Biography Of James Sadgwick In Bengali – জেমস স্যাডউইক এর জীবনী

Biography Of James Sadgwick In Bengali - জেমস স্যাডউইক এর জীবনী
Biography Of James Sadgwick In Bengali - জেমস স্যাডউইক এর জীবনী

আজ আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি মহান ব্যক্তিদের জীবনী সমগ্র। মহান ব্যক্তি আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা। তাঁদের জীবনের ক্ষুদ্রতম অংশগুলি আমাদের জন্য শিক্ষামূলক হতে পারে। বর্তমানে আমরা এই মহান ব্যক্তিদের ভুলতে বসেছি। যাঁরা যুগ যুগ ধরে তাদের কর্ম ও খ্যাতির মধ্য দিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন এবং জ্ঞান, বিজ্ঞান, শিল্প ও সাহিত্যের জগতে এক অনন্য অবদান রেখেছেন এবং তাঁদের শ্রেষ্ঠ গুণাবলী, চরিত্র দ্বারা দেশ ও জাতির গৌরব বৃদ্ধি করেছেন। সেইসব মহান ব্যক্তিদের মধ্যে অন্যতম ব্রিটিশ পদার্থবিজ্ঞানী জেমস স্যাডউইক (James Sadgwick) -এর সমগ্র জীবনী সম্পর্কে এখানে জানব।

Biography Of James Sadgwick In Bengali – জেমস স্যাডউইক এর জীবনী

নামজেমস স্যাডউইক
জন্ম২০ অক্টোবর, ১৮৯১
পিতাজে. জে. স্যাডউইক
জন্মস্থানবুলিংটন, যুক্তরাজ্য
পেশাপদার্থবিজ্ঞানী
জাতীয়তাব্রিটিশ
শিক্ষাম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়, কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়, Gonville & Caius College, University of Cambridge.
মৃত্যু২৪ জুলাই, ১৯৭৪ খ্রিঃ

জেমস স্যাডউইক কে ছিলেন? Who is James Sadgwick?

বর্তমান পারমাণবিক যুগের প্রবর্তন হয়েছিল যে কয়জন জগৎ বিখ্যাত মনীষী বিজ্ঞানীর গবেষণার আলোকে তাঁদের মধ্যে জেমস স্যাডউইকের অবদান বিশেষ ভাবে স্মরণযোগ্য। তাঁর আবিষ্কৃত নিউট্রন কণা মানুষকে দিয়েছে অফুরন্ত শক্তি-ভান্ডারের সন্ধান। পরমাণু গবেষণার ইতিহাসে ঘটিয়েছে পট পরিবর্তন।

প্রাচীন ভারতীয় মনীষী-বিজ্ঞানী কণাদ পদার্থের সূক্ষ্মতম ও অবিভাজ্য যে কণিকার নাম দিয়েছিলেন পরমাণু, প্রাচীন গ্রীক বিজ্ঞানী ডেমোক্রিটাস তারই নাম দিয়েছিলেন অ্যাটোমস।

পরবর্তীকালে, আঠারো শতকে ইংরাজ বিজ্ঞানী জন ডালটন ডেমোক্রিটাসের অ্যাটোমসকে, অ্যাটম শব্দে রূপান্তরিত করেন।

এভাবেই যুগের সোপান বেয়ে বিশ্ববিজ্ঞান ইতিহাসে পরমাণু ভাবনার ক্রমবিকাশ ঘটতে থাকে।

বিজ্ঞানী ডালটনও স্বীকার করেছিলেন, অ্যাই হল পদার্থের সূক্ষ্মতম এবং সর্বশেষ অবিভাজ্য অংশ। এই সূক্ষ্মতম কণায় পদার্থের সমগ্র বৈশিষ্ট্য বর্তমান থাকে।

এই অবিভাজ্য কণার সূত্র ধরেই পরমাণু সংক্রান্ত বিজ্ঞান গবেষণা ক্রমে আবর্তিত হতে থাকে।

আরও পড়ুন: মার্শাল ওয়ারেন নীরেনবার্গ জীবনী

এরপর উনিশ শতকের শেষ পাদে জার্মান বিজ্ঞানী রন্টজেনের এক্স-রশ্মি আবিষ্কারের সূত্র ধরে বিজ্ঞানী জে. জে. টমসন পরমাণুর মধ্যে আবিষ্কার করলেন ধনাত্মক আধানযুক্ত কণা ইলেকট্রনকে।

উদ্ঘাটিত হল এক মহাসত্য, পরমাণু অবিভাজ্য নয়, তার মধ্যে রয়েছে ধন বিদ্যুৎগর্ভরূপী কেন্দ্রক। আর এই কেন্দ্রককে কেন্দ্র করে আবর্তিত হচ্ছে ইলেকট্রন-কণা।

জানা গেল, যে কোনও বিদ্যুৎ বিহীন স্বাভাবিক পারমাণবিক স্তরেই রয়েছে সমান সংখ্যক ইলেকট্রন ও প্রোটন কণা।

এর পরেই বিজ্ঞানীদের মধ্যে প্রশ্ন দেখা দিল, এই ইলেকট্রন ও প্রোটন নামের পারমাণবিক কণা ছাড়াও পরমাণুর মধ্যে অপর কোন কণার অস্তিত্ব সম্ভব কিনা?

এই প্রশ্নের সঠিক উত্তরটি জানালেন পদার্থবিজ্ঞানী জেমস স্যাডউইক। বিজ্ঞানের এই নীরব সাধক সাধারণ এক ল্যাবরেটরিতে বসে পরমাণুর মধ্যে আবিষ্কার করলেন তৃতীয় একটি পারমাণবিক কণা। যার নাম দেওয়া হল নিউট্রন।

পরমাণু গবেষণার ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছে ইংলন্ডের ম্যাঞ্চেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম। মহাবিজ্ঞানী রাদারফোর্ড এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবরেটরিতেই প্রথম পরমাণুর নিউক্লিয়াসকে আবিষ্কার করেছিলেন। পরে তাঁরই সুযোগ্য প্রতিভাবান ছাত্র মোসেলে গবেষণায় প্রমাণ করেন, রাসায়নিক মৌলের বৈশিষ্ট্য প্রধানতঃ পারমাণবিক সংখ্যার ওপরে নির্ভরশীল। আর এই পারমাণবিক সংখ্যা হল প্রকৃতপক্ষে পরমাণুর নিউক্লিয়াসে উপস্থিত ধনাত্মক তড়িৎ আধানযুক্ত কণা বা প্রোটনের সংখ্যা।

জেমস স্যাডউইক এর শিক্ষাজীবন: James Sadgwick’s Educational Life

এই ম্যাঞ্চেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়েই ১৯০৯ খ্রিঃ স্নাতক শ্রেণীর ছাত্র ছিলেন স্যাডউইক। আর তাঁর শিক্ষক ছিলেন রাদারফোর্ড। তখন স্যাডউইকের বয়স মাত্র আঠারো।

রাদারফোর্ডের ক্লাস করতে করতেই বিজ্ঞানী হবার স্বপ্নে বিভোর হন তিনি। সেই স্বপ্নের তাড়নায় ১৯১০ খ্রিঃ পদার্থবিদ্যার স্নাতক শ্রেণীর পড়া শেষ করেই রাদারফোর্ডের ল্যাবরেটরিতে গবেষণার কাজে যুক্ত হলেন।

আর এই জগতবিখ্যাত ল্যাবরেটরিতে গবেষণার ফলেই নতুন করে লেখা হল পরমাণু গবেষণার ইতিহাস।

জেমস স্যাডউইক এর জন্ম: James Sadgwick’s Birthday

বিজ্ঞানী জেমস স্যাডউইকের জন্ম ১৮৯১ খ্রিঃ ২০শে অক্টোবর ইংলন্ডের বিখ্যাত শিল্প শহর ম্যাঞ্চেস্টারে।

জেমস স্যাডউইক এর পিতামাতা: James Sadgwick’s Parents

তাঁর বাবার নাম জে. জে. স্যাডউইক।

তাঁর পড়াশুনার শুরু স্থানীয় স্কুলে এবং এখানকার হাইস্কুল থেকেই মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে পদার্থবিদ্যায় অনার্স নিয়ে ভর্তি হলেন ম্যাঞ্চেস্টারের ভিক্টোরিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে। এখানেই তিনি শিক্ষক হিসেবে পেয়েছিলেন স্বয়ং রাদারফোর্ডকে।

স্নাতক হবার পর তাঁরই সহকারী হিসেবে যোগ দিলেন পদার্থ বিজ্ঞানের ল্যাবরেটরিতে।

১৯১১ খ্রিঃ তিনি যখন স্নাতকোত্তর ডিগ্রিলাভ করলেন, ততদিনে পদার্থ বিজ্ঞানের ইতিহাসে দুটি বৈপ্লবিক ঘটনা ঘটে গেছে।

আরও পড়ুন: জন বার্ডন স্যান্ডার্সন হলডেন এর জীবনী

তার একটি হল, রাদারফোর্ডের পরমাণুর গঠন সংক্রান্ত তত্ত্ব বিশ্ববিজ্ঞানের দরবারে উপস্থাপন। দ্বিতীয়টি হল, রাদারফোর্ডেরই ছাত্র ও সহকর্মী পদার্থবিজ্ঞানী নীলস বোর রাদারফোর্ডের পরমাণু তত্ত্ব ও প্লাঙ্কের সূত্র অনুসরণ করে পরমাণুর বিভিন্ন শক্তিস্তর ও ইলেকট্রনের বিন্যাসকে মডেলের সাহায্যে বিশ্ববিজ্ঞান ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। পরমাণু গবেষণার ক্ষেত্রে ছাত্র ও শিক্ষক দুজনের নামই সমান মর্যাদায় উচ্চারিত হয়ে চলেছে।

জেমস স্যাডউইক এর কর্ম জীবন: James Sadgwick’s Work Life

উৎসাহিত স্যাডউইক সেই সময়ই তাঁর জীবনের ভবিষ্যৎ পথটি স্থির করে ফেললেন। তিনি সংকল্প করলেন, পরমাণুর গবেষণাতেই নিজেকে নিয়োজিত করবেন।

১৯১৩ খ্রিঃ। সেই সময় জার্মানীর বিখ্যাত পরমাণুবিজ্ঞানী হানস গাইগার গবেষণা করছিলেন কার্লটেনবার্গ শহরে ফিজিকালিক টেকনিক রাইকসানসল্ট ল্যাবরেটরিতে।

সৌভাগ্যবশতঃ স্যাডউইক এই বিখ্যাত পরমাণু বিজ্ঞানীর সঙ্গে কাজের সুযোগ পেয়ে গেলেন।

ঈর্ষণীয় এই সুযোগের সদব্যবহার করতে মুহূর্তমাত্র দ্বিধা করলেন না স্যাডউইক। অবিলম্বে তিনি ল্যাবরেটরির কাজে যোগদান করলেন।

ঠিক সেই সময়েই ইউরোপের রাজনৈতিক আকাশ দুর্যোগের ঘনকালো মেঘে ঘোলাটে হয়ে ওঠে।

স্যাডউইক কাজে যোগ দেবার কিছু দিনের মধ্যেই জার্মানীর কাইজার বাহিনী ইউরোপের নানা দেশের সঙ্গে বিধ্বংসী যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে পড়ে। শুরু হয়ে যায় রক্তক্ষয়ী প্রথম বিশ্বযুদ্ধ।

স্যাডউইক জাতিতে খাঁটি ইংরাজ। জার্মানীর কাছে তিনি শত্রুপক্ষীয় ব্যক্তি। কাজেই ল্যাবরেটরি থেকে তাঁর আবাস পরিবর্তিত হল কুখ্যাত কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে।

আরও পড়ুন: ফিলিপ এডোয়ার্ড অ্যান্টন ভন লেনার্ড এর জীবনী

স্যাডউইকের সমস্ত অন্তর জুড়ে তখন পরমাণুর চিন্তার অনুরণন। তাই দুঃসহ অন্তরীণ অবস্থাতেও ক্যাম্পে বসে চলতে থাকে তাঁর পরমাণু সংক্রান্ত গবেষণার কাজ।

