Dwijendralal Ray Biography: আজ আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি মহান ব্যক্তিদের জীবনী সমগ্র। মহান ব্যক্তি আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা। তাঁদের জীবনের ক্ষুদ্রতম অংশগুলি আমাদের জন্য শিক্ষামূলক হতে পারে। বর্তমানে আমরা এই মহান ব্যক্তিদের ভুলতে বসেছি। যাঁরা যুগ যুগ ধরে তাদের কর্ম ও খ্যাতির মধ্য দিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন এবং জ্ঞান, বিজ্ঞান, শিল্প ও সাহিত্যের জগতে এক অনন্য অবদান রেখেছেন এবং তাঁদের শ্রেষ্ঠ গুণাবলী, চরিত্র দ্বারা দেশ ও জাতির গৌরব বৃদ্ধি করেছেন। সেইসব মহান ব্যক্তিদের মধ্যে অন্যতম কবি দ্বিজেন্দ্রলাল রায় (Dwijendralal Ray) -এর সমগ্র জীবনী সম্পর্কে এখানে জানব।
দ্বিজেন্দ্রলাল রায় জীবনী – Dwijendralal Ray Biography In Bengali
নাম | দ্বিজেন্দ্রলাল রায় |
জন্ম | ১৯ জুলাই ১৮৬৩ |
জন্মস্থান | কৃষ্ণনগর, নদিয়া, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত |
পিতা | কার্তিকেয় চন্দ্র রায় |
মাতা | প্রসন্নময়ী দেবী |
পেশা | গীতিকার, সহিতিক, নাট্যকার |
সমাধিস্থল | কলকাতা |
মাতৃভাষা | বাংলা ভাষা |
শিক্ষালাভ | প্রেসিডেন্সি বিদ্যালয় কলকাতা |
উল্লেখযোগ্য কাজ | একঘরে |
মৃত্যু | ১৭ মে ১৯১৩ |
দ্বিজেন্দ্রলাল রায় এর জন্ম স্থান ও পিতামাতা: Birth Place And Parents Of Dwijendralal Ray
বাংলা সাহিত্যের প্রখ্যাত কবি ও নাট্যকার দ্বিজেন্দ্রলালের জন্ম হয় ১৮৬৩ খ্রিঃ ১৯ শে জুলাই নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগরে। তাঁর পিতা কার্তিকেয়চন্দ্ৰ ছিলেন রাজবংশের দেওয়ান। গায়ক ও গীতিকার রূপেও তাঁর খ্যাতি ছিল।
বাল্যবয়সেই পিতার যত্নে ও সাহচর্যে সংগীতের প্রতি দ্বিজেন্দ্রলালের আগ্রহ জন্মে। পিতার কাছেই সঙ্গীত শিক্ষা এবং অল্পবয়সেই সুকন্ঠ গায়করূপে খ্যাতি লাভ করেন। কবিপ্রতিভা নিয়েই জন্মেছিলেন দ্বিজেন্দ্রলাল।
দ্বিজেন্দ্রলাল রায় এর প্রথম জীবন: Dwijendralal Ray’s Early Life
পল্লীপ্রকৃতির সান্নিধ্য এবং সঙ্গীতজ্ঞ পিতার সাহচর্যে তাঁর প্রতিভা বিকাশ লাভ করে। পারিবারিক পরিবেশে ছিল সাহিত্য ও সঙ্গীতের আবহাওয়া।
তাঁর দুই দাদা রাজেন্দ্রলাল ও হরেন্দ্রলাল সাহিত্যিকরূপে পরিচিত ছিলেন। এক বৌদি মোহিনী দেবীও সাহিত্যরচনায় খ্যাতিলাভ করেছিলেন। স্বভাবতঃই এই পরিমণ্ডলের দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন দ্বিজেন্দ্রলাল।
দ্বিজেন্দ্রলাল রায় এর শিক্ষাজীবন: Dwijendralal Ray’s Educational Life
হুগলী কলেজে বি.এ ক্লাশে পড়ার সময়েই দ্বিজেন্দ্রলালের রচিত প্রথম কাব্যগ্রন্থ আর্য্যগাথা প্রকাশিত হয় ১৮৮২ খ্রিঃ। ১৮৮৪ খ্রিঃ তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে এম.এ পাশ করেন। এর পর প্রবেশ করেন কর্মক্ষেত্রে।
স্থানীয় স্কুলে শিক্ষকতার চাকুরি করার সময়েই সরকারী বৃত্তি নিয়ে কৃষিবিদ্যা শিক্ষার জন্য বিলাত যাত্রা করেন।
দ্বিজেন্দ্রলালের সাহিত্যিক অগ্রজের সম্পাদনায় প্রকাশিত হত সাপ্তাহিক পত্রিকা পতাকা। এই কাগজে তিনি প্রবাসবাসের কাহিনী লিখতেন। দ্বিজেন্দ্রলালের দেশীয় সঙ্গীতের ভিত যথেষ্টই দৃঢ় ছিল।
দ্বিজেন্দ্রলাল রায় এর কর্ম জীবন: Dwijendralal Ray’s Work Life
ফলে বিলেত বাসকালে অল্পসময়ের মধ্যেই তিনি পাশ্চাত্য সঙ্গীতে দক্ষতা লাভ করেন। এখানে তিনি Lyrics India নামে একটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ করেন। বিলেতে তিন বছর ছিলেন দ্বিজেন্দ্রলাল। সেকালে সামাজিক গোঁড়ামি এমন ছিল যে কেউ বিলেত গেলে তাকে ম্লেচ্ছ দেশে যাবার অপরাধে ফিরে এসে প্রায়শ্চিত্ত করতে হত।
