Francis Bacon Biography: আজ আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি মহান ব্যক্তিদের জীবনী সমগ্র। মহান ব্যক্তি আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা। তাঁদের জীবনের ক্ষুদ্রতম অংশগুলি আমাদের জন্য শিক্ষামূলক হতে পারে। বর্তমানে আমরা এই মহান ব্যক্তিদের ভুলতে বসেছি। যাঁরা যুগ যুগ ধরে তাদের কর্ম ও খ্যাতির মধ্য দিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন এবং জ্ঞান, বিজ্ঞান, শিল্প ও সাহিত্যের জগতে এক অনন্য অবদান রেখেছেন এবং তাঁদের শ্রেষ্ঠ গুণাবলী, চরিত্র দ্বারা দেশ ও জাতির গৌরব বৃদ্ধি করেছেন। সেইসব মহান ব্যক্তিদের মধ্যে অন্যতম ফ্রান্সিস বেকন (Francis Bacon) -এর সমগ্র জীবনী সম্পর্কে এখানে জানব।
Francis Bacon Biography In Bengali – ফ্রান্সিস বেকন জীবনী
নাম | ফ্রান্সিস বেকন |
জন্ম | 22 জানুয়ারী 1561 |
পিতা | স্যার নিকোলাস বেকন |
মাতা | লেডি অ্যান বেকন |
জন্মস্থান | দ্য স্ট্র্যান্ড, লন্ডন, ইংল্যান্ড |
জাতীয়তা | ইংরেজ |
পেশা | দার্শনিক, আইনজ্ঞ, কূটনৈতিক এবং বৈজ্ঞানিক |
মৃত্যু | 9 এপ্রিল 1626 (বয়স 65) |
ফ্রান্সিস বেকন কে ছিলেন? Who is Francis Bacon?
ফ্রান্সিস বেকন ষোড়শ শতাব্দীর মধ্যভাগ পর্যন্ত বিজ্ঞান আর দর্শনের অবস্থান ছিল প্রায় অঙ্গাঙ্গী। বলা ভাল দার্শনিক চিন্তাধারার মধ্যেই বিজ্ঞান ও বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব আবদ্ধ ছিল।
পাশাপাশি জনজীবনের স্বার্থে আর একটি আপাত বিজ্ঞান – ধারা সেই সময় প্রবাহিত ছিল। তা হল কারিগরিবিদ্যা। এর সাহায্যে কারিগরদের সহায়তায় নতুন নতুন যন্ত্রপাতিরও উদ্ভাবনের কাজ চলছিল।
এই কারিগররা বিজ্ঞানের তত্ত্ব নিয়ে বিশেষ মাথা ঘামাতেন না। দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনে উদ্বুদ্ধ হয়েই তারা নতুন কোন আবিষ্কারে উৎসাহিত হতেন। যেন- তেন প্রকারে তারা নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য সাধন করতেন। ফলে বিজ্ঞানের সঙ্গে কারিগরদের কারিগরী বিদ্যার দূরত্ব ছিল অনেক।
অথচ অনিবার্যভাবেই একটি আর -একটির পরিপূরক। এই সত্যটি অনুধাবন করে পণ্ডিতরা বিজ্ঞান ও কারিগরীবিদ্যার সমন্বয় সাধনের চেষ্টায় ব্রতী হন।
মুষ্টিমেয় চিন্তাবিদের ঐকান্তিক প্রযত্নে ধীরে ধীরে কারিগররা যন্ত্রপাতি নির্মাণের ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক তত্ত্বকে প্রয়োগ করতে উৎসাহিত হলেন।
এই ভাবেই বিজ্ঞান দার্শনিকতার গন্ডি ছাড়িয়ে নিজস্ব পথে অগ্রসর হবার সুযোগ লাভ করে। বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে আসে বিপ্লব। ফ্লান্সিক বেকন হলেন সেই মুষ্টিমেয় চিন্তাবিদদের অন্যতম যাঁরা বিজ্ঞান ইতিহাসের এই বিপ্লবকে বহন করে এনেছিলেন।