ভয়াবহ কনসেন্ট্রেশন শিবিরে কাটাতে হল চারটি বছর। ১৯১৮ খ্রিঃ জার্মানীর পরাজয়ের মধ্য দিয়ে প্রথম মহাযুদ্ধের অবসান হল। ভার্সাইয়ের চুক্তির ফলে জার্মানী হয়ে পড়ল কোণঠাসা। তাই যুদ্ধোত্তর জার্মানীর অভ্যন্তরীণ অবস্থা হয়ে দাঁড়াল ধূমায়িত আগ্নেয়গিরির মতো।

অন্তরীণ অবস্থা থেকে মুক্তি পেয়ে স্যাডউইক স্বদেশেই ফিরে যাওয়া মনস্থ করলেন। ১৯১৯ খ্রিঃ ইংলন্ডে ফিরে এলেন।

স্বয়ং রাদারফোর্ড সেই সময় পুরনো ম্যাঞ্চেস্টার ল্যাবে বসেই পরমাণু গবেষণার নতুন যুগের সূচনা করেছেন। কৃত্রিম উপায়ে রাসায়নিক মৌল তৈরি করেছেন।

তিনি প্রমাণ করেছেন, তীব্রগতি আলফা কণাকে যদি নাইট্রোজেন পরমাণুর ওপর প্রয়োগ করা যায় তাহলে নাইট্রোজেন নিউক্লিয়াস ভেঙ্গে গঠিত হয় হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন নিউক্লিয়াস।

স্যাডউইক ইংলন্ডে পৌঁছানোর কিছুকাল আগেই রাদারফোর্ড বিখ্যাত ক্যাভেন্ডিস ল্যাবরেটরির প্রায়োগিক পদার্থবিদ্যার বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন।

স্যাডউইক ফিরে এসেছেন জানতে পেরে তিনি তড়িঘড়ি ডেকে পাঠিয়ে ক্যাভেন্ডিসে বহাল করলেন তাঁকে।

এখানে কর্মরত অবস্থাতেই দু’বছরের মাথায় ১৯২১ খ্রিঃ ডক্টরেট হলেন স্যাডউইক। তখন সবে তিনি তেইশ বছরে পা দিয়েছেন।

একই বছরে কেমব্রিজে পদার্থবিদ্যার অধ্যাপনার কাজ শুরু করলেন। এখানে দু’বছর কাজ করবার পরেই ১৯২৩ খ্রিঃ ডাক এলো ক্যাভেন্ডিস থেকে! সেখানে তেজস্ক্রিয় গবেষণা বিভাগের সহ-অধিকর্তার পদে যোগ দিলেন স্যাডউইক।

যাকে বলে ট্রান্সমিউটেশন অব এলিমেন্টস অর্থাৎ রাসায়নিক মৌলের অবস্থান্তর প্রাপ্তি রাদারফোর্ড তা সম্পন্ন করেছিলেন আলফা কণার আঘাতে এক মৌলের পরমাণুকে অন্য মৌলের পরমাণুতে রূপদান করে।

প্রাক্তন প্রিয় ছাত্র স্যাডউইককে সহকারী রূপে পাওয়ায় তাঁর এই কাজে গতি বৃদ্ধি হল।

পরমাণুর নিউক্লিয়াসের ও পরমাণুর গঠনকে পুঙ্খানুপুঙ্খ রূপে জানার উদ্দেশ্যেই রাদারফোর্ড ক্রমাগত এই পরীক্ষা চালিয়ে চলেছিলেন। এই সময়েই আকস্মিক একটি ঘটনার ফলে স্যাডউইকের গবেষণা অভাবিতভাবে নতুন মাত্রা পেয়ে গেল।

বাল্টিমোরের হাওয়ার্ড কেলি হাসপাতাল থেকে স্যাডউইকের নামে এক ছোট্ট টিউবে কিছু পরিমাণ রেডিয়াম এসে পৌঁছল। আর এই রেডিয়ামের সাহায্যেই তিনি তড়িৎ পদ্ধতিতে নির্দিষ্ট ভোল্টেজের আলফা কণা তৈরি করে ফেললেন। তারপর ওই আলফা কণাকে বেরিলিয়াম ইত্যাদি হালকা রাসায়নিক মৌলের ওপর আঘাত করে প্রচন্ড শক্তি স্ফূরিত রশ্মির নিঃসরণ ঘটাতে সক্ষম হলেন।

