Bhimrao Ramji Ambedkar: আজ আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি মহান ব্যক্তিদের জীবনী সমগ্র। মহান ব্যক্তি আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা। তাঁদের জীবনের ক্ষুদ্রতম অংশগুলি আমাদের জন্য শিক্ষামূলক হতে পারে। বর্তমানে আমরা এই মহান ব্যক্তিদের ভুলতে বসেছি।
যাঁরা যুগ যুগ ধরে তাদের কর্ম ও খ্যাতির মধ্য দিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন এবং জ্ঞান, বিজ্ঞান, শিল্প ও সাহিত্যের জগতে এক অনন্য অবদান রেখেছেন এবং তাঁদের শ্রেষ্ঠ গুণাবলী, চরিত্র দ্বারা দেশ ও জাতির গৌরব বৃদ্ধি করেছেন। সেইসব মহান ব্যক্তিদের মধ্যে অন্যতম ভারভীয় সংবিধান রচয়িতা ভীমরাও রামজী আম্বেদকর (Bhimrao Ramji Ambedkar) -এর সমগ্র জীবনী সম্পর্কে এখানে জানব।
Bhimrao Ramji Ambedkar Biography in Bengali – ভীমরাও রামজী আম্বেদকর জীবনী
নাম | ভীমরাও রামজি আম্বেদকর (Bhimrao Ramji Ambedkar) |
জন্ম | 14 এপ্রিল 1891 |
পিতা | রামজি মালোজি সকপাল |
মাতা | ভীমাবাই সকপাল |
জন্মস্থান | মহোও, কেন্দ্রীয় প্রদেশ (এখন মধ্যপ্রদেশ), ব্রিটিশ ভারত |
জাতীয়তা | ভারতীয় |
পেশা | ভারভীয় সংবিধান রচয়িতা, সমাজ সংস্কারক, রাজনীতিবিদ, হরিজনবন্ধু, লেখক, বৌদ্ধধর্ম সংস্কারক |
মৃত্যু | 6 ডিসেম্বর 1956 (বয়স 65) |
ভীমরাও রামজি আম্বেদকর কে ছিলেন? Who is Bhimrao Ramji Ambedkar?
ভীমরাও রামজি আম্বেদকর (Bhimrao Ramji Ambedkar) (১৪ই এপ্রিল ১৮৯১ – ৬ই ডিসেম্বর ১৯৫৬), যিনি বাবাসাহেব আম্বেদকর নামেও পরিচিত, তিনি ছিলেন একজন ভারতীয় ব্যবহারশাস্ত্রজ্ঞ (জ্যুরিস্ট), রাজনৈতিক নেতা, বৌদ্ধ আন্দোলনকারী, দার্শনিক, চিন্তাবিদ, নৃতত্ত্ববিদ, ঐতিহাসিক, সুবক্তা, বিশিষ্ট লেখক, অর্থনীতিবিদ, পণ্ডিত, সম্পাদক, রাষ্ট্রবিপ্লবী ও বৌদ্ধ পুনর্জাগরণবাদী।
তিনি বাবাসাহেব নামেও পরিচিত ছিলেন। তিনি ভারতের সংবিধানের খসড়া কার্যনির্বাহক সমিতির সভাপতিও ছিলেন। তিনি ভারতীয় জাতীয়তাবাদী এবং ভারতের দলিত আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা। ইনি ভারতের সংবিধানের মুখ্য রচয়িতা। ২০১২ সালে হিস্ট্রি টি. ভি.১৮ আয়োজিত একটি বিশেষ অনুষ্ঠানে ভারতীয়দের ভোটের দ্বারা তিনি “শ্রেষ্ঠ ভারতীয়”ও নির্বাচিত হন।
ভীমরাও রামজি আম্বেদকর এর জন্ম: Bhimrao Ramji Ambedkar’s Birthday
ভীমরাও রামজী আম্বেদকর মধ্যপ্রদেশের ছোট্ট শহর মোউ। এখানেই ১৮৯১ খ্রিঃ ১৪ এপ্রিল জন্মগ্রহণ করেন ভারতীয় সমাজ ও রাজনীতিতে নবজাগরণের অন্যতম সৈনিকভীমরাও রামজী আম্বেদকর।
ভীমরাও রামজি আম্বেদকর এর পিতামাতা ও জন্মস্থান: Bhimrao Ramji Ambedkar’s Parents And Birth Place
ভীমের পিতা রামজী শকপাল ছিলেন মোউ সেনানিবাস স্কুলের প্রধান শিক্ষক। মাতার নাম ভীমাবাই। তিনি ছিলেন সরল ও ধর্মপরায়ন। রামজী ছিলেন তথাকথিত অস্পৃশ্য মাহার জাতির লোক। নিজের চেষ্টায় তিনি ভাল লেখাপড়া শিখে সেই সময়ের নর্মাল স্কুল থেকে শিক্ষকতার ডিপ্লোমা পেয়েছিলেন।
ভীমরাও রামজি আম্বেদকর এর ছোটবেলা: Bhimrao Ramji Ambedkar’s Childhood
সেই সূত্রেই তিনি সেনাবাহিনীর শিক্ষা বিভাগে সুবেদার মেজর পদে চাকরি পেয়েছিলেন। ভীমের যখন দুই বছর বয়স তখন তার পিতা চাকরি থেকে অবসর নেন। মাসিক ৫০ টাকা পেনসন নিয়ে তিনি সপরিবারে তাঁর আদি বাসভূমি কোঙ্কনের ডাপোলীতে চলে যান। এখানেই ভীম প্রাথমিক স্কুলে ভর্তি হন।
ভারতের কুসংস্করাচ্ছন্ন সমাজে সেই সময় অস্পৃশ্য মাহার জাতির একটি ছেলের পড়াশোনা করা যে কি যন্ত্রণা ও দুঃখের ছিল তা আজ কল্পনা করেও শিহরিত হতে হয়। বইখাতা নিয়ে ভীমকে ক্লাশের এককোণে দাঁড়িয়ে থাকতে হতো। ক্লাশে অন্যান্যদের সঙ্গে বসার অধিকার ছিল না।
তৃষ্ণা পেলে নিজের হাতে জল নিয়ে খাওয়া যেত না। উঁচুজাতের অন্য কোন ছেলে ওপর থেকে জল ঢেলে দিত, তাঁকে ওপরের দিকে হাঁ করে জল খেতে হত। স্লেট খাতা শিক্ষক স্পর্শ করতেন না।
আরও পড়ুন-
- স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী জীবনী
- ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর জীবনী
- মহাকবি কালিদাস জীবনী
- উইলিয়ম শেক্সপীয়র জীবনী
তিনি দূর থেকে স্লেট ও খাতার লেখা দেখতেন। এই দুঃসহ অপমানের মধ্যেই ভীম নিষ্ঠা নিয়ে নিজের পড়াশুনা করতে থাকেন। ভীমের ছয় বছর বয়সে মা মারা যান। তখন বাবা ও ভাইবোনদের সঙ্গে তাঁকেও সংসারের কাজ করতে হত।
রামজী তার ছেলেমেয়েদের শিক্ষার প্রতি খুবই মনোযোগী ছিলেন। তিনি তাদের বাড়িতে নিয়মিত পড়াতেন। মারাঠী ও ইংরাজিতে তার যথেষ্ট দখল ছিল। তিনি ছেলেদের ইংরাজি পড়তে ও ইংরাজীতে অনুবাদ করতে শেখাতেন। এছাড়া প্রত্যহ রামায়ণ মহাভারত, মহাত্মা কবীর ও সাধুসপ্তদের রচনা আবৃত্তি করে শোনাতেন।
সামাজিক অবিচার ও নানা অসুবিধার মধ্যে থেকে ভীমের অন্তরে সহনশীলতা, অধ্যবসায় ও মানসিক দৃঢ়তার সূত্রপাত হয়। স্কুলে ভীমের একজন শিক্ষকের পদবী ছিল আম্বেদকর।
তিনি তাঁকে খুব ভালবাসতেন এবং নানাভাবে সাহায্য করতেন। তখনকার সামাজিক নিয়ম অনুযায়ী আমবাবাদ গ্রামের অধিবাসী হিসেবে ভীমের পরিবারের পদবী ছিল আম্বাবাদেকর।
শিক্ষক মশায় স্কুলের খাতায় ভীমের পদবী বদল করে নিজের পদবী আম্বেদকর লিখে দেন। উত্তরকালে এই পদবীতেই তিনি পরিচিতি লাভ করেছিলেন ৷
ভীমরাও রামজি আম্বেদকর এর শিক্ষাজীবন: Bhimrao Ramji Ambedkar’s Educational Life
রামজী একটি নতুন চাকার পেয়ে সপরিবারে বম্বে চলে এসেছিলেন। এখানেই ভীম তার দাদার সঙ্গে এলফিলস্টোন হাইস্কুলে ভর্তি হন।
ছোট জাতের ছেলে বলে স্কুলে দেবভাষা সংস্কৃত পড়ার অধিকার ছিল না ভীমের। তাই বাধ্য হয়ে তাকে স্কুলে ফার্সিভাষা পড়তে হয়েছিল।
পরে তিনি নিজের চেষ্টায় সংস্কৃত শিখেছিলেন। ১৯০৭ খ্রিঃ এলফিলস্টোন স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাশ করেন আম্বেদকর। মাহার সমাজে এই ঘটনা আলোড়ন তুলল।
বম্বে শহরে সভা ডেকে আম্বেদকরকে অভিনন্দন জানানো হয় ৷ সমাজের তখনকার নিয়ম অনুযায়ী ১৭ বছর বয়সেই আম্বেদকরের বিয়ে হয়।
তার স্ত্রী রমাবাই-এর বয়স তখন নয় বছর। তিনি ছিলেন সৎ ও শান্ত স্বভাবের মেয়ে। আম্বেদকরের উন্নতিতে এই নীরব নারীর দান ছিল অতুলনীয়।
এলফিনস্টোন কলেজে আই.এ পড়বার সময় বম্বের উইলসন স্কুলের শিক্ষক মারাঠী লেখক ও সমাজসেবী কৃষ্ণাজী অর্জুন কেলুসকর-এর সঙ্গে কিশোর আম্বেদকরের পরিচয় হয়।
আম্বেদকরের ভবিষ্যৎ উন্নতিতে এই ভদ্রলোকের অবদান অপরিসীম। ১৯১২ খ্রিঃ এলফিনস্টোন কলেজ থেকে বি.এ. পাস করার পর আম্বেদকর কিছুকাল বরোদা মহারাজের সেনা বিভাগে লেফট্ন্যান্ট পদে চাকরি করেন।
ভীমরাও রামজি আম্বেদকর এর উচ্চশিক্ষা: Higher education of Bhimrao Ramji Ambedkar
এরপর বরোদা মহারাজের ছাত্রবৃত্তি নিয়ে তিনি ১৯১৩ খ্রিঃ উচ্চশিক্ষা লাভের উদ্দেশ্যে নিউইয়র্ক যাত্রা করেন। এখানে পৌছে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন।
তার পাঠ্যবিষয় ছিল নৃতত্ত্ব, দর্শন, সমাজ বিজ্ঞান, অর্থবিজ্ঞান ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান। ১৯১৫ খ্রিঃ আম্বেদকর এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম.এ ডিগ্রি লাভ করেন। পরের বছর ভারতের জাতীয় আয়-ব্যয়ের ওপর থিসিস লিখে জমা দেন। পরবর্তীকালে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে এই কাজের জন্য ডক্টরেট উপাধি দেয়।
পশ্চিমের মুক্ত সমাজের সংস্পর্শে এসে আম্বেদকর বঞ্চিতদের অধিকার আদায়ের সংগ্রামের প্রেরণা লাভ করেন। উচ্চতর শিক্ষালাভের উদ্দেশ্যে তিনি ১৯১৬ খ্রিঃ লন্ডনে আসেন। এখানে গ্রেস ইন-এ ব্যারিস্টারী এবং লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকস অ্যান্ড পলিটিক্যাল সায়েন্স এ অর্থনীতি নিয়ে এক সঙ্গে পড়া আরম্ভ করেন।
কিন্তু দুর্ভাগ্যবশতঃ ইতিমধ্যে বৃত্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় মাত্র ন’মাস ক্লাস করার পর তাকে ভারতে ফিরে আসতে হয়। বরোদা মহারাজের বৃত্তির সর্ত ছিল, আম্বেদকরকে দশবছর মহারাজের অধীনে চাকরি করতে হবে। দেশে ফিরে এসে আম্বেদকর মহারাজের সামরিক সচিবের পদে নিযুক্ত হলেন।
কিন্তু জাতপাতের বাছবিচারে কলুষিত চাকুরিস্থলের পরিবেশে বেশিদিন তার পক্ষে কাজ করা সম্ভব হল না। বাধ্য হয়ে চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে ১৯১৭ খ্রিঃ তিনি বম্বে চলে আসেন।
আরও পড়ুন-
- পিথাগোরাস এর জীবনী
- রাজচন্দ্র বসু জীবনী
- ভীমরাও রামজি আম্বেদকর – উইকিপিডিয়া
ইতিপূর্বে পিতা রামজী গত হয়েছিলেন। কাঁধের ওপরে নিজের সংসার। এই সময়ে বাড়িতে ছাত্র পড়িয়ে, শেয়ার বিক্রেতাদের পরামর্শ দিয়ে ও সংবাদপত্র ও পত্রিকায় প্রবন্ধ লিখে আম্বেদকরকে অর্থোপার্জন করতে হয়।
এই সময়ে তিনি অপ্রত্যাশিতভাবে আর এক দরদী দেশের রাজার সাহায্য লাভ করেন।
১৯২০ খ্রিঃ নাগপুরে এক সভায় দেশের দলিত জাতির উন্নতির উদ্দেশ্যে জোরালো বক্তৃতা করেন। তাঁর কথায় চিন্তার পরিচয় পেয়ে কোলাপুরের মহারাজা সাহু বুঝতে পারেন এই তরুণই দেশের দলিতদের মুক্তি আনবে।
তার সাহায্যে ১৯২০ খ্রিঃ আম্বেদকর লন্ডনে এসে আইন ও অর্থনীতির আরব্ধ পড়াশুনা ও গবেষণা সম্পূর্ণ করেন। ভারতের বিভিন্ন প্রদেশের মধ্যে রাষ্ট্রীয় অর্থের বন্টন ব্যবস্থা বিষয়ে থিসিস লিখে তিনি লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডি.এসসি ডিগ্রি লাভ করেন ১৯২৩ খ্রিঃ।
লন্ডন ছাড়ার পূর্বে ব্যারিস্টারীও পাস করেন। এবারে বম্বেতে আইন ব্যবসায় আরম্ভ করলেন। কিন্তু অস্পৃশ্যতার অভিশাপ তখনো তাকে তাড়া করে ফিরছে।
নিচু মাহার জাতির উকিলকে সকলেই এড়িয়ে চলে। কিন্তু আম্বেদকর সহজে দমবার পাত্র নন। আইনজীবী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করবার দৃঢ় সংকল্প গ্রহণ করেন।
