Aristotle Biography In Bengali – এসক্লেপিয়াড অ্যারিস্টটল জীবনী

Aristotle Biography In Bengali – এসক্লেপিয়াড অ্যারিস্টটল জীবনী
Aristotle Biography In Bengali – এসক্লেপিয়াড অ্যারিস্টটল জীবনী

Aristotle Biography: আজ আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি মহান ব্যক্তিদের জীবনী সমগ্র। মহান ব্যক্তি আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা। তাঁদের জীবনের ক্ষুদ্রতম অংশগুলি আমাদের জন্য শিক্ষামূলক হতে পারে। বর্তমানে আমরা এই মহান ব্যক্তিদের ভুলতে বসেছি। যাঁরা যুগ যুগ ধরে তাদের কর্ম ও খ্যাতির মধ্য দিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন এবং জ্ঞান, বিজ্ঞান, শিল্প ও সাহিত্যের জগতে এক অনন্য অবদান রেখেছেন এবং তাঁদের শ্রেষ্ঠ গুণাবলী, চরিত্র দ্বারা দেশ ও জাতির গৌরব বৃদ্ধি করেছেন। সেইসব মহান ব্যক্তিদের মধ্যে অন্যতম এসক্লেপিয়াড অ্যারিস্টটল (Aristotle) -এর সমগ্র জীবনী সম্পর্কে এখানে জানব।

Aristotle Biography In Bengali – এসক্লেপিয়াড অ্যারিস্টটল জীবনী

নামএরিস্টটল
জন্ম384 খ্রিস্টপূর্ব
পিতানিকোমাকাস
মাতা
জন্মস্থানস্ট্যাগিরা, চালসিডাইস
জাতীয়তাগ্রীক
পেশাগ্রিক দার্শনিক ও বিজ্ঞানী
মৃত্যু322 খ্রিস্টপূর্ব

প্রাচীন গ্রীসের বিশ্বখ্যাত দার্শনিক, বিজ্ঞানী অ্যারিস্টটলের গ্রীক নাম আরিস্তোতেলেস। জন্মেছিলেন ঈজিয়ান সাগরের উত্তর-পশ্চিম তীরে চেলিসিডিসের অর্ন্তগত স্টেগিরা নামের ছোট্ট এক শহরে।

এরিস্টটল এর জন্ম: Aristotle’s Birthday

সময়টা খ্রিস্টের জন্মের ৩৮৫ বছর আগে।

এরিস্টটল এর পিতামাতা ও জন্মস্থান: Aristotle’s Parents And Birth Place

তাঁর বাবা নিকোমাখুস ছিলেন ম্যাসিডনিয়ার রাজা অ্যামিনটাসের চিকিৎসক ও বন্ধু। অ্যামিনটাস ছিলেন দিগ্বিজয়ী বীর আলেকজান্ডারের ঠাকুর্দা।

এরিস্টটল এর ছোটবেলা: Aristotle’s Childhood

পরিবারের শিক্ষা ও সংস্কৃতির পরিমন্ডলে স্বভাবতঃই শিশুবয়স থেকেই তার জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রতি প্রবল আগ্রহ জন্মায়।

প্রতিভা নিয়ে জন্মেছিলেন অ্যারিস্টটল। ফলে অতি অল্পবয়সেই অঙ্ক, বিজ্ঞান ইতিহাস দর্শন প্রভৃতি বিষয়ের জ্ঞান লাভ করেন। কিশোর বয়সে তিনি মাঝেমাঝেই গিয়ে বসতেন ঈজিয়ান সাগরের ধারে। অশান্ত ঢেউয়ের ভাঙ্গা-গড়া, সমুদ্রের গর্জন শুনতে শুনতে আকাশের সুদূর প্রান্তে হারিয়ে যেত তার ভাবালু দৃষ্টি।

বইতে পড়েছেন নানা দেশের কথা, সভ্যতার ভাঙ্গাগড়ার ইতিহাস, মনীষীদের রোমাঞ্চকর জীবন-কাহিনী ও আবিষ্কারের কথা। তার মনও এই সময়ে অজানা জগতের রহস্য সন্ধানের স্বপ্ন দেখে, কল্পনায় নানা ছবি আঁকে।

সেই সময় রাজধানী এথেন্স ছিল সমগ্র গ্রীসের জ্ঞানচর্চার পীঠভূমি। বিশ্ববিখ্যাত সব পণ্ডিত সেখানে জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চায় রত।

এরিস্টটল এর শিক্ষাজীবন: Aristotle’s Educational Life

অ্যারিস্টটলের স্বপ্ন তিনি ও এথেন্স যাবেন। সমুদ্রবিজ্ঞান ও প্রকৃতিবিদ্যার চর্চায় তার গভীর আগ্রহ – সেখানে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ পণ্ডিতদের পদপ্রান্তে বসে তিনি শিক্ষা গ্রহণ করবেন।

বাবার মৃত্যুর পর সতের বছর বয়সে ৩৬৭ খ্রিঃ পূর্বাব্দে এথেন্সে আসেন ৷ প্লেটোর লাইসিয়ামের তখন খুব নামডাক।

প্রাচীন গ্রীসে মনীষীরা বড় হলঘরে বসে দেশ-বিদেশের ছাত্রদের শিক্ষা দিতেন। অনেকটা আমাদের দেশের প্রাