীয় দেখায়

প্রাচীনকাল থেকেই গহনা বা অলংকারের প্রচলন । আদিম যুগে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাই অলংকার পরতো । তখন অবশ্য সোনা, রূপা, মনিমুক্তার অলংকারের প্রচলন ছিলো না । অলংকার হিসেবে ব্যবহৃত হতো ফুল, লতাপাতা, গাছের ছালবাকল, শেকড়, জন্তুজানোয়ারের হাড়, শিং, পাখির পালক ইত্যাদি ।

অবশ্য অলংকার হিসেবে ফুলের কদর এখনও কমে নি বিয়েবাড়িতে হলুদের অনুষ্ঠানে এখনও ব্যবহৃত হয় ফুলের গহনা । আর এখন অলংকার হিসেবে এসেছে সোনা রূপা হীরা মুক্তা রত্নরাজি ।

দামি গহনা অনেকের পক্ষেই হয়তো কেনা সম্ভব নয় । কিন্তু যদি ম্যাচিং করে মাটির গহনাও পরেন, তাতেও আপনি হয়ে উঠতে পারেন অপরূপা । আবার স্থানকাল চিন্তা না করে খুব দামি গহনা পরেও হাসির পাত্রী হতে পারেন ।

লতাপাতা থেকে নির্যাস বের করে তৈরি করতো সুগন্ধি । তবে একে সংরক্ষণ করা ছিলো কঠিন ব্যাপার । আর এখন বৈজ্ঞানিক উপায়ে তৈরি হচ্ছে নানা সুগন্ধি । তা সংরক্ষণ করতেও কোনো অসুবিধে হচ্ছে না ।

ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা বেশি সুগন্ধি ব্যবহার করে থাকে । সাজগোজ সেরে একটু সুগন্ধি ব্যবহার না করলে মনে হবে যে সাজ অসম্পূর্ণ রয়ে গেল ।

তবে সুগন্ধি লাগালেই হলো না । সুগন্ধি লাগানোরও নিয়ম আছে । আর নিয়মগুলো জানা থাকলেই সুগন্ধি ব্যবহার একটা আর্টে পরিণত হতে পারে ।

সব রকম গন্ধের প্রতিই আমাদের সহজাত প্রতিক্রিয়া রয়েছে । সুন্দর গন্ধ নাকে লাগলে আবেশে চোখ দুটো আপনা থেকেই বন্ধ করে বলি-আহ্ ! কী চমৎকার । আর বাজে গন্ধ বা উগ্র কোনো গন্ধ পেলে নাক কুঁচকে বলি, ইশ্ ! কী বাজে ! দূরে সরে যাই ।

প্রতিটি মানুষের শরীরে স্বাভাবিক গন্ধ আছে । এমনকি সব সৃষ্টিরই নিজস্ব গন্ধ রয়েছে । এজন্যে তাকে আলাদা করে বোঝা যায় ।

আমরা দেহের স্বাভাবিক গন্ধ পরিবর্তন করে চমৎকার কোনো মিষ্টি গন্ধ তৈরি করতে চাই । আর এজন্যে আমরা নানা ধরনের পারফিউম, বডি সেন্ট, সুগন্ধি পাউডার, আতর ব্যবহার করে থাকি ।

আপনি যেখানে যাবেন বা বসবেন সেখানে সুগন্ধি আবেশ সৃষ্টি করতে চাইলে সঠিক উপায়ে সুগন্ধি ব্যবহার করুন ।

বিভিন্ন সুগন্ধির বিজ্ঞাপন দেখলেই কেমন একটা শিহরণ জাগানো আনন্দ এসে আমাদের রোমান্টিক আচ্ছন্নতায় ভরিয়ে তোলে । কিন্তু আমরা কি দোকানে গিয়ে বলবো আমাকে আচ্ছন্নতা সৃষ্টিকারী ও কোনো উত্তেজক সুগন্ধি দিন । নিশ্চয়ই এটি কখনো বলবো না ।

অনেকেই বাড়ি থেকে বেরোবার মুহূর্তে খুব তাড়াতাড়ি একটু পারফিউম চেপে লাগিয়ে নেন । কিন্তু সুগন্ধি ব্যবহারের আরো ভালো উপায় আছে ।

স্নানের সময় জলেতে বিভিন্ন সুগন্ধি উপাদান ব্যবহার করা যায় । এতে শরীর থেকে একটা মিষ্টি গন্ধ বেরোবে । আবার ত্বকের কোমলতাও বজায় থাকবে । এছাড়া স্নানের পরও ব্যবহার করার জন্যে কিছু সুগন্ধি আছে । তবুও সুগন্ধি সাবানের বিকল্প নেই । স্নানের শেষে বাইরে না বেরোলে আপনি ত্বকে ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন । লোশন ব্যবহার করতে পারেন । যে সব জায়গা প্রচুর ঘামে সেখানে পাউডার ব্যবহার করতে পারেন । এতে আপনার শরীর থেকে চমৎকার সুগন্ধ ছড়িয়ে পড়বে ।

অনেকেই বাড়ির হালকা অনুষ্ঠানে জড়োয়া গহনা পরে বসেন, এটা করবেন না । এতে রুচিবোধের অভাব পরিলক্ষিত হয় । একমাত্র বিয়েবাড়িতে কিংবা জমকালো অনুষ্ঠান ছাড়া ভারী অলংকার না পরাই ভালো । গহনা আধুনিক কিংবা পুরানো দিনের হতে পারে শুধু খেয়াল রাখতে হবে কোন অনুষ্ঠানে কী পরবেন ।

দেহ ও সাজ পোশাকের সাথে মানিয়ে গহনা পরার নিয়ম

1. কখনোই সোনালি কাজ করা শাড়ির সাথে রূপোর গহনা পরবেন না ।

2. যাদের গ্রীবা (গলা) লম্বাটে তারা গলায় চিক কিংবা গলার কাছে এঁটে থাকে এমন গহনা পরলে ভালো দেখাবে । কানে মাঝারি বা ছোট জিনিস ভালো লাগবে । গলায় ভারী গহনা পরলে কানে ছোট পরতে পারেন ।

3. যাদের গলা লম্বায় ছোট অর্থাৎ খাটো গলায় কখনই ভারী বা আঁটসাট গহনা পরবেন না । এতে গলা আরো ছোট দেখাবে । ঢিলেঢালা লম্বা হার ও চেইন এবং কানে লম্বাটে ধরনের দুল পরলে লম্বা মনে হবে । মানানসই লাগবে ।

4. যাদের গড়ন রোগাপাতলা, ছোটখাটো তাদের জন্যে ছোট ধরনের গহনাই মানানসই হবে ।

5. লম্বা এবং মাঝারি গড়নের মহিলারা বড় মাপের ভারী গহনা অনায়াসে পরতে পারেন ।

6. যদি গলা ও ঘাড় তুলনামূলক চওড়া হয় তাহলে গলার জন্যে বেছে নিন ভারী গহনা ও কানে পরুন লম্বা ধরনের দুল ।

গহনা পরিষ্কার ও ভালো রাখার প্রক্রিয়া

1. ইমিটেশন গহনা সবসময় বাতাস না লাগে এমন বাক্সে রাখুন । প্রয়োজনে তুলো দিয়ে পেঁচিয়ে রেখে দিন । তাহলে রং নষ্ট হবে না ।

2. রূপার গহনায় বাতাস লাগলে কালচে হয়ে যায় । তাই এটিতেও বাতাস যাতে না লাগে সেভাবে বাক্সে রেখে দিন এবং ময়লা হলে হালকা গরম জলেতে জেট পাউডার গুলিয়ে তাতে ভিজিয়ে রেখে দিন ১৫/২০ মিনিট । তারপর ব্রাশ দিয়ে ঘষে পরিষ্কার করলেই নতুনের মতো লাগবে । তবে বেশি কালো হলে দোকানে দিয়ে পরিষ্কার করে নিতে পারেন ।

3. সোনার গহনা বাতাস লাগলেও কালো হয় না, তবে মাঝে মাঝে ঔজ্জ্বল্য বাড়াতে একেও গরম জলেতে জেট গুলে নিয়ে ১৫/২০ মিনিট ভিজিয়ে ব্রাশ করে ধুয়ে নিলে চকচক করবে । অনুষ্ঠানে যাবার আগেও পরিষ্কার করে নিতে পারেন ।

প্রসঙ্গত মনে রাখা প্রয়োজন, দৈহিক সৌন্দর্যের বিকাশ ঘটে তার সামঞ্জস্যপূর্ণ শারীরিক গড়ন, ত্বকের উজ্জ্বলতা, নিখুঁত সাজ, হেয়ার স্টাইল, রুচিসম্মত পোশাক এবং অলংকারে ।

তেমনি পরিপূর্ণ সৌন্দর্য বলতে এর সাথে থাকতে হবে মার্জিত আচরণ, চলাফেরা, কথাবার্তা, আত্মবিশ্বাস, আদবকায়দা, দাঁড়ানো-হাঁটা-চলা-বসার সঠিক ভঙ্গি এবং ব্যক্তিত্ব ও মানবিক গুণাবলি । এসব মিলিয়ে একজন নারী হয়ে উঠতে পারেন পরিপূর্ণ আকর্ষণীয় সুন্দরী । এসব গুণ না থাকলে তাকে পরিপূর্ণ সুন্দরী বলা যাবে না ।

মার্জিত ব্যবহার ও ব্যক্তিত্বপূর্ণ প্রো-একটিভ আচরণের মাধ্যমে আপনি জীবনের সর্বক্ষেত্রে সুরুচির পরিচয় দিয়ে সৌন্দর্যের আবেদন অনেকখানি বাড়িয়ে নিতে পারেন । আমাদের দৈনন্দিন জীবনে শিষ্টাচার, প্রো-একটিভ ব্যবহার ও মার্জিত আচরণের গুরুত্ব এত বেশি যে, তা একজন সাধারণ নারীকেও অসাধারণ করে তোলে ।

বহু ক্ষেত্রে এ আচরণ রূপের ঘাটতিও ঢেকে দেয় । তাই যে নারী প্রসাধন, অলংকার, সাজপোশাক ইত্যাদির মাধ্যমে সৌন্দর্যের প্রকাশ ঘটান শুধু তাকেই আমরা সুন্দরী বলবো না; বরং আমরা তাকেই সুন্দরী বলবো যার সুন্দর আচরণ ও ব্যক্তিত্ব অন্যকে আনন্দিত ও অনুপ্রাণিত করে ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here