পারিবারিক দায়িত্ব নিতে জানুন আপনার কি কি করণীয়

পারিবারিক দায়িত্ব নিতে জানুন আপনার কি কি করণীয়
পারিবারিক দায়িত্ব নিতে জানুন আপনার কি কি করণীয়

পারিবারিক দায়িত্ব: পারিবারিক দায়িত্ব বা কর্তব্য নিয়ে আমরা সবাই কম বেশি চিন্তিত থাকি । মানুষকে সামাজিক ভাবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য পরিবারই তার প্রয়োজনীয় সবকিছুর ব্যবস্থা করে দেয়। পরিবারে পিতার যেমন একটি অবস্থান রয়েছে তেমনি রয়েছে মায়ের ও ছেলে-মেয়েদের, তাদের প্রত্যেকেরই রয়েছে পারিবারিক আলাদা ও ভিন্ন ধরনের দায়িত্ব ও ভূমিকা, যা তাদের সামাজিক দায়িত্ব ও ভূমিকার সাথে মিলে না। তাই আমরা এখানে পারিবারিক দায়িত্ব নিতে আপনার কি কি করণীয় সেই সম্পর্কে জানাবো । যেমন- পরিবারের পুরুষদের যা যা করণীয় এবং পরিবারের নারীদের যা যা করণীয় ।

পারিবারিক দায়িত্ব

পুরুষ ও নারীর করণীয়

পরিবারের পুরুষদের যা যা করণীয়

1. স্বামী হিসেবে নিজেকে পরিবারের প্রধান দায়িত্বশীল মনে করুন ।

2. পরিবারে দায়িত্ব পালনকে ইবাদত মনে করুন ।

3. স্ত্রীকে বন্ধু, জীবনসঙ্গী ও ঘরের প্রধান হিসেবে বিবেচনা করুন ।

4. পারিবারিক প্রতিটি সিদ্ধান্ত গ্রহণে স্ত্রীর সাথে পরামর্শ করুন ।

5. স্ত্রীর ভালো কাজ, অবদান ও কৃতিত্বের প্রশংসা করুন ।

6. স্ত্রীর প্রতি বিশ্বস্ত থাকুন এবং ভালবাসা ও অনুরাগ কথা ও আচরণের মাধ্যমে প্রকাশ করুন ।

7. কর্মস্থল বা বাইরের রাগ-ক্ষোভ ঘরের স্ত্রী, সন্তান বা গৃহকর্মীর ওপর প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকুন ।

8. নিজের ভুল নিঃসংকোচে স্ত্রীর নিকট স্বীকার করুন । অন্যায় করলে মাফ চেয়ে নিন ।

9. আয় অনুসারে স্ত্রীর প্রয়োজন পূরণ, ছোটখাটো উপহার প্রদান ও হাতখরচা প্রদান করুন এবং হাতখরচা ব্যয়ের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা থেকে বিরত থাকুন ।

10. স্ত্রীর অর্জিত অর্থ ও সম্পদ ব্যয়ে স্ত্রীর স্বাধীনতা হরণ করবেন না ।

11. স্ত্রীর যুক্তিসঙ্গত আবদার পূরণে সচেষ্ট থাকুন ।

12. নিজের আয় সম্পর্কে প্রথম থেকেই স্ত্রীকে সুস্পষ্ট ধারণা দিন ও অবৈধ পন্থায় অর্থোপার্জন করা থেকে বিরত থাকুন ।

13. পেশাগত বা পারিবারিক সংকট দেখা দিলে স্ত্রীর সাথে তা খোলামেলা আলোচনা করুন ।

14. আত্মীয়স্বজনকে উপহার দেয়া বা সাহায্য করার ব্যাপারে স্ত্রীকে অযৌক্তিক বাধা দেয়া থেকে বিরত থাকুন ।

15. স্ত্রীর আত্মীয়দের নিয়ে তাকে কথা শোনাবেন না ।

16. স্ত্রীর মা-বাবাকে নিজের মা-বাবার মতো শ্রদ্ধা করুন ।

17. ঘরের খুঁটিনাটি ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করা থেকে বিরত থাকুন । ঘরের কাজে সাধ্যমতো সাহায্য করুন ।

18. স্ত্রীর ভুলত্রুটি নিয়ে সন্তানদের সামনে ভর্ৎসনা করবেন না ।

19. সপ্তাহে একদিন পুরোপুরি স্ত্রী-পুত্র-কন্যাদের নিয়ে কাটান । ঘরের প্রতিটি কাজ-এমনকি রান্নাবান্নায়ও পিকনিকের মতো অংশ নিন । গ্লাসে পানি ঢেলে খাওয়াসহ নিজের ছোটখাটো কাজ নিজে করুন ।

20. স্ত্রীর যেকোনো ভুলত্রুটিকে সহানুভূতির সাথে বিবেচনা করুন এবং রূঢ় ভাষায় সমালোচনা করা থেকে বিরত থাকুন ।

21. বাইরে কাজ আছে বলে ক্লাব বা ‘বন্ধু’ দের সাথে তাস খেলে বা ফালতু আড্ডায় সময় নষ্ট না করে পরিবারের আত্মিক ও মানসিক উন্নতির জন্যে সময় ব্যয় করুন ।

22. অন্যের কাছে স্ত্রীর বদনাম করবেন না ।

23. অপচয় করবেন না । আবেগপ্রসূত কেনাকাটা পরিহার করুন ।

24. নিজের দোষত্রুটি খুঁজে বের করার চেষ্টা করুন ।

25. স্ত্রীর শারীরিক খোঁজখবর নিয়মিত জিজ্ঞেস করুন । অসুস্থ হলে নিজে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করুন ।

