Bankimchandra Chattopadhyay: আজ আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি মহান ব্যক্তিদের জীবনী সমগ্র। মহান ব্যক্তি আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা। তাঁদের জীবনের ক্ষুদ্রতম অংশগুলি আমাদের জন্য শিক্ষামূলক হতে পারে। বর্তমানে আমরা এই মহান ব্যক্তিদের ভুলতে বসেছি। যাঁরা যুগ যুগ ধরে তাদের কর্ম ও খ্যাতির মধ্য দিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন এবং জ্ঞান, বিজ্ঞান, শিল্প ও সাহিত্যের জগতে এক অনন্য অবদান রেখেছেন এবং তাঁদের শ্রেষ্ঠ গুণাবলী, চরিত্র দ্বারা দেশ ও জাতির গৌরব বৃদ্ধি করেছেন। সেইসব মহান ব্যক্তিদের মধ্যে অন্যতম বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (Bankimchandra Chattopadhyay) -এর সমগ্র জীবনী সম্পর্কে এখানে জানব।
Bankimchandra Chattopadhyay Biography In Bengali – বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় জীবনী
নাম | বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় |
জন্ম তারিখ | ২৬ শে জুন ১৮৩৮ |
জন্ম স্থান | উত্তর ২৪ পরগনা জেলা |
পিতার নাম | যাদবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় |
মাতার নাম | দূর্গাদেবী |
জাতীয়তা | ভারতীয় |
ধর্ম | হিন্দু |
জাতি | বাঙালি |
উপাধি | সাহিত্য সম্রাট |
ছদ্মনাম | কমলাকান্ত |
কে ছিলেন | বাঙালি ঔপন্যাসিক |
মৃত্যু | ৮-ই এপ্রিল, ১৮৯৪ |
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এর জন্ম স্থান ও পিতামাতা: Birth Place And Parents Of Bankimchandra Chattopadhyay
বাংলা সাহিত্যের সর্বশ্রেষ্ঠ ঔপন্যাসিক বঙ্কিমচন্দ্ৰ চট্টোপাধ্যায় ১৮৩৮ খ্রিঃ ২৬ শে জুন, বাংলা সন ১২৪৫, ১৩ ই আষাঢ় নৈহাটির কাঁঠালপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর পিতা যাদবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় মেদিনীপুরে ডেপুটি কালেক্টর পদে চাকুরি করতেন।
বঙ্কিমচন্দ্র ছিলেন যাদবচন্দ্রের তৃতীয় পুত্র। তাঁর প্রথম ও দ্বিতীয় পুত্র যথাক্রমে শ্যামাচরণ ও সঞ্জীবচন্দ্রের মধ্যে লেখক হিসেবে সঞ্জীবচন্দ্র খ্যাতি লাভ করেছিলেন।
বঙ্কিমচন্দ্রের কনিষ্ঠ ভ্রাতা পূর্ণচন্দ্র। পরবর্তীকালে বঙ্কিম- জীবনের বহু অজ্ঞাত মূল্যবান তথ্য তাঁর কাছ থেকে জানা সম্ভব হয়েছে।
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এর ছোটবেলা: Bankimchandra Chattopadhyay’s Childhood
ছয় বৎসর বয়স পর্যন্ত বঙ্কিমচন্দ্ৰ পৈতৃক নিবাস কাঁঠাল পাড়াতেই থাকেন। পাঁচ বছর বয়সে এখানেই তাঁর হাতেখড়ি হয় কুলপুরোহিত বিশ্বন্তর ভট্টাচার্যের কাছে। শিশুবয়স থেকেই বঙ্কিমচন্দ্রের অসাধারণ মেধার পরিচয় পাওয়া যায়। তিনি একদিনেই বাংলা বর্ণমালা আয়ত্ত করেছিলেন।
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এর প্রাথমিক শিক্ষাজীবন: Bankimchandra Chattopadhyay’s Primary Educational Life
পুত্রের অসাধারণ প্রতিভার পরিচয় পেয়ে যাদবচন্দ্র তার শিক্ষার ব্যাপারে খুবই সতর্ক ও যত্নবান ছিলেন। ১৮৪৪ খ্রিঃ ছয় বছর বয়সে বঙ্কিমচন্দ্র পিতার কর্মস্থল মেদিনীপুরে এসে কলেজিয়েট স্কুলে ভর্তি হন।
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এর বিবাহ জীবন ও পরিবার: Bankimchandra Chattopadhyay’s Marriage Life And Family
নম্র ব্যবহার ও নিরীহ প্রকৃতির জন্য অতি অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি এখানে সকলের প্রিয়ভাজন হয়ে ওঠেন। ক্লাসের পাঠেও বিশেষ কৃতিত্ব দেখিয়ে তিনি সকলকে চমৎকৃত করেন।
