History Of Kali Puja In Bengali – কালী পূজার ইতিহাস

History Of Kali Puja In Bengali - কালী পূজার ইতিহাস
History Of Kali Puja In Bengali - কালী পূজার ইতিহাস

History Of Kali Puja In Bengali – কালী পূজার ইতিহাস

History Of Kali Puja- সনাতন ধর্মমতে কালী বা কালিকা হচ্ছেন শক্তির দেবী। কাল শব্দটির অর্থ সময় হতে পারে, আবার এটা রং ও বুঝাতে পারে কাল তথা কৃষ্ণবর্ণ, এর অর্থ হতে পারে মৃত্যুবোধক। যেমন আমরা বলি- ‘কাল’এসে গেছে, মৃত্যুর সময় সমাসন্ন, মহাকাল এসে গেছে। দেবীর নাম মহাকালীও বটে।

কালীর নাম কাল না হয়ে কালী হলো এ কারণে যে শিবের অপর নাম কাল, যা অনন্ত সময়কাল বোধক। কালী হচ্ছে কাল এর স্ত্রীলিঙ্গ বোধক। মা কালী মা দুর্গা বা পার্বতী’র সংহারী রূপ। ঊনবিংশ শতাব্দীর সংস্কৃত ভাষার বিখ্যাত অভিধান শব্দকল্পদ্রুম এ বলা হচ্ছে ‘কাল শিবহ্। তস্য পত্নতি কালী।’ অর্থাৎ শিবই কাল বা কালবোধক। তাঁর পত্নী কালী। কালী হচ্ছেন মা দুর্গার বা পার্বতীর অপর ভয়াল রূপ। তিনি সময়ের, পরিবর্তনের, শক্তির, সংহারের দেবী।

তিনি কৃষ্ণবর্ণা বা মেঘবর্ণা এবং ভয়ংকরা। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা ভয়ংকরেরও পূজা করেন। তিনি অশুভ শক্তি’র বিনাশ করেন। তাঁর এই শক্তি’র পূজা সনাতন সমাজকে প্রভাবিত করেছে, বিশুদ্ধ শক্তি সঞ্চারিত করেছে, অন্তর শুদ্ধি দিয়েছে, দুর্দিনের দুর্বলতায় সাহস দিয়েছে। শাক্ত সৃষ্টিতত্ত্ব মতে এবং শাক্ত-তান্ত্রিক বিশ্বাস মতে তিনিই পরম ব্রহ্ম।

কালীকে এই সংহারী রূপের পরেও আমরা মাতা সম্বোধন করি। তিনি সন্তানের কল্যাণ চান তিনি মঙ্গলময়ী, তিনি কল্যাণী এটাই তাঁর প্রতি সনাতন ধর্মীয় বিশ্বাসের মূল আস্থা ও নির্যাস।

শক্তির দেবী হিসেবে শ্যামা বা কালীমূর্তির আরাধনা করেন শাক্ত বাঙালিরা।হিন্দু শাস্ত্রে বলা রয়েছে, তন্ত্র মতে যে সব দেব-দেবীদের পূজো করা হয়, তাঁদের মধ্যে কালী পুজো অন্যতম। বলা হয়, যাঁরা সাধনা করে সিদ্ধিলাভ করতে চান, তাঁরা তন্ত্র-মন্ত্র ক্ষমতায় বিশ্বাসী।

History Of Kali Puja In Bengali - কালী পূজার ইতিহাস

মানুষরূপী ঐশ্বরিক ক্ষমতার অধিকারী হতে চাইলে নিষ্ঠা সহকারে কালী পুজো করে থাকেন। শক্তির আরাধ্য দেবী কালীর উগ্র ও ভয়ংকর রূপ সৃষ্টির পেছনে আছে পৌরাণিক কারণ। ভারতে কালীপুজোর উত্‍পত্তি বিকাশ এবং প্রচলন প্রথা সম্পর্কে নানান তথ্য চারিদিকে ছড়িয়ে রয়েছে।