ফ্রান্সিস বেকন এর জন্ম: Francis Bacon’s Birthday
ফ্রান্সিস বেকনের জন্ম ইংলন্ডে ১৫৬০ খ্রিঃ।
প্রাথমিক শিক্ষা শেষ হলে বারো বছর বয়সে তিনি কেম্ব্রিজে পড়াশুনা করতে যান। কিন্তু প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থার ত্রুটি বিচ্যুতি লক্ষ করে মাত্র দুবছর পরে শিক্ষালাভের উদ্দেশ্যে দর্শন শাস্ত্রে বেকন কেম্ব্রিজ থেকে চলে যান ফ্রান্সে। সেখানে বছর দুই থাকার পর তার পিতার মৃত্যু হয়।
তিনি লন্ডনে ফিরে এসে আইন অধ্যয়ন করেন এবং পাশ করে অল্পদিনের মধ্যেই আইন ব্যবসায়ে যথেষ্ট সাফল্য লাভ করেন।
ফ্রান্সিস বেকন এর কর্ম জীবন: Francis Bacon’s Work Life
এই সময় ইংলন্ডের রাজা প্রথম জেমস -এর বিচার বিভাগে যোগদানের জন্য আমন্ত্রণ আসে এবং তিনি এই কাজে যোগদান করেন। অনন্য সাধারণ প্রতিভার বলে অল্পকালের মধ্যেই তিনি আইন বিভাগের প্রধানরূপে মনোনীত হন। রানী এলিজাবেথের স্নেহধন্য বেকন সাহিত্য- সংস্কৃতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিভার পরিচয় দেন।
অনেকে মনে করেন মনীষী অ্যারিস্টটলের পর বেকনের মত আর কেউ এত বহুমুখী প্রতিভার পরিচয় দিতে পারেন নি।
ইংরাজি সাহিত্য ও শিল্প-সংস্কৃতির স্বর্ণযুগ অর্থাৎ এলিজাবেথীয় যুগে বেকন অন্যতম রত্নস্বরূপ স্বীকৃত। বেকন ছিলেন মূলতঃ দার্শনিক। তবে বিজ্ঞানের প্রতি ছিল তার গভীর আগ্রহ। আইন বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা সত্ত্বেও তিনি নিয়মিতভাবে বিজ্ঞান ও দর্শনের চর্চা করতেন।
আরও পড়ুন: অ্যান্টনি ভন লিউয়েন হক জীবনী
পরে কেবলমাত্র বিজ্ঞান সম্বন্ধেই ভাবনাচিন্তা আরম্ভ করেন। প্রাচীন গ্রীক পণ্ডিতদের সময় থেকে তার সমসাময়িক কাল পর্যন্ত প্রচলিত সমস্ত বৈজ্ঞানিক তথ্যাবলী তিনি সংগ্রহ করে পড়াশোনা করেন। তার ফলেই বিজ্ঞানের নতুন সম্ভাবনার ইঙ্গিত তিনি লাভ করেন।
বেকনের অদম্য জ্ঞানতৃষ্ণা ও বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গী সাহিত্য-দর্শন-বিজ্ঞান সহ নানা বিষয়ে মৌলিক সৃষ্টির ব্যাপারে সাফল্য লাভে সাহায্য করেছে।
মনটেইনের (Montaigne) আদর্শে বেকনই সর্বপ্রথম ইংরাজিতে খাঁটি প্রবন্ধ রচনার স্রষ্টা রূপে স্বীকৃত। খ্রিষ্টীয় ষোড়শ শতাব্দীর ভাল-মন্দ, ব্যাপ্তি-সংকোচ, মহত্ত্ব-ঋজুতার বৈচিত্রা বেকনের দিগন্ত-প্রসারী সৃষ্টির মধ্যে সংহত হয়েছে।
একসময় বেকন কারিগরীবিদ্যা এবং প্রচলিত যন্ত্রপাতির দিকে আকর্ষণ বোধ করেন। তিনি অল্প সময়ের মধ্যেই উপলব্ধি করেন বিজ্ঞান এবং কারিগরীবিদ্যাই মানবসভ্যতার অগ্রগতির ইতিহাস রচনায় প্রধান ভূমিকা অবলম্বন করবে।