১৮৪৯ খ্রিঃ বঙ্কিম আবার কাঁঠাল পাড়ায় ফিরে আসেন। এই সালের ফেব্রুয়ারী মাসেই নারায়ণপুর গ্রাম নিবাসী পাঁচ বছরের এক বালিকার সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। বিয়ের সময়ে বঙ্কিমের বয়স হয়েছিল এগারো।
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এর প্রথম জীবন: Bankimchandra Chattopadhyay’s Early Life
১৮৫৩ খ্রিঃ বঙ্কিমের জীবনে বিশেষ উল্লেখযোগ্য। এই বছরেই সংবাদ প্রভাকর পত্রিকার কবিতা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে কুড়িটাকা পারিতোষিক লাভ করেন।
তাঁর কবিতার নাম ছিল- “কামিনীর উক্তি। তোমাতে লৌ ষড়ঋতু”। কবিতাটি যথারীতি সংবাদ প্রভাকরে মুদ্রিত হয়।
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এর উচ্চশিক্ষা : Bankimchandra Chattopadhyay’s Higher Education
উল্লেখযোগ্য যে হুগলী কলেজে পড়ার কালেই বঙ্কিমচন্দ্র কবিবর ঈশ্বর গুপ্তের আদর্শে সংবাদ প্রভাকর ও সংবাদ সাধুরঞ্জনে গদ্য ও পদ্য রচনা আরম্ভ করেন। পরে তাঁর বহু গদ্য ও পদ্য রচনা এই দুই কাগজে প্রকাশিত হয়।
হুগলী কলেজে সিনিয়র বৃত্তি পরীক্ষায় (১৮৫৬ খ্রিঃ) সকল বিষয়ে বিশেষ কৃতিত্ব প্রদর্শন করে বঙ্কিমচন্দ্র দুই বছরের জন্য কুড়িটাকা বৃত্তি লাভ করেন। এই বৎসরই তিনি হুগলী কলেজ পরিত্যাগ করে আইন পড়বার জন্য কলকাতায় প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন। একই বছরে তাঁর ললিতা, পুরাকালিক গল্প, তথা মানস নামক কবিতা পুস্তক প্রকাশিত হয়।
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এর রচনা: Written by Bankimchandra Chattopadhyay
তাঁর গদ্য, পদ্য রচনা প্রকাশে কবিবর ঈশ্বর গুপ্তের বিশেষ সহায়তার কথা পরবর্তীকালে মুক্তকণ্ঠে তিনি প্রকাশ করেন।
১৮৫৭ খ্রিঃ জানুয়ারী মাসে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এন্ট্রান্স বা প্রবেশিকা পরীক্ষা প্রবর্তন করেন।
প্রেসিডেন্সি কলেজের আইন বিভাগ থেকে এন্ট্রান্স পরীক্ষা দিয়ে বঙ্কিমচন্দ্র প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। পরের বছর ১৮৫৮ খ্রিঃ প্রথমবারের মত বি. এ পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়। মোট দশজন ছাত্র প্রথমবারে পরীক্ষা দিয়েছিলেন।
উত্তীর্ণ হয়েছিলেন কেবলমাত্র বঙ্কিমচন্দ্র ও যদুনাথ বসু। এরপর বঙ্কিমচন্দ্র আইন পরীক্ষা দেবার জন্য প্রস্তুত হতে থাকেন। কিন্তু পরীক্ষার আগেই তিনি সেই বছরেই যশোর জেলার ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও ডেপুটিকালেক্টর হিসেবে সরকারী চাকরিতে যোগ দেন।
বারো বছর পরে চাকুরিরত অবস্থায় ১৮৬৯ খ্রিঃ তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে আইন পরীক্ষা দিয়ে প্রথম বিভাগে তৃতীয় স্থান অধিকার করেন।
বঙ্কিমচন্দ্র দীর্ঘ তেইশবছর সরকারী পদে চাকুরী করার পর ১৮৯১ খ্রিঃ সেপ্টেম্বর মাসে অবসর গ্রহণ করেন।
যশোরে থাকাকালে ১৮৫৯ খ্রিঃ বঙ্কিমচন্দ্রের পত্নী বিয়োগ হয়। ১৮৬০ খ্রিঃ তিনি দ্বিতীয়বার বিবাহ করেন। সহধর্মিনী রাজলক্ষ্মী দেবী সম্পর্কে বঙ্কিমচন্দ্র পরবর্তীকালে বলেছেন, আমার জীবন অবিশ্রান্ত সংগ্রামের জীবন। একজনের প্রভাব আমার জীবনে বড় বেশি রকমের- আমার পরিবারের। আমার জীবনী লিখিতে হইলে তাঁহারও লিখিতে হয়। তিনি না থাকিলে আমি কি হইতাম বলিতে পারি না।
বঙ্কিমচন্দ্র হাকিমরূপে দেশের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করায় মানুষের দুঃখ বেদনার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে পরিচিত হবার সুযোগ পেয়েছিলেন। তাঁর দেশপ্রেম ও স্বদেশ হিতৈষণা ছিল প্রগাঢ়।