আম্বেদকর বুঝতে পারছিলেন, দেশের সব জাতির মধ্যে ঐক্যের অভাবে দেশের উন্নতি বিঘ্নিত হচ্ছে। ব্যক্তি স্বাধীনতা, সমতা ও মৈত্রী, এই তিন আদর্শকে সমাজে রূপায়িত করতে না পারলে ভারত ও ভারতবাসীর উন্নতি সম্ভব নয়।
ভীমরাও রামজি আম্বেদকর এর কর্ম জীবন: Bhimrao Ramji Ambedkar’s Work Life
আইন ব্যবসায়ের সঙ্গে সঙ্গে দেশকে উন্নত ও শক্তিশালী করার বিষয়েও আম্বের ব্যাপকভাবে চিন্তাভাবনা শুরু করেন। ১৯২৪ খ্রিঃ তিনি তাঁর সহকর্মী ও অন্য সম্প্রদায়ের সমাজদরদী কতিপয় ব্যক্তিকে নিয়ে বহিষ্কৃত হিতকারিণী সভা নামে একটি সমিতি গঠন করেন।
এই সমিতির লক্ষ হল দলিতদের মধ্যে শিক্ষা ও সংস্কৃতির বিস্তার ; তাদের দারিদ্র্য দূরীকরণ ও অভাব অভিযোগ কর্তৃপক্ষের গোচরে এনে প্রতিকারের চেষ্টা করা। ১৯২৫ খ্রিঃ রত্নাগিরি জেলার মালওয়াঁতে অস্পৃশ্যদের প্রথম সম্মেলনে আম্বেদকর সভাপতিত্ব করেন।
এরপর তাঁর কাজের প্রতিষ্ঠা ও বিস্তারের উদ্দেশ্যে গোয়া যান। ১৯২৬ খ্রিঃ জেজুরীতে এক সভায় আম্বেদকর প্রস্তাব আনেন – অস্পৃশ্যদের জন্য উঁচু জাতির লোকালয় থেকে দূরে আলাদা বাসভূমি তৈরি করা হোক।
এই সময়ে মহারাষ্ট্রের তিনজন অ-ব্রাহ্মণ নেতা একটি পুস্তিকায় ব্রাহ্মণরাই দেশের সর্বনাশ করছে এই মর্মে বক্তব্য ছাপিয়ে বিলি করে।
পুনের ব্রাহ্মণ সম্প্রদায় উক্ত তিন নেতার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদের অভিযোগে আদালতে মামলা করে। এই মামলায় আম্বেদকর অ-ব্রাহ্মণদের পক্ষের উকিল হিসেবে এমন যুক্তিপূর্ণ ও জ্ঞানগর্ভ সওয়াল করেন যে ব্রাহ্মণরা মামলায় হেরে যান। এই মামলার পর তিনি রাতারাতি আইনজীবী হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন।
এই মামলার সামাজিক মূল্যও ছিল অপরিসীম। আম্বেদকর সমাজের তথাকথিত সংস্কারের চিন্তাতেই আবদ্ধ থাকেননি।
প্রচলিত কাঠামো ভেঙ্গে নতুন সমাজ গড়ে তোলার কথাই তিনি ভাবতেন। সে হবে এমন এক সমাজ যেখানে মানুষে মানুষে ভেদ থাকবে না, যেখানে সকলেই হবে সমান ও স্বাধীন।
নিজের দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় নিচু জাতির ব্যথা বেদনা ও বঞ্চনার কথা তিনি জানতে পেরেছিলেন। সেই কারণেই নতুন সমাজ গড়ার চিন্তা তাঁর মনে জাগরিত হয়েছিল।
দলিতদের উদ্দেশ্যে তিনি ঘোষণা করেছেন, “ তোমাদের প্রাপ্য অধিকার আবেদন নিবেদন করে লাভ করতে পারবে না। নিজের চেষ্টায় ও শক্তিতে সংগ্রামের মধ্য দিয়ে অধিকার ছিনিয়ে নিতে হবে। ভীরু মেষকেই বলি দেওয়া হয়। সিংহকে নয়। তোমাদের সিংহের শক্তি অর্জন করতে হবে। ” মাহাতে কোলাবা জেলায় সরকারী পুকুর আইন অনুসারে সকলের জন্যই উন্মুক্ত ছিল।
কিন্তু উঁচু জাতের হিন্দুরা অস্পৃশ্যদের পুকুরের জল স্পর্শ করতে দিত না। ১৯২৭ খ্রিঃ এই জেলায় অস্পৃশ্যদের সম্মেলন ডাকা হয়।
সভাপতিত্ব করেন আম্বেদকর। সম্মেলন চলাকালীন আম্বেদকরের নেতৃত্বে ২৫০০ অস্পৃশ্য প্রতিনিধি শহরের রাস্তায় শোভাযাত্রা করে সরকারী পুকুরে গিয়ে জলপান করেন।
এই ঘটনায় শহরের উঁচু জাতের হিন্দুরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। তারা বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে সম্মেলনের প্রতিনিধিদের ওপর চড়াও হয়ে প্রচন্ড মারধোর করে। মাহার যুবকরাও প্রতিশোধ নেবার জন্য তৈরি হল।