সেই সকল তথ্য কোনটা সত্য আর কোনটা মিথ্যা তা কিন্তু বলা খুব মুশকিল। অতীত ঘাঁটলে তার উত্‍পত্তি সম্পর্কে নানান তথ্য আমরা পেয়ে থাকি। কালী মায়ের রূপের বর্ণনা আমরা সাধারণত কালীর যে রূপের দর্শন পাই, তিনি চতুর্ভূজা অর্থাত্‍ তার চারটি হাতযুক্ত মূর্তি।

খড়গ, অন্যটিতে অসুর মুণ্ড অন্য হাতগুলিতে তিনি বর এবং অভয় প্রদান করেন। গলায় নরমুণ্ডের মালা, প্রতিকৃতি ঘন কালো বর্ণের এবং রক্তবর্ণ জিভ মুখ থেকে বাইরের দিকে বেরিয়ে আছে। এছাড়াও তিনি এলোকেশি। মা কালীকে দেখা যায় শিবের বুকের উপর পা দিয়ে জিভ বার করে দাঁড়িয়ে আছেন।

কালী পুজোর প্রচলন কবে থেকে শুরু কালী পূজার কালী শব্দটি কাল শব্দের স্ত্রীর রূপ, যার অর্থ হল কৃষ্ণ বর্ণ বা গুরু বর্ণ। বিভিন্ন পুরাণ থেকে থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, মহামায়া মা দুর্গার অন্য একটি রূপ হল কালী।

প্রাচীন গ্রন্থে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী কালী একটি দানবীর রূপ। মহাভারতে কালীর উল্লেখ রয়েছে, সেখানে যোদ্ধা এবং পশুদের আত্মা বহন করেন যিনি, সেই তিনিই কাল রাত্রি কালী নামে পরিচিত।

জানা যায়, নবদ্বীপের এক তান্ত্রিক যার নাম কৃষ্ণানন্দ তিনি বাংলায় প্রথম কালীমূর্তি বা প্রতিমা পূজার প্রচলন করেন। তার আগে মা কালীর উপাসকরা তাম্র পটে বা খোদাই করে কালীর মূর্তি এঁকে মা কালী সাধনা করতেন।

অষ্টাদশ শতাব্দীতে নদীয়ার রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায় কালী পূজাকে জনপ্রিয় করে তোলেন এবং এইভাবে মা কালীর প্রতিমা পূজার প্রচলন শুরু।

উনবিংশ শতাব্দীতে বাংলার বিভিন্ন ধনী জমিদারদের পৃষ্ঠপোষকতায় কালীপুজোর ব্যাপক প্রচলন শুরু হয়।

কালীর একাধিক রূপ পুরাণে দেবী কালীর একাধিক রূপের বর্ণনা পাওয়া যায়। যেমন দক্ষিণা কালী, শ্মশান কালী, ভদ্রকালী, রক্ষাকালী ,গ্রহ কালী, চামুণ্ডা, ছিন্নমস্তা প্রভৃতি। মহাকাল সংহিতা অনুসারে মা কালীর আবার নব রূপের পরিচয় পাওয়া যায়। যেমন কাল কালী, কঙ্কাল কালী, চিকা কালী এমন সব রূপের রূপের পরিচয়ও পাওয়া যায়।

এছাড়াও বিভিন্ন মন্দিরে ব্রহ্মময়ী, আনন্দময়ী, ভবতারিণী, আনন্দময়ী ইত্যাদি নামেও মা কালীর পূজা বা উপাসনা করতে দেখা যায়।