কিন্তু ওই রশ্মি গামা রশ্মি কিনা সেই সংশয়ে আন্দোলিত হতে লাগল তাঁর মন। কারণ আলফা কণার আঘাতে বেরিলিয়াম কণার শরীর থেকে যে রশ্মি বিচ্ছুরিত হচ্ছে তা বিশেষ পদার্থ দ্বারা শোষিত হচ্ছে। অথচ গামা রশ্মি কখনও কোনও পদার্থ দ্বারা শোষিত হতে পারে না।

আরও পড়ুন: জনাস সল্ক এর জীবনী

স্যাডউইক পরীক্ষার পর পরীক্ষা চালিয়ে চললেন। একসময় রহস্যের আবরণ উন্মোচিত হয়। তিনি বুঝতে পারলেন, ওটা নামেই রশ্মি; আসলে তা হল অজানা কণার স্রোত।

তিনি আরও লক্ষ্য করলেন ওই কণার পারমাণবিক ভর প্রোটনের অনুরূপ। আবার ওই কণাটির কোনও তড়িৎলক্ষণও নেই- সম্পূর্ণভাবে তড়িৎহীন। তাই এই কণা গাইগার কাউন্টারে কোন বিক্ষেপ ঘটাচ্ছে না। তড়িৎ নিরপেক্ষ বা নিউট্রাল বলে এই কণাটির নাম রাখা হল নিউট্রন। এই ভাবেই স্যাডউইকের হাতে তৃতীয় পারমাণবিক কণা আবিষ্কৃত হল সময়টা ১৯৩২ খ্রিঃ। আর এই আবিষ্কারের সূত্রেই স্যাডউইককে ১৯৩৫ খ্রিঃ নোবেল পুরস্কারে সম্মানিত করা হল।

পরমাণু গবেষণায় নিউট্রনের আছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। নিউট্রন ছাড়াও পরমাণুর যে অপর দুই পারমাণবিক কণা ইলেকট্রন ও প্রোটন; তাদের রয়েছে ধনাত্মক বা ঋণাত্মক তড়িৎ প্রকাশ। কিন্তু নিউট্রনের তা নেই।

ফলে পারমাণবিক গবেষণায় নিউট্রনের সম্ভাবনা আরও বেশি ব্যাপক। সোজা কথায়, নিউট্রনকে দিয়ে অতি সহজেই পরমাণুর নিউক্লিয়াস অঞ্চলকে সরাসরি আঘাত করা চলে।

এই ভাবেই মানুষের পরমাণু শক্তি সাধনার নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হল নিউট্রন আবিষ্কারের মাধ্যমে। পরমাণু বোমা তৈরির প্রথম সোপানটি তৈরি হয়ে গেল।

ইতিপূর্বে পরমাণুবিজ্ঞানীরা পরমাণু সংক্রান্ত যেসব সমস্যার সম্মুখীন হতেন যেমন, পারমাণবিক ভর, পারমাণবিক ওজনের দশমিক হিসাব ইত্যাদি, নিউট্রন সব জটিল সমস্যার সমাধান করে দিল।

দেখতে দেখতে স্যাডউইকের গবেষণা পৃথিবীর বিজ্ঞানীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ল। তার ওপর নোবেল প্রাপ্তি তাঁকে দিল জগৎজোড়া খ্যাতি।

রাদারর্ফোড প্রিয় ছাত্রের এই কৃতিত্বে পরিতৃপ্ত হলেন। তাঁর হাতেই যে তৈরি হয়েছিল স্যাডউইকের ভবিষ্যৎ।

স্যাডউইকের নোবেল প্রাপ্তির দুবছর পরেই ১৯৩৭ খ্রিঃ রাদারফোর্ডের মৃত্যু হল। স্যাডউইক তারপর কেমব্রিজ থেকে চলে এলেন লিভারপুল বিশ্ববিদ্যালয়ে। যোগ দিলেন লায়ন জনস অধ্যাপক পদে কয়েকটি বছর নির্বিঘ্নেই কাটল।