শাসকের জাতি ইংরেজদের সঙ্গে ভারতীয়রাও সমান মর্যাদা লাভ করবে- তিনি এই নীতি মেনে চলতেন বলে কর্মক্ষেত্রে যোগ্যতানুরূপ উন্নতি লাভ করতে পারেননি।
চাকরি জীবনেই নীলদর্পণ খ্যাত দীনবন্ধু মিত্রের সঙ্গে তাঁর পরিচয় ও বন্ধুত্ব হয়। প্রবল দেশপ্রেম পরস্পরকে প্রভাবিত ও তাঁদের চিন্তার পরিপুষ্টি সাধন করে।
কিশোরীচাঁদ মিত্র সম্পাদিত ইন্ডিয়ান ফিল্ড নামের ইংরাজি পত্রিকায় বঙ্কিমের Rajmohan’s wife ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়। এটিই তাঁর প্রথম উপন্যাস।
১৮৬৫ খ্রিঃ দুর্গেশনন্দিনী পুস্তকাকারে প্রকাশিত হয়। এরপর কপালকুন্ডলা ও মৃণালিনী প্রকাশিত হয়। এই তিনটি উপন্যাসই বাংলা উপন্যাস সাহিত্যকে প্রতিষ্ঠা দান করে। স্বদেশ সমাজ ও সংস্কৃতির প্রতি বঙ্কিমের ছিল গভীর টান। ফলে পরদেশী শাসনে দেশের মানুষের নিগীড়িত অবস্থা তাঁকে অহরহ পীড়া দিত। এ বিষয়ে শিক্ষিত সমাজ না জাগলে সাধারণের চেতনা ঘটানো সম্ভব নয়। এ সত্য তিনি উপলব্ধি করেছিলেন। স্বদেশবাসীকে আত্ম-সচেতন করে তোলার উদ্দেশ্যে বঙ্কিমচন্দ্ৰ ১৮৭২ খ্রিঃ বঙ্গদর্শন পত্রিকার প্রকাশ শুরু করেন। অচিরেই এই পত্রিকাকে কেন্দ্ৰ করে গড়ে উঠল একটি শক্তিশালী সাহিত্যিক গোষ্ঠী।
বঙ্কিমের সম্পাদিত বঙ্গদর্শনে সাহিত্য, বিজ্ঞান, দর্শন, কাব্য, সমাজতত্ত্ব, ধর্মতত্ত্ব, ইতিহাস, অর্থনীতি, প্রভৃতি বিষয়ে আলোচনা প্রকাশিত হত। বাংলার সমাজ ও সাহিত্য জীবনে এই পত্রিকা বিপুলভাবে সাড়া জাগাতে সমর্থ হয়েছিল।
বঙ্কিমের স্বদেশ প্রেমে উদ্বুদ্ধ উপন্যাস রাজসিংহ, আনন্দমঠ, দেবী চৌধুরাণী, সীতারাম প্রভৃতি ইতিমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে এবং এগুলোকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে আলোড়নের সৃষ্টি হয়েছে।
১৮৭৩ খ্রিঃ পাবনা সিরাজগঞ্জে যে প্রজাবিদ্রোহের সূচনা হয় তার সূত্রপাত ঘটেছিল বঙ্কিমের একটি লেখা প্রকাশের অব্যবহিত পরেই। তিনি পূর্ববঙ্গের কৃষক নামের একটি ধারাবাহিক প্রবন্ধে ভূমি সমস্যা ও কৃষক সম্বন্ধে আলোচনা করেছিলেন।
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এর মৃত্যু: Bankimchandra Chattopadhyay’s Death
ভারতের অন্যতম জাতীয় সঙ্গীত বন্দেমাতরম বঙ্কিম রচনা করেছিলেন ১৮৭৫ খ্রিঃ। ১৮৯১ খ্রিঃ চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের পর তিনি স্থায়ীভাবে কলকাতাতেই বাস করতে থাকেন। ১৮৯৪ খ্রিঃ পরলোক গমন করেন।
বঙ্কিমচন্দ্র মোট চোদ্দটি উপন্যাস রচনা করেন। এছাড়াও তাঁর উল্লেখযোগ্য বইগুলি হল কৃষ্ণচরিত, লোকরহস্য, বিজ্ঞানরহস্য, ললিতা, দীনবন্ধুমিত্রের জীবনী, ধর্মতত্ত্ব, শ্রীমদ্ভাগবতগীতা প্রভৃতি।
আরও পড়ুন-
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় কবে জন্মগ্রহণ করেছিলেন?
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ে জন্মগ্রহণ করেছিলেন ২৬ শে জুন, ১৮৩৮ অর্থাৎ বাংলায় , ১৩ আষাঢ় ১২৪৫।
সাহিত্য সম্রাট কে ছিলেন?
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় প্রথম উপন্যাসের নাম কি?
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় প্রথম উপন্যাসের নাম হলো Rajmohans Wife.
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় কয়টি উপন্যাস লিখেছেন?
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় মোট ১৫টি উপন্যাস লিখেছিলেন যার মধ্যে একটি ইংরেজি ভাষার উপন্যাসও ছিলো।