আরও পড়ুন- দূর্গা পূজার ইতিহাস

কালী পূজার সময়কাল দুর্গাপূজার পরবর্তী অমাবস্যাতে দীপান্বিতা কালী পূজা করা হয়। এছাড়াও মাঘ মাসে রটন্তি কালীপূজা এবং জ্যৈষ্ঠ মাসে ফলহারিণী কালীপূজা ধুমধাম করে অনুষ্ঠিত করা হয়। অনেক জায়গায় প্রতি অমাবস্যায় এছাড়াও বিভিন্ন সিদ্ধ অমাবস্যায় এছাড়াও বিভিন্ন সিদ্ধ পিঠে প্রতিদিন এবং প্রতি শনি ও মঙ্গলবার মা কালী পূজার প্রচলন দেখা যায়।

পৌরাণিক কাহিনি মা কালীর উত্‍পত্তির পৌরাণিক ব্যাখ্যা সনাতন ধর্মীয় শাস্ত্র অনুযায়ী মা কালীর আবির্ভাব সম্পর্কে যে তথ্য পাওয়া যায় তা হল পুরাকালে শুম্ভ এবং নিশুম্ভ নামক দুই দৈত্য সারা পৃথিবী জুড়ে তাদের ভয়ঙ্কর ত্রাসের সৃষ্টি করেছিল।

দেবতারাও এই দুই দৈত্যের কাছে যুদ্ধে আত্মসমর্পণ করে।

ফলে দেবলোক তাদের হাতছাড়া হয়ে যায়, তখন দেবরাজ ইন্দ্র দেবলোক ফিরে পাওয়ার জন্য আদ্যশক্তি মা মহামায়ার তপস্যা করতে থাকেন।

তখন দেবী সন্তুষ্ট হয়ে তাঁদের কাছে আবির্ভূত হন এবং দেবীর শরীর কোষ থেকে অন্য এক দেবী সৃষ্টি হয় যা কৌশিকী নামে ভক্তদের কাছে পরিচিত দেবী কৌশিকী মা মহামায়া দেহ থেকে নিঃসৃত হলে কালো বর্ণ ধারণ করে যা দেবী কালীর আদিরূপ বলে ধরা হয়।

কালী পূজার বিভিন্ন পদ্ধতি তান্ত্রিক পদ্ধতিতে মধ্যরাত্রে অর্থাত্‍ অমাবস্যার রাত্রে মন্ত্র উচ্চারণের মাধ্যমে কালী পূজা করা হয়।

আগেকার দিনে, দেবীকে সন্তুষ্ট করতে পশু রক্ত বা পশু বলি করে উত্‍সর্গ করা হয়। এছাড়াও প্রসাদ হিসেবে লুচি এবং নানা ফল ভোগ দেওয়া হয়ে থাকে।

গৃহস্থ বাড়িতে সাধারণত অতান্ত্রিক ব্রাহ্মণ মতে মা কালীর পুজা দেখা যায়। এক্ষেত্রে অনেক সময় জমিদার বাড়িতে ছাগ বা মহিষ ছাগল বা মহিষ বলি দেওয়া হত এবং বর্তমানেও অনেক জায়গায় পশু বলির মাধ্যমে পূজার প্রচলন দেখা যায়।

পুরাকালে বা প্রাচীন সময়ে বিভিন্ন ডাকাতের দল নরবলির মাধ্যমে কালী পূজা করত করত বলে শোনা যায়।

কালীপুজোর পদ্ধতি ও উপকরণ

সাধারণত যে কোন পূজায় ভক্তি সহকারে সহকারে করলে আরাধ্য দেবতা বা দেবী আশীর্বাদ দিয়ে থাকেন। যেহেতু মা কালী আদ্যা শক্তির দেবী অর্থাৎ শক্তি এবং সাহস অর্জন করার জন্য এই দেবীর পূজা করা হয় তাই কালী পূজার ক্ষেত্রে বেশ কিছু বিশেষ নিয়ম অবশ্যই মেনে চলতে হয়।

অনেকক্ষেত্রে দেখা যায় কালির দোয়াত কালী পূজার উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

পুজোর শুরু হওয়ার পূর্বে অনামিকা অঙ্গুলি দ্বারা কালির দোয়াত বা লিখনী দোয়াত দিয়ে স্বস্তিক চিহ্ন অঙ্কন করা হয়।