তাঁরা তাঁদের নেতা আম্বেদকরের অনুমতি চাইলে তিনি তাদের শাস্ত করে রক্তপাতের প্রতিহিংসা থেকে বিরত করেন। ১৯২৭ খ্রিঃ ২৫ শে ও ২৬ শে ডিসেম্বর মাহারদেব অস্পৃশ্য শ্রেণীর দ্বিতীয় সম্মেলন ডাকা হয়।
এই সম্মেলনে বিশাল এক জনসমাবেশে মনুর নামে প্রচলিত ঘৃণিত সামাজিক বিধি-বিধানের সমালোচনা করে বলা হয়, প্রচলিত হিন্দুশাস্ত্রে ব্রাহ্মণ ও উচ্চবর্ণের মানুষদের যে বিশেষ সুবিধা ভোগের অধিকার দেওয়া হয়েছে তা নীচ ও স্বার্থবুদ্ধি প্রসূত।
এই ব্যবস্থার ফলে সমাজে অসম জাতি বিভাগের দৃষ্ট ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে। এই ব্যবস্থার পরিবর্তন না হলে সমগ্র জাতির ধ্বংস অনিবার্য।
ধর্মের নামে অত্যাচার, অবিচার ও ভেদনীতিকে স্থায়ী করার প্রতিবাদে মনু সংহিতা প্রকাশ। সম্মেলনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
এই সভায় আম্বেদকরের নেতৃত্বে সিদ্ধান্ত নেওয়া হব, অস্পৃশারা বংশগত পেশা হিসেবে জীবজন্তুর মৃতদেহ অপসারণ করবে না। প্রয়োজনমত উঁচু জাতির লোকদেরও এই কাজ করতে হবে।
আনুষ্ঠানিক সম্মেলন শেষ হলে আগ্বেদকর ৩০০০ অস্পৃশ্য শ্রেণীর নারীসমাবেশে বক্তৃতা করেন। দলিত শ্রেণীদের নারীদের সমাজ সচেতন করে তোলার উদ্দেশে।
ভারতে সেটিই ছিল সর্বপ্রথম সভা। সভার শেষে দলিতদের পূর্ণ সামাজিক স্বাধীনতা অর্জনের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয় মাহারদের এই সম্মেলনে অনুগামীরা আগ্বেকরকে বাবাসাহেব উপাধিতে ভূষিত করেন।
১৯২৮ খ্রিঃ আম্বেদকর বম্বের সরকারী আইন কলেজে আংশিক সময়ের জন্য অধ্যাপনার কাজ গ্রহণ করেন। পরিবার প্রতিপালনের জন্য বাধা হয়েই তাঁকে এই কাজ নিতে হয়েছিল।
নাগরিক অধিকারের লড়াইয়ে পাশাপাশি আম্বেদকর অস্পৃশ্যদের হিন্দু মন্দিরে প্রবেশের অধিকার আন্দোলন আরম্ভ করেন।
এই উদ্দেশ্যে তিনি দেশহিতৈষী সংস্কারক ও চিন্তাবিদদের শুভবুদ্ধির প্রতিও আবেদন জানান। ১৯২৭ খ্রিঃ জুন মাসে বম্বের ঠাকুরদ্বারের নতুন মন্দির উদ্বোধন হলে আম্বেদকর তার কতিপয় অনুগামীকে নিয়ে সেখানে যান।
মন্দিরের প্রধানের সঙ্গে আগে থেকে যোগাযোগ করে যাওয়া সত্ত্বেও আম্বেদকরকে চরমভাবে লাঞ্ছিত হয়ে ফিরে আসতে হয়।
১৯২৭ খ্রিঃ নভেম্বর মাসে এই মন্দিরে সর্বশ্রেণীর হিন্দু জনগণের প্রবেশের সমর্থনকারীদের এক সভা ডাকা হয়। এই সভায় সভাপতির ভাষণে আম্বেদকর বলেন, “ হিন্দুমন্দিরে হিন্দু দেবতার পূজা করার অধিকার সব হিন্দুরই থাকা উচিত।
দক্ষিণ আফ্রিকায় স্বেতাঙ্গদের সঙ্গে কৃষ্ণাঙ্গদের গাড়িতে এক কামরায় চড়তে না দেওয়ার নীতিকে হিন্দুরা কঠোরভাবে নিন্দা করেছে।
এই অবস্থায় স্বজাতীয় কোন হিন্দুকে তাদের সঙ্গে মন্দিরে প্রবেশ করতে না দেওয়ার চেষ্টা তাদের দুমুখো নীতিরই প্রমাণ করে। … এটা সত্য যে অস্পৃশ্যদের প্রবেশে মন্দির কলুষিত হয় না। দেবতার পবিত্রতাও নষ্ট হয় না। সেই জন্য আমরা আলাদা মন্দির গড়তে উৎসাহী নই।
আমরা অন্য হিন্দুদের সঙ্গে একই মন্দিরে পূজা করতে আগ্রহী। . আইন অনুসারে অস্পৃশ্যদের মন্দির প্রবেশে বাধা দেওয়া যায় না। হিন্দু মন্দির সব হিন্দুদের। তাদের অস্পৃশ্য বা স্পৃশ্য যাই ভাবা হোক না কেন। … হিন্দুত্বের বিকাশে ও গরিমা বৃদ্ধিতে বাল্মীকি, চোখামেলা, রোহিদাস প্রভৃতি অস্পৃশ্য বংশজাত সন্তানদেরও প্রভূত অবদান রয়েছে। এই অবদান ব্রাহ্মণ বংশীয় বশিষ্ট, ক্ষত্রিয় বংশীয় শ্ৰীকৃষ্ণ, বৈশ্য বংশীয় হর্ষের ও শূদ্র তুকারামের অবদানের সঙ্গে তুলনীয়। … মাহার বীর সিড়াক মাহারের মত অনেক অস্পৃশ্য সন্তান হিন্দুত্বকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন।
হিন্দুত্ব বিস্তার লাভ করেছে, গৌরব লাভ করেছে তথাকথিত স্পৃশ্য, অস্পৃশ্য সব হিন্দুর ত্যাগ ও চেষ্টার মধ্য দিয়ে। এই কারণেই সকল হিন্দুমন্দিরে হিন্দুমাত্রেরই প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা দরকার। ” আম্বেদকরের পরিচালনায় নাসিকে কালারাম মন্দির প্রবেশের আন্দোলন ব্যাপক ও দীর্ঘস্থায়ী হয়েছিল।
১৯৩০ খ্রীঃ ১২ ই মার্চ গান্ধীজি আইন অমান্য আন্দোলনে ডান্ডী অভিযান শুরু করেন। এর দশ দিন আগেই নাসিকের বিখ্যাত কালারাম মন্দিরে অস্পৃশ্যদের প্রবেশের জন্য আম্বেদকরের নেতৃত্বে সত্যাগ্রহের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
১৫,০০০ হাজার স্বেচ্ছাসেবক স্বেচ্ছাসেবিকার দীর্ঘ এক মাইলব্যাপী শোভাযাত্রা মন্দিরের দিকে অগ্রসর হয়।
মন্দিরের বন্ধ দরজার সামনে দীর্ঘ একমাস অবস্থান চলে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে নাসিক শহরে উঁচু জাত ও নীচু জাতের মধ্যে প্রচন্ড সংঘর্ষ বাঁধে।
এই ঘটনার পরেও ১৯৩০ খ্রিঃ নাগপুরের সভায় সভাপতির ভাষণে আম্বেদকর জানান, বর্ণ হিন্দুদের সমস্ত রকম অপমান ও অত্যাচার সত্ত্বেও তিনি নিজের হিন্দু পরিচয় ত্যাগ করতে চান না।
১৯৩২ খ্রিঃ ইংরাজ সরকার দলিত হিন্দু সমাজের মধ্যে পৃথক ভোটে প্রতিনিধি নির্বাচনের সাময়িক সুবিধা দেয়। কিন্তু গান্ধীজির বিরুদ্ধাচরণের ফলে দলিতদের
পৃথক ভোটের অধিকার বাতিল হয়। পরিবর্তে হিন্দু সমাজের মধ্যে আইন সভাতে দলিতদের সদস্য সংখ্যা বাড়িয়ে দেওয়া হয়।
১৯৩২ খ্রিঃ আম্বেদকরের আন্দোলনের ফলে কংগ্রেস সরকার শাসিত বম্বে ও মাদ্রাজ প্রদেশে ‘মন্দির প্রবেশ ‘ আইন পাশ করা হয়।
১৯৩৪ খ্রিঃ রঙ্গ আইয়ার কেন্দ্রীয় আইন-সভায় মন্দির প্রবেশ শীর্ষক একটি আইনের প্রস্তাব পেশ করেন। ভারতে ব্রিটিশ শাসনের আগে দলিতদের কোন প্রকার লেখাপড়ার সুযোগ ছিল না।
তাদের এই সুযোগ আসে ১৮১৫ খ্রিঃ। এই সময়ে ইংরাজ সরকার সাধারণের শিক্ষার জন্য স্কুল খোলার ব্যবস্থা করে। দলিতদের শিক্ষার জন্য আম্বেদকর অন্যভাবেও কাজ করেছিলেন।
১৯২৮ খ্রিঃ তিনি দুটি ছাত্রাবাস স্থাপন করেন। ওই বছরেই বহিষ্কৃত হিতকারিণী সভা তুলে দিয়ে দলিতশ্রেণী শিক্ষা সমিতি নামে নতুন প্রতিষ্ঠান গঠন করেন।
এই সমিতির আবেদনে সাড়া দিয়ে ১৯২৮ খ্রিঃ বম্বে সরকার দলিত শ্রেণীর ছাত্রদের জন্য পাঁচটি ছাত্রাবাস স্থাপনের টাকা মঞ্জুর করে দায়িত্ব এই সমিতির ওপর ন্যস্ত করেন।
ভীমরাও রামজি আম্বেদকর এর রাজনৈতিক জীবন: Bhimrao Ramji Ambedkar’s Political Life
দলিতদের শিক্ষা বিস্তারের সুযোগ তৈরি করা আম্বেদকরের জীবনের অন্যতম ব্রত হয়ে উঠেছিল ৷ রাজনীতি ও সমাজ সেবার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ায় ১৯৩৮ খ্রিঃ তিনি বম্বের সরকারী ল’কলেজের অধ্যক্ষের পদ থেকে অবসর নেন।
নীচ অস্পৃশ্য দলিতদের প্রধান জীবিকা ছিল কৃষিশ্রমিকের কাজ ও কারখানার মজুরের কাজ। এই জন্য আম্বেদকর কৃষি ও কারখানা শ্রমিকদের সুবিধা ও কল্যাণের জন্য বিশেষভাবে সচেষ্ট হন।
বম্বের আইন পরিষদের সদস্য হিসেবে তিনি ভূমিদাসপ্রথা তুলে দেবার জন্য পরিষদে একটি বিলের প্রস্তাব দেন ১৯৩৫ খ্রিঃ ভারত শাসন আইনে। জাতীয় কংগ্রেস সরকার বম্বে প্রদেশে ক্ষমতায় আসে ১৯৩৭ খ্রিঃ।
পরের বছর আম্বেদকর মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে ভূমিবন্টন ব্যবস্থার সংস্কারের জন্য জোরালো আবেদন জানান। আম্বেদকরের এই আবেদন সফল হয়েছিল বছর পরে।
বম্বের আইন সভা ভূমি বন্দোবস্তের আমূল সংস্কার করেছিল। কলকারখানার শ্রমিক মজুরদের জন্যও আম্বেদকর বহুবিধ কাজ করেছেন।
১৯৩৬ খ্রিঃ তিনি মেহনতি জনতার প্রতিনিধি হিসেবে স্বাধীন শ্রমিকদল গঠন করেন। এই দলের পক্ষে কারখানা শ্রমিক, কৃষি মজুর ও অল্প আয়ের মধ্যবিত্তদের কল্যাণের জন্য সুচিন্তিত কর্মসূচী ঘোষণা করেন।
১৯৪২ খ্রিঃ আম্বেদকর নাগপুরে সারা ভারত দলিত শ্রেণী সম্মেলনে অংশ গ্রহণ করেন। এই সময়েই তিনি বড়লাটের শাসন পরিষদে শ্রমসদস্য হিসেবে নিয়োগপত্রটি
পান। ওই বছরেই আগস্ট মাসে তিনি দিল্লিতে শাসন পরিষদে সদস্য হিসেবে কাজ শুরু করেন। এই পদে থাকাকালীন তিনি শ্রমিকদের সুবিধা ও স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য বহুবিধ ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন। ইতিপূর্বে শ্রমিকদের জন্য এত ব্যাপক কার্যকরী ব্যবস্থার কথা আর কোন ভারতীয় নেতা ভাবেন নি।
তাঁর প্রবর্তিত অনেক ব্যবস্থা এখনও পর্যন্ত শ্রমিক কল্যাণের ক্ষেত্রে আদর্শ বলে বিবেচিত হয়ে থাকে। আম্বেদকবের অক্লান্ত চেষ্টার ফলেই ভারতীয় শ্রমিক সমিতি সংশোধনী বিল পাস হয় ১৯৪৬ খ্রিঃ।
এর ফলে ভারতবর্ষে প্রথম শিল্প শ্রমিকদের সমিতি স্বীকৃতি লাভ করে। শ্রমজীবী নারীদের কল্যাণার্থে তিনি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিল পাস করেন ১৯৪৩ খ্রিঃ।
এর ফলে গর্ভবর্তী মহিলা কর্মীদের জন্য ১৬ সপ্তাহ ছুটির ব্যবস্থা হয়। গর্ভবর্তী অবস্থায় দশ সপ্তাহ ও সন্তান প্রসবের পর ছয় সপ্তাহ। এই ভাবে আম্বেদকব দেশের শ্রমব্যবস্থাকে সামস্তযুগের প্রভাবমুক্ত করে আধুনি যুগের উপযোগী করে তোলার পথ উন্মুক্ত করেন। সমাজতত্ত্ব বিষয়ে আম্বেদকরের গভীর জ্ঞান ছিল।
তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, সমাজ ও দেশের উন্নতির জন্যই পিছিয়ে পড়া শ্রেণীগুলির উন্নতিসাধন জরুরী। ১৯৩০ খ্রিঃ লন্ডনে প্রথম গোলটেবিল বৈঠক বসে।
এই সভায় সভাপতিত্ব করেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ব্যামজে ম্যাকডোল্যান্ড। এই বৈঠকে আম্বেদকরের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ভারতের দুরবস্থা, ইংরাজ শাসনের অপদার্থতা ও ব্যর্থতার চিত্র তিনি নির্ভীকভাবে তুলে ধরেছিলেন। এই গোলটেবিল বৈঠকের বিবরণ শুনে গান্ধীজি মন্তব করেছিলেন, আম্বেদকরের দেশপ্রেম অতুলনীয়। দেশে স্বাধীনতার জন্য আম্বেদকর জোরালো বক্তব্য রাখেন।
আরও পড়ুন-
সেই সঙ্গে স্বাধীন ভারতে বঞ্চিত দলিতদের নিরাপত্তা ও উন্নতির জন্যও সুচিন্তিত বক্তব্য পেশ করেন। আম্বেদকর দলিতদের উন্নতির জন্য সচেষ্ট হলেও সারা ভারতের উন্নতির কথা তিনি কখনো বিস্মৃত হননি।
১৯৩২ খ্রিঃ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী প্রস্তাবিত ভারতশাসন ব্যবস্থায় বিভিন্ন শ্রেণীর মধ্যে আইনসভার আসন বন্টন ঘোষণা করেন। মুসলমান, শিখ, অ্যাংলো ইন্ডিয়ান, খ্রিস্টানদের জন্য আসনে আলাদাভাবে নিজেদের ভোটে প্রতিনিধি নির্বাচনের অধিকারও এদের সকলকে দেওয়া হয়।