দ্বিজেন্দ্রলাল সমাজপতিদের এই ব্যবস্থা মানতে রাজী না হওয়ায় তাঁকে যথেষ্ট সামাজিক উৎপীড়ন সহ্য করতে হয়।
দ্বিজেন্দ্রলাল রায় এর রচনা: Written by Dwijendralal Ray
তাঁর এই সময়কার তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ পায় তাঁর একঘরে পুস্তকে। ১৮৮৬ খ্রিঃ সরকারী চাকুরি নিয়ে দ্বিজেন্দ্রলালকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রকার কাজের দায়িত্ব বহন করতে হয়। কখনো সেটেলমেন্ট অফিসার, কখনো ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট, কখনো আবগরি বিভাগের প্রধান পরিদর্শক, কখনো কৃষিরাজস্ব বিভাগে সহকারী প্রধানের কাজ করতে হয়েছে।
স্বভাবতঃ স্বাধীনচেতা হওয়ায় সরকারী চাকুরিতেও তাঁকে নানান ঝামেলা সামলাতে হয়েছে। চাকরি থেকে অবসর নেবার পর ১৯০৫ খ্রিঃ শিক্ষিত ও সংস্কৃতিসেবী ব্যক্তিদের নিয়ে তিনি পূর্ণিমা সম্মেলন প্রতিষ্ঠা করেন।
এই সময়ে তিনি ইভিনিংক্লাব নামে অপর একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও যুক্ত হন। ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত থাকার সুবাদে তিনি প্রকাশ্য অভিনয়েও অংশগ্রহণ করেন। রবীন্দ্রনাথের সঙ্গেও দ্বিজেন্দ্রলালের বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল।
অবশ্য জীবনের শেষ দিকে সাহিত্য বিষয়ের সমালোচনা প্রসঙ্গে দুই বন্ধুর মধ্যে মতানৈক্য ঘটেছিল।
১৯০৩ খ্রিঃ পর্যন্ত দ্বিজেন্দ্রলালের মোট বারোটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। প্রধানতঃ কবিতাই ছিল তাঁর সাহিত্যচর্চার বাহন।
রচনা করেছেন প্রহসন, কাব্যনাট্য, ব্যঙ্গ ও হাস্যরসাত্মক কবিতা। এরপর তিনি আত্মনিয়োগ করেন নাটক রচনায়। বিলেত বাসকালে সেখানকার প্রসিদ্ধ অভিনেতাদের অভিনয় দেখার সুযোগ হয়েছিল তাঁর।
রঙ্গালয়ের ক্লাকৌশল বিষয়েও অভিজ্ঞতা অর্জন করেছিলেন। নাটক রচনার ক্ষেত্রে তাঁর এই অভিজ্ঞতা বিশেষরূপে সহায়ক হয়েছিল। জীবনের শেষ দশ বছর প্রধানত নাটক রচনাতেই ব্যাপৃত ছিলেন। পৌরাণিক, সামাজিক, ঐতিহাসিক সবরকম নাটক রচনাতেই তাঁর দক্ষতা ছিল।
তাঁর ঐতিহাসিক নাটকগুলিতে জাতীয় চেতনা ও স্বদেশীকতার প্রেরণা মূর্ত হয়ে উঠেছে।
দ্বিজেন্দ্রলাল সর্বমোট ১৬ টি নাটক রচনা করেন।
দ্বিজেন্দ্রলাল রায় এর মৃত্যু: Dwijendralal Ray’s Death
ভারতবর্ষ নামে একটি মাসিক সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশের উদ্যোগ সম্পূর্ণ করেছিলেন। কিন্তু প্রথম সংখ্যা প্রকাশের আগেই তিনি পরলোকগমন করেন ১৯১৩ খ্রিঃ ১৭ ই এপ্রিল।
হাস্যরসের সঙ্গীত রচনায় দ্বিজেন্দ্রলাল নিজস্ব একটি রীতি সৃষ্টি করেছিলেন। দেশাত্মবোধক সঙ্গীত রচনার ক্ষেত্রেও তিনি যশস্বী হয়েছেন।
তাঁর সঙ্গীতে দেশীয় ও পাশ্চাত্য সঙ্গীতের মিশ্রণ লক্ষ করা যায়। দ্বিজেন্দ্রলালের উল্লেখযোগ্য রচনার মধ্যে হাসির গান, চন্দ্রগুপ্ত, সাজাহান মেবারপতন প্রতাপসিংহ বিখ্যাত।
আরও পড়ুন-
- ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর জীবনী
- বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় জীবনী
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জীবনী
- কাজী নজরুল ইসলাম সংক্ষিপ্ত জীবনী
দ্বিজেন্দ্রলাল রায় মাতার নাম?
প্রসন্নময়ী দেবী।
দ্বিজেন্দ্রলাল রায় কোথায় জন্মগ্রহণ করেন?
১৯ জুলাই, ১৮৬৩, কৃষ্ণনগর।
দ্বিজেন্দ্রলালের প্রথম ঐতিহাসিক নাটকের নাম কি?
‘সিংহল-বিজয়’ নাটকটি হল দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের লেখা একটি ঐতিহাসিক নাটক। দ্বিজেন্দ্রলাল রায় (১৮৬৩-১৯১৩) এক প্রখ্যাত বাঙালি কবি, নাট্যকার, গীতিকার।