স্বস্তিক অঙ্কন সম্পন্ন সম্পন্ন হলে দেবীর পূজা শুরু হয় ।বহুল আয়োজন বা ঘনঘটা করে অনুষ্ঠান করলে দেবী যে প্রসন্ন লাভ করেন তা কিন্তু নয় ।কালীপুজোর অন্যতম প্রধান উপাদান হলো জবাব জবাব জবাব ফুল তাই কালীপুজোর ক্ষেত্রে মা জবা ফুল খুবই পছন্দ করেন অন্যতম প্রধান উপকরণ হিসেবে অবশ্যই রাখতে হয় জবা ফুল।

এছাড়াও আস্থা ভক্তি এবং শ্রদ্ধা সহকারে পূজা করা হলে মায়ের আশীর্বাদ অবশ্যই লাভ করা যায় কালীপুজোয় অন্যতম প্রধান ভোগ হিসাবে সোম রস রস ব্যবহার করা হয়ে থাকে। সাধারণত মধ্য রাতে এই পূজা শুরু হয় এবং ভোররাতে এ পূজা সম্পন্ন হয়ে থাকে।

সাধারণত আরতি ,আহ্বান এবং পুষ্পাঞ্জলির দ্বারা এই পূজা সম্পন্ন করা হয় এছাড়াও অনেক সময় ধ্যান করতেও দেখা যায় এই পূজার ক্ষেত্রে।

অনেক সময় ধ্যানের মাধ্যমে দেবী কালীর প্রাণ প্রতিষ্ঠা করা হয় এবং পরবর্তী সময়ে আবাহন ও পুষ্পাঞ্জলির মাধ্যমে দেবী কালীর পূজা পদ্ধতি সম্পন্ন হয়ে সম্পন্ন হয়ে থাকে।

জবা ফুল, চন্দন ,পুষ্প, ধূপ, দীপ ইত্যাদি কালী পূজার উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

মা কালীর জিভ বেরিয়ে থাকে কেন? কালীর পায়ের নীচে শিব থাকে কেন

হিন্দু ধর্মে সকল দেব দেবীর মধ্যে মা কালী হলেন নারীদের ভয়ংকর ধ্বংসাত্মক তথা শক্তিরূপের অন্যতম সেরা প্রতীক। এই রূপ দিয়ে মা সমস্ত বিশ্বকে একদিকে যেমন বুঝিয়েছেন অসুরদের বিনাশ এর জন্য তিনি এই রূপ ধারণ করেছেন, তেমনই নারীরা তাদের মমতাময়ী রূপের খোলস ত্যাগ করে রুদ্রমূর্তি ধারণ করে সকল অন্যায়, অবিচার, অত্যাচার শেষ করার ক্ষমতাও রাখে।

মাতা কালী হলেন কৃষ্ণ বর্ণের বা শ্যামা বর্ণের ।তার যে রুদ্রমূর্তি আমরা দেখতে পাই তাতে দেখি তার দুই নেত্র ভয়ংকর রক্ত বর্ণের হয়ে থাকে। মাতা কালীর যে সকল মূর্তি ,চিত্র আমরা দেখতে পাই তাতে সবগুলিতেই আমরা দেখি মা কালী দাঁড়িয়ে আছেন ভগবান শিবের ওপর এবং তার জিভ সম্মুখে অগ্রস্থ অবস্থায় আছে।

অনেকের মনেই এই প্রশ্ন দেখা যায় কেন মা কালী তার স্বামীর উপর এইরূপ জিভ বার করে দাঁড়িয়ে আছেন?