সাময়িকভাবে হলেও দলিতদের আসন ও আলাদা ভোটের অধিকার দেওয়া হয়। এ ছাড়াও দলিতরা যাতে হিন্দু সমাজ থেকে আলাদা হয়ে না যায় তার জন্য দলিতদের আলাদা ভোটের জন্য নতুন পদ্ধতির প্রবর্তন করা হয়।
এই ব্যবস্থার ফলে দলিতদের কিছু রাজনৈতিকও নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত হল। টানা কয়েক বছরের অমানুষিক পরিশ্রমে আম্বেদকরের স্বাস্থ্য ক্রমশই ভেঙ্গে পড়ছিল।
কিছুদিনের জন্য তাকে বিশ্রাম ও ডাক্তারের চিকিৎসা নিতে হল। ১৯৩৪ খ্রিঃ মাঝামাঝি সময়ে তিনি আবার আইন ব্যবসা শুরু করেন। পাশাপাশি আইন কলেজেও অধ্যাপনার কাজ নেন।
দীর্ঘ দশ বছর ধরে আম্বেদকর হিন্দু সমাজের দলিতদের উন্নতির জন্য অক্লান্ত সংগ্রাম করেছেন। দলিতদের নাগরিক অধিকারের জন্য, মন্দিরে প্রবেশের অধিকারের জন্য, তাদের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের জন্য নিরলস চেষ্টা করেছেন।
সমাজের এই সব কাজের চাপে সংসারের কাজে বিশেষ মন দিতে পারতেন না। সমস্ত দায়িত্বই বহন করতেন সুযোগ্য পত্নী রমা বাই। ১৯৩৫ খ্রিঃ রমা বাই অসুস্থ হয়ে পড়লেন। তার জন্য উপযুক্ত চিকিৎসারও ব্যবস্থা হয়েছিল। কিন্তু কোন ফল হল না। সেই বছরই ২৭ শে মে রমা বাই পরলোক গমন করেন।
স্ত্রী বিয়োগের পর ১৯৩৫ খ্রিঃ ১ লা জুন বম্বে সরকার আম্বেদকরকে বম্বে সরকারী কলেজের অধ্যক্ষপদে নিযুক্ত করেন।
এই দায়িত্ব পালনের সঙ্গে সঙ্গে তাকে দলিতদের স্বার্থে অসমাপ্ত কাজের জন্য পরিশ্রম করে যেতে হয়। ১৯৩৫ খ্রিঃ ভারতের প্রদেশগুলিকে স্বায়ত্বশাসন দেওয়া হয়।
শাসন ব্যবস্থায় প্রাদেশিক নির্বাচনের সুযোগ আসে। এই নির্বাচনে অংশ গ্রহণের জন্য আম্বেদকর ১৯৩৬ খ্রিঃ স্বাধীন শ্রমিক দল গঠন করেন। এই দলের কর্মসূচী ছিল ভূমিহীন কৃষক, গরীব বাড়ি-ভাড়াটে, সাধারণ চাষী ও মজুরদের দুঃখ-দুর্দশা দূর করা।
১৯৩৫ খ্রিঃ নতুন ভারত শাসন আইনের জন্য আম্বেদকর ভারতবর্ষের দলিত অস্পৃশ্য জাতিগুলির একটি তালিকা বা তপসিল তৈরি করেন।
ব্রিটিশ সরকার এই তালিকাভুক্ত দলিত জাতিগুলিকে তপসিলভুক্ত জাতি নামে অভিহিত করে। এই জাতিগুলির জন্য সংরক্ষণের সুবিধাও নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়।
প্রাদেশিক আইনসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৩৭ খ্রিঃ গোড়ার দিকে। আম্বেদকরের স্বাধীন শ্রমিক দল ১৭ টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে এবং ১৫ টি আসনে জয়লাভ করে।
ভীমরাও রামজি আম্বেদকর এর মৃত্যু: Bhimrao Ramji Ambedkar’s Death
৬ই ডিসেম্বর ১৯৫৬ ভীমরাও রামজি আম্বেদকর এর জীবনাবসান হয়।
1. আম্বেদকর রচিত দুটি গ্রন্থের নাম?
উত্তর- আম্বেদকর রচিত দুটি গ্রন্থের নাম হলো ‘হু ওয়ের দ্য শূদ্র ‘ এবং ‘দ্য অস্পৃশ্য’।
2. বি আর আম্বেদকর কেন বিখ্যাত?
উত্তর- বি আর আম্বেদকর ভারতের প্রথম আইনমন্ত্রী, ভারতীয় সংবিধানের রূপকার। তবে সবচেয়ে আগে তার যে পরিচয়টি দেয়া দরকার তা হলো, বর্ণবৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব। ১৯৯০ সালে ভারতের সর্বোচ্চ বেসামরিক উপাধি ‘ভারতরত্ন’-তে ভূষিত করা হয় তাকে।