তাঁর এই সময়ের চিন্তাভাবনা একটি পুস্তকের আকারে দ্য অ্যাডভান্সমেন্ট অব লার্নিং নামে প্রকাশিত হয়।
বিজ্ঞান ও কারিগরীবিদ্যাকে জনপ্রিয় করার কোন প্রয়াস ইতিপূর্বে কোন পণ্ডিত চিন্তাবিদ গ্রহণ করেন নি। উক্ত বইটির মাধ্যমে বেকনই সেই প্রয়াসের সূচনা করেন। বিজ্ঞানের ইতিহাসে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে বেকনের দ্বিতীয় পুস্তক গ্রেট ইনস্টরেশন অব লার্নিং। বিভিন্ন খণ্ডে বিভক্ত পুস্তকটি প্রকাশিত হয় ১৬২০ খ্রিঃ।
আরও পড়ুন: এসক্লেপিয়াড অ্যারিস্টটল জীবনী
প্রথম খণ্ডে বেকন প্রাচীনকাল থেকে প্রচলিত বৈজ্ঞানিক তথ্যগুলি সংগ্রহ করে লিপিবদ্ধ করেন। সেই সঙ্গে তিনি তার প্রাসঙ্গিক মতামতও ব্যক্ত করেন। বিজ্ঞানের অগ্রগতির স্বার্থে প্রাচীন মতবাদের ভিত্তিতে নতুন নতুন তত্ত্ব ও পদ্ধতির উদ্ভাবনের গুরুত্বের কথা তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন।
এই বিষয়ে এগিয়ে আসার জন্য পণ্ডিত ব্যক্তিদের তিনি আহ্বান জানান। গ্রেট ইনস্টরেশন অব লার্নিং -এর দ্বিতীয় খণ্ডে তিনি প্রচলিত যন্ত্র বিদ্যার উল্লেখ করেন এবং ব্যাখ্যা করে দেখান কোন কোন যন্ত্রে কোন কোন বৈজ্ঞানিক তথ্য প্রযুক্ত হয়েছে।
কুসংস্কার ও অন্ধবিশ্বাসের বিরুদ্ধে অকাট্য যুক্তিসহ তীব্র সমালোচনার জন্য এই খণ্ডটি ইংরাজি সাহিত্যের অক্ষয় সম্পদ হয়ে আছে। পুস্তকখানির তৃতীয় খণ্ডে তিনি প্রাচীন বৈজ্ঞানিক তথ্যগুলিকে নানা পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করেন।
আরও পড়ুন: ইয়োহানিস গুটেনবার্গ জীবনী
কারিগরী জ্ঞান ও বিজ্ঞানের সঙ্গে তার সম্বন্ধ বিষয়ে তার যুক্তিপূর্ণ তথ্যনিষ্ঠ আলোচনা স্থান পেয়েছে চতুর্থ খন্ডে। এই গ্রন্থের আরো কয়েকটি খণ্ড প্রকাশের পরিকল্পনা বেকনের ছিল। কিন্তু সেই পরিকল্পনা তিনি বাস্তবায়িত করবার সময় পাননি।
ফ্রান্সিস বেকন এর রচনা: Written by Francis Bacon
বিজ্ঞান বিষয়ের পাশাপাশি ধর্মতত্ত্ব, দর্শন, রাজনীতি বিষয়ক রচনাবলীর মধ্যেও বেকনের স্বকীয়তার চিহ্ন পরিস্ফুট। বেকনের অধিকাংশ রচনাই লাতিন ভাষায় লেখা।
ইংরাজি জানা পাঠকদের কাছে তাঁর অন্যান্য যেসব বই সমাদৃত হয়েছে, সেগুলি হল, Essays, The New Atlantis । বেকনের যুগান্তকারী চিন্তাধারা পণ্ডিত সমাজে আলোড়ন সৃষ্টি করে এবং অচিরেই বিজ্ঞানরাজ্যে প্রথম বিপ্লবের সূচনা হয়।
নতুন ভাবে আরম্ভ হয় বৈজ্ঞানিক গবেষণা। আবির্ভূত হন গ্যালিলিও, দেকার্ত এর মত নতুন যুগের বিজ্ঞান সাধকগণ। ফ্রান্সিস বেকনের নির্দেশিত পথেই তারা বিজ্ঞানের গতিধারায় গতি সঞ্চার করেন।
ফ্রান্সিস বেকন এর মৃত্যু: Francis Bacon’s Death
বহুমুখী প্রতিভাধর এই মনীষী ১৬২৬ খ্রিঃ পরলোক গমন করেন।
আরও পড়ুন: ফ্রান্সিস বেকন উইকিপিডিয়া