মা মহামায়া অবতীর্ণ হলে তিনি দেবতাদের বরাভয় প্রদান করেন এবং অসুর নিধনে তার রুদ্র রূপ ধারণ করেন।

দেবতারা তখন এক প্রকার খুশি হন। কিন্তু অসুরেরা সম্মিলিত ভাবে লড়াই চালিয়ে যেতে থাকে।

আর অসুরদের এরকম সম্মিলিত লড়াইয়ে মাতা মহামায়া অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হন এবং তার তৃতীয় নেত্র থেকে জন্ম নেয় এক অত্যন্ত রুদ্রমূর্তি এবং এই ভয়ঙ্কর রুদ্রমূর্তি হলো মা কালিকা বা মা কালী । যখন তিনি মা কালী রূপে পৃথিবীতে অবতীর্ণ হন তখন সকল অসুরদের বিনাশ করতে শুরু করেন এবং এক প্রকার হত্যাকাণ্ডের তাণ্ডবলীলা চালিয়ে যান।

অসুর হত্যা করে মা তাদের নরমুণ্ড হাতে ধরেন এবং নরমুণ্ডের মালা করে গলায় পরিধান করেন।

এছাড়াও খড়্গের দ্বারা অসুরদের হাত কেটে তিনি তার পোশাক বানিয়ে পরিধান করে নেন নিম্নাঙ্গে। এইরকম অবস্থায় অসুরেরা দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়ে। তারা বুঝে উঠতে পারে না কিভাবে এই দেবীর মোকাবিলা করবে?

তখন শুম্ভ-নিশুম্ভ তাদের সেনাপতি রক্তবীজকে যুদ্ধক্ষেত্রে অবতীর্ণ করেন। এই ভয়ঙ্কর দেবীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অসুরদের মধ্যে এক ভয়ংকর অসুর ছিল রক্তবীজ ।এই অসুর প্রজাপতি ব্রহ্মার আশীর্বাদে পেয়েছিলেন এক অভিনব বর।

বরটি ছিল এইরূপ, অসুর রক্তবীজকে যদি কেউ হত্যা করতে উদ্যত হন কোন অস্ত্র বা তলোয়ার দিয়ে এবং তার শরীর থেকে যদি বিন্দুমাত্রও রক্তপাত হয় তাহলে সেই রক্তের বিন্দুকনা যেখানে যেখানে পড়বে প্রতিটি বিন্দু কণা থেকেই এক একটি করে রক্তবীজের পুনরায় জন্ম হবে অর্থাৎ একপ্রকার নিজেকে অমর করার বর চেয়ে নিয়েছিলেন প্রজাপতির কাছে অত্যন্ত চালাক অসুর রক্তবীজ।

এই রুপ বরশালী রক্তবীজকে দেখামাত্রই মা রুদ্রমূর্তি ধারণ করেন এবং তাকে হত্যা করতে উদ্যত হন। খড়্গের আঘাতে রক্তবীজের শরীর ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করলে তার সারা শরীর থেকে রক্ত চারিদিকে ছড়িয়ে পড়তে থাকে এবং তখনই প্রতিটি রক্তবিন্দু থেকে সৃষ্টি হয় লক্ষ লক্ষ রক্তবীজ।

এইভাবে মা প্রতিবার রক্তবীজকে মারতে উদ্যত হলে আরো লক্ষ লক্ষ নতুন রক্তবীজ জন্ম নেয়।

তখন মা বুঝতে পারেন রক্তবীজের বরের কথা। তাই মা এইবার সকল রক্তবীজের রক্তকে তার মুখ দিয়ে পুরোটাই গ্রহণ করেন ,হত্যা করার পর ।এইভাবে তিনি রক্তবীজকে হত্যা করতে সফলতা লাভ করেন।

এরপরই শুরু হয় মায়ের তাণ্ডবনৃত্য।

সেই তান্ডব নৃত্যে স্বর্গ মর্ত্য পাতাল কাঁপতে থাকে। দেবতারা যখন এই তান্ডব নিত্য দেখেন তখন তারা বুঝতে পারেন সারা পৃথিবী জুড়ে এক প্রলয়ের সৃষ্টি হতে চলেছে, যা তাদের পক্ষে রোধ করা এক প্রকার অসম্ভব ছিল।