ক্রমে উপস্থিত হল সর্বনাশা ১৯৪১ খ্রিঃ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পদদাপে কেঁপে উঠল ইউরোপের আকাশ বাতাস। নাৎসি জার্মানীর বিমান ঘন ঘন হানা দিতে শুরু করল ইংলন্ডের আকাশে। মৃত্যুর আশঙ্কায় কম্পমান সমস্ত মানুষ।

এই সময়েই ব্রিটিশ সরকার গোপনে পরমাণু বোমা নির্মাণের সংকল্প নিল। শুরু হয়ে গেল বিজ্ঞানীদের মধ্যে জোর তৎপরতা।

ব্রিটেন এই সময় পরমাণু বোমা তৈরির যে প্রকল্পটি গ্রহণ করে তা টিউব অ্যালয় নামে পরিচিত।

স্বাভাবিকভাবেই ব্রিটিশ সরকার প্রকল্প রূপায়ণের কাজে সহযোগিতার জন্য আমন্ত্রণ জানালেন স্যাডউইককে। টিউব অ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব তুলে দেওয়া হল তাঁর হাতে।

জেমস স্যাডউইক এর আবিষ্কার: Discovery by James Sadgwick

এর দুবছরের মধ্যেই ১৯৪৩ খ্রিঃ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও কানাডার মধ্যে পরমাণু বোমা সংক্রান্ত এক গোপন চুক্তি সম্পন্ন হল। গঠিত হল ত্রিপক্ষীয় পরমাণু বোমা প্রকল্প। এই প্রকল্পে স্যাডউইক হলেন ব্রিটেনের পরমাণু বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা।

১৯৩২ খ্রিঃ স্যাডউইক নিউট্রন কণা আবিষ্কার করেছিলেন। তাঁর এই আবিষ্কার মানুষের পরমাণু শক্তিসাধনায় নতুন জোয়ার আনবে এবং তার সমস্ত কিছু সংহত ও ব্যয়িত হবে মানবকল্যাণে, সেদিন এই ভাবনাই ছিল বিজ্ঞানী স্যাডউইকের সাধনার পরম তৃপ্তি ও প্রাপ্তি।

কিন্তু অদৃষ্টের কী নির্মম পরিহাস, নিউট্রন আবিষ্কারের মাত্র তেরো বছর পরেই ১৯৪৫ খ্রিঃ এই নিউট্রনকে নিয়েই তৈরি হয়ে গেল বিধ্বংসী পরমাণু বোমা। এবং অনতিবিলম্বেই তা নিক্ষিপ্ত হল জার্মানীর জনবহুল দুই শহর হিরোসিমা ও নাগাসাকিতে।

আরও পড়ুন: ব্লেজ পাস্কাল জীবনী

ত্রিপক্ষীয় চুক্তি হলেও পরমাণু বোমা তৈরির চূড়ান্ত কাজ করেছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

সম্পূর্ণ গোপনীয়তা বজায় রেখে নিউ মেক্সিকো রাজ্যের লস আলামাস অঞ্চলে জগদ্বিখ্যাত মার্কিন পরমাণুবিজ্ঞানী রবার্ট ওপেনহাইমারের তত্ত্বাবধানে তৈরি হয়েছিল বিশ্বের প্রথম পরমাণু বোমা। ১৯৪৫ খ্রিঃ মাঝামাঝি পর্যন্ত টানা চার বছরে সম্পূর্ণ হয়েছিল কাজটি।

১৯৪৫ খ্রিঃ ৬ আগস্ট হিরোসিমায় ফেলা হল লিটল বয় নামের পরমাণু বোমাটি। দুদিন পরেই ৯ই আগস্ট নাগাসাকিতে ফেলা হয় দ্বিতীয় বোমাটি। তার নাম দেওয়া হয়েছিল ফ্যাট ম্যান।

লক্ষ মানুষের মরণ-আর্তনাদে বিদীর্ণ হল আকাশ বাতাস। প্রবল আতঙ্কে শিহরিত হল বিশ্বমানবের অন্তরসত্তা। পৃথিবীর সকল প্রান্ত থেকে ঘৃণা ও ধিক্কার উচ্চারিত হল আমেরিকার এই পৈশাচিক আচরণের বিরুদ্ধে।

আর লিভারপুলের এক নির্জন ঘরে অসহনীয় বেদনায় বিদীর্ণ হতে থাকে স্যাডউইকের হৃদয়। তাঁর মানবকল্যাণমুখী আবিষ্কারের এমন ভয়াবহ পরিণাম যে তাঁকেই প্রত্যক্ষ করতে হবে অসহায় দর্শকের মতো এমন চিন্তা ছিল তাঁর স্বপ্নেরও অতীত। চিরদিনের মতো তাঁর মুখ থেকে হাসি মিলিয়ে গেল।

আরও পড়ুন: গ্যালিলিও গ্যালিলি জীবনী

এরপর যতদিন বেঁচে ছিলেন স্যাডউইক, কেউ তাঁর মুখে হাসির মৃদু রেখাও দেখতে পায়নি। স্বাভাবিক মানুষের মতোই অতন্ত্রসাধক বিজ্ঞানীর অভ্যস্ত প্রাত্যহিকতার মধ্যেই দিনগুলো অতিবাহিত হয়েছে তাঁর- কিন্তু জীবনের মূল সুর হয়ে গিয়েছিল বেসুরো। এতবড় ধ্বংসকান্ডের জন্য, লক্ষ লক্ষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মর্মান্তিক মৃত্যুর জন্য বিবেকের কাঠগড়ায় তিনি নিজেকেই অপরাধী সাব্যস্ত করেছিলেন।

জেমস স্যাডউইক এর পুরস্কার ও সম্মান: James Sadgwick’s Awards And Honors

নিউট্রন আবিষ্কার বিজ্ঞানী স্যাডউইক-এর অপরিসীম মানসিক বেদনা ও হতাশার কারণ হয়ে উঠলেও বাইরের জগৎ তাঁকে এই অসাধারণ কৃতিত্বের জন্য দু’হাত ভরে সম্মান জানাতে কার্পণ্য করল না।

নাইট উপাধিতে ভূষিত করা হল তাঁকে। তিনি হলেন নিরাপত্তা পরিষদের বিজ্ঞান উপদেষ্টা, ব্রিটেনে রাষ্ট্রসঙ্ঘের পরমাণু শক্তি কমিশনের মনোনীত প্রতিনিধি।

বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নানা ডিগ্রি ছাড়াও তিনি পেলেন রয়াল সোসাইটির কপলে পদক, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মেরিট পদক, ফিলাডেলফিয়ার ফ্রাঙ্কলিন ইনসটিটিউটের ফ্রাঙ্কলিন পদক। তাঁকে করা হল আমেরিকার ফিজিক্যাল সোসাইটির মাননীয় সদস্য।

সর্বোপরি ১৯৫৭ খ্রিঃ ব্রিটিশ সরকার স্যাডউইককে পরমাণু শক্তি বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ পদ দান করেন।

আরও পড়ুন: জেমস স্যাডউইক উইকিপিডিয়া

নিউট্রন আবিষ্কারের মাধ্যমে রাসায়নিক মৌলকে স্থানান্তর করণের পদ্ধতি উদ্ভাবন করে পরমাণু শক্তির গোড়াপত্তন করেছিলেন স্যাডউইক। তেজস্ক্রিয়তা বিষয়ে বহু গবেষণা নিবন্ধ ছাড়াও বিকিরণ ও তেজস্ক্রিয় পদার্থ নামে একটি বিখ্যাত বইও তিনি লেখেন। তিরাশি বছরের একটি সফল জীবন লাভ করেও জীবনের অন্তিম লগ্নে বিবেকের কাছে নিজেকে একজন অপরাধী বলেই তিনি মনে করতেন।

জেমস স্যাডউইক এর মৃত্যু: James Sadgwick’s Death

আগামীদিনে পরমাণু বোমায় মানব জাতির ভয়াবহ পরিণামের আতঙ্ক চোখে নিয়েই ১৯৭৪ খ্রিঃ পৃথিবী থেকে চির বিদায় নেন বিজ্ঞানী স্যাডউইক।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here