26. স্ত্রীর যেকোনো অভিযোগ মনোযোগ দিয়ে শুনুন । কোনো প্রস্তাব বা কথায় প্রথমেই ‘না’ বলা থেকে বিরত থাকুন ।

27. স্ত্রীকে গৃহকর্মে ও সন্তান পালনে সাধ্যমতো সাহায্য করুন ।

পরিবারের নারীদের যা যা করণীয়

1. নিজেকে পরিবারের প্রাণ মনে করুন ।

2. সংসারের প্রতিটি কাজকে ইবাদত মনে করুন ।

3. স্বামীকে বন্ধু, জীবনসঙ্গী, দিশারী ও পরিবারের প্রধান হিসেবে বিবেচনা করুন ।

4. স্বামীকে লুকিয়ে কোনো কাজ করা থেকে বিরত থাকুন ।

5. স্বামীর ভালো কাজ, অবদান ও কৃতিত্বে গর্ববোধ করুন ।

6. স্বামীর প্রতি সর্বাবস্থায় বিশ্বস্ত থাকুন এবং ভালবাসা ও অনুরাগ কথা ও আচরণে প্রকাশ করুন ।

7. স্বামী-সন্তান বাইরে থেকে আসার সাথে সাথে কোনো সমস্যার কথা বলা বা অভিযোগ করা থেকে বিরত থাকুন ।

8. কোনো ভুল বা অন্যায় হয়ে গেলে নিঃসংকোচে তা স্বীকার করুন ও স্বামীর কাছে মাফ চেয়ে নিন ।

9. নিজের হাতখরচা থেকে কখনো কখনো সম্ভব হলে স্বামীর জন্যে ছোটখাটো উপহার কিনুন । নিজের অর্জিত অর্থ প্রয়োজনে স্বামী ও সংসারের জন্যে খরচ করুন ।

10. স্বামীর কাছে অযৌক্তিক আবদার করা থেকে বিরত থাকুন ।

11. স্বামীর যুক্তিসঙ্গত আয় সম্পর্কে ধারণা রাখুন । আয়ের মধ্যেই সংসারের খরচ সীমিত রাখার চেষ্টা করুন । অতিরিক্ত খরচ ও চাপ সৃষ্টি করে স্বামীকে দুর্নীতিপরায়ণ হতে বাধ্য করবেন না ।

12. যেকোনো বিপদে বা সংকটে স্বামীর প্রতি পরিপূর্ণ সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিন ।

13. স্বামীর অজ্ঞাতে কাউকে কিছু দেবেন না ।

14. স্বামীর আত্মীয়স্বজন নিয়ে খোঁটা দেয়া থেকে বিরত থাকুন ।

15. শ্বশুর-শাশুড়ীকে নিজের বাবা-মায়ের মতো শ্রদ্ধা করুন । স্বামীর ভাই-বোনদের নিজের ভাই-বোনের মতো ভালবাসুন ।

16. ঘরের খুঁটিনাটি সমস্যা নিজেই সমাধানে সচেষ্ট থাকুন ।

17. সন্তানের সামনে স্বামীর সাথে ঝগড়া এবং তার ভুলত্রুটি নিয়ে সমালোচনা করা থেকে বিরত থাকুন ।

18. চাকরিজীবী হলেও সন্তান ও সংসারের ব্যাপারে যাতে কোনো অবহেলা না হয় সে দিকে খেয়াল রাখুন ।

19. স্বামীর যেকোনো অক্ষমতা সহানুভূতির সাথে বিবেচনা করুন ।

20. আত্ম উন্নয়ন ও আত্মিক উন্নয়নে স্বামীকে সহযোগিতা করুন । সুযোগ মতো হক্কুল ইবাদ বা সৃষ্টির সেবায় অংশ নিন ।

21. অন্যের কাছে স্বামীকে ছোট করা থেকে বিরত থাকুন ।

22. মা হিসেবে সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ানো ও সন্তানের মাঝে অনন্য মানুষের গুণাবলিকে বিকশিত করার কাজে সচেষ্ট থাকুন ।

23. গ্যাসের চুলা প্রয়োজনের বাইরে সবসময় বন্ধ রাখুন । সব ধরনের অপচয়ের বিরুদ্ধে পরিবারের সবার মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করুন ।

24. অভিমান করা, নিজের কষ্টকে বড় করে দেখার প্রবণতা পরিহার করুন ।

25. ঘরবাড়ি পরিষ্কার ও পরিপাটি রাখার ক্ষেত্রে সচেষ্ট থাকুন ।

26. পুত্রবধূকে পারিবারিক পরামর্শে অংশীদার করুন ।

27. শাশুড়ি হিসেবে পুত্রবধূকে প্রতিপক্ষ না ভেবে নিজের কন্যার মতো বিবেচনা করুন এবং পুত্রবধূর ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখুন ।

পরিশেষে বলা যায়-শারীরিক, মানসিক, পারিবারিক সৌন্দর্য বৃদ্ধির চর্চার পাশাপাশি অন্তরতম সত্তা আত্মাকে আলোকিত ও সৌন্দর্যমণ্ডিত করার জন্যে স্রষ্টার সরাসরি স্মরণে যদি কিছু সময় ব্যয় করেন তাহলেই আপনার সৌন্দর্যের ষোল কলা পূর্ণ হবে ।

[‘পারিবারিক শিষ্টাচার’ অংশটি মহাজাতকের আত্মনির্মাণ ও আলোকিত জীবনের হাজার সূত্র কোয়ান্টাম কণিকা বই থেকে সংকলিত]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here