আর এই প্রলয় যে সকল কিছুকে ধ্বংস করে দেবে তা তারা উপলব্ধি করতে পারেন।

তখন তারা ছুটে যান দেবাদিদেব মহাদেবের কাছে। তখন মহাদেব সকলের অনুরোধ শুনে মা কালীর রুদ্রমূর্তি তাণ্ডবনৃত্য বন্ধ করার জন্য মায়ের সামনে আপন দেহ শায়িত করেন।

তাণ্ডব নৃত্য করতে করতে মা কালী যখন ভগবান শিবের বুকে পা দেন তখন এক প্রকার সম্বিৎ ফিরে পান। তখন দেখেন তিনি তার স্বামীর বুকে পা দিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন ।আর তাই তখন হঠাৎ করে লজ্জায় তার জিভ সম্মুখে বেরিয়ে আসে।

আর এই সন্মুখে বেরিয়ে আসা মা কালীর রুদ্র মূর্তি আমরা প্রত্যক্ষ করি সকল রূপে এবং বিভিন্ন চিত্রকলায় ও বিভিন্ন মূর্তিতে। এই ভাবেই মায়ের চিরাচরিত সম্মুখ বের করা মূর্তি প্রসিদ্ধিলাভ করে এই পৃথিবীলোকে।

কালীর বিভিন্ন রূপভেদ আছে। যেমন দক্ষিণাকালী, শ্মশানকালী,ভদ্রকালী, রক্ষাকালী, গুহ্যকালী,মহাকালী, চামুণ্ডা ইত্যাদি।মুলত এগুলো গাহস্থ্য ও সাধন অধিষ্ঠাত্রী নাম মিশ্রিত। তবে ধারাক্রমে বিভিন্ন তন্ত্র শাস্ত্র ও পুরানমতে ক্রমানুক্রমে কালীরগাহস্থ্য (সমাজে প্রচলিত রুপ) রুপধারা গুলো হলো

  1. দক্ষিনাকালী-

(সর্বকালে সর্বদেশের সমাজে পুজিতা) মুলত দেবীর প্রধান রুপ।তার পুজাবিধির মধ্যে কয়েকটি লাইন পরিবর্তন করে অন্যদেবীর পুজা হয়, ভৈরব, বটুক এবং শবরুপি শিব একই থাকে, শুধু নামের পরিবর্তন হয়।ইনিই কালীর প্রধান রুপ।

  1. ভদ্রাকালী-

(পাতালের দেবী, তবে বিশেষ বিশেষ অঞ্চলে ইনি পুজিতা হন, তবে ভদ্রাকালী যেহেতু পাতাল কালি, তিনি নিজ থেকে পাতাল থেকে উঠে না এলে মানুষের পক্ষে তার পুজা করা সম্ভব নয়, যেমন, চট্টগ্রামের নলুয়া কালীবাড়ি, ইনি ভদ্রাকালী স্থান ভেদে এই কালী মহাকালী নামেও পরিচিত। তবে ভদ্রাকালী ও মহাকালী এক, কারন উভয়ের পুজা ধ্যানমন্ত্র এক

  1. রক্ষাকালী-

রক্ষাকালী দক্ষিনাকালীর একটি নাগরিক রুপ।প্রাচীন কালে নগর বা লোকালয়ের রক্ষার জন্য এই দেবীর পুজা করা হতো। এই দেবীর পুজা মন্ত্র ভিন্ন এবং ইনার বাহন স্থানভেদে সিংহ

  1. রটন্তিকালী-

পুত্র সন্তান কামনায় বিশেষ ভাবে এই দেবীর পুজা করা হয়, এছাড়া ধন বৃদ্ধির জন্যও ইনি বছরের একটি বিশেষ অমাবস্যায় পুজিত হন। শাস্ত্রানুযায়ী মাঘ মাসের কৃষ্ণাচতুর্দশী তিথির নামই হলো রটন্তি, এইদিন সন্ধায় তার পুজা করতে হয়।

  1. ফলহারিনী কালী-

গৃহ ধর্মকে সুন্দর করতে এই দেবীর আবির্ভাব, নামে ফলহারিনী হলেও অভিষ্ট সিদ্ধ দায়িনি,জানা যায় রামপ্রসাদ নিজ স্ত্রীকে এই দিন দেবীরুপে পুজা করে নারী জাতীর সম্মানের জন্য এর ফল উৎসর্গ করেন।এটিও বাৎসরিক একটি পুজা।

  1. নিশাকালী-

নিশাকালী নিয়ে মতভেদ আছেবলা হয়ে থাকে ইনি জেলেদের রক্ষাকারী, দুর্যোগময় রাতে জেলেরা সমুদ্রে গেলে তার পুজা করে যেতেন, অবিশ্বাস্য হলেও সত্য তার চরন ছোয়া ফুল যে নৌকায় থাকতো সেই নৌকা কদাচিৎ ডুবতোই না।

এছাড়া আধিভৌতিক ভীতি কাটানোর জন্যওএই দেবী প্রসিদ্ধ। আবার অন্যমতভেদও আছেকোন এক সময় এক গ্রামের কয়েকটি জেলে পুরুষ নৌকা নিয়ে বের হয়ে যাবার পর প্রচণ্ড ঝড় শুরু হয়।সেই সময় সকল জেলে পত্নী তাদের স্বামীর জন্য দেবী মন্দিরে উপস্থিত হয়ে প্রার্থনা করতে থাকে, সেই সময় একজন বৃদ্ধা এসে তাদের নিশাকালীর মাহাত্ম্য কথা বলে তাদের বলেন, যে কুলে স্বয়ং দেবী জন্ম নিয়েছিলেন, সেই কুলের রুক্ষাকর্ত্রী দেবী নিজেই, তাই তার রুপ নিশাকালীর ব্রত করো, তিনিই দুর্যোগময় রাতে তোমাদের পতিদের রক্ষা করবেন, সেই থেকে জেলেকুলে ধুমধামের সাথে দেবীর স্থান হলেও কালক্রমে নিশাকালীর পুজা প্রথা বিলীন হয়ে যায়, কিন্তু স্থানভেদে কিছু জায়গায় এখনো তার পুজা বিদ্যমান।

  1. কাম্যকালী-

আমাদের বিশেষ কামনায় বা বিশেষ প্রার্থনায় যে কালীপুজা আয়োজন করা হয়, তাকেই কাম্যকালী পুজা বলা হয়, পুজা বিধি দক্ষিনাকালীর মতই।সাধারনত অষ্টমী, চতুর্দ্দশী অমাবস্যা পুর্ণিমা ও সংক্রান্তিকে পর্বদিন বলে।পর্বসমুহের মধ্যে অমাবস্যাকে বলা হয় মহাপর্ব। বিশেষ কামনায় এই সকল তিথিতে যে পুজা করা হয় তাকেই কাম্যকালী পুজা বলা হয়।

  1. শ্মশান কালী-

শ্মশানের অধিষ্ঠাত্রী দেবীই হলেন শ্মশানকালী।তার পুজাবিধি একটু অন্যপ্রকার। সাধারনত বলা হয়ে থাকে যে গৃহীদের জন্য এই দেবীর পুজা নিষিদ্ধ।সেই সকল গৃহীই তার পুজা করতে পারে, যে শশ্বানে তাদের পরিবারের দেহ রাখা হয়েছে এবং শুধুমাত্র সেই শ্মশানকালীর পুজা তারা করতে পারেন। কিন্তু সব শ্মশানেই শ্মশানকালী থাকে না।ছোট ছোট শ্বশান মিলে একটি মহাশ্বশান হয়, আর কয়েকটি মহাশ্বশান নিয়েই শ্বশানপীঠ হয়, এই পীঠেই দেবী অবস্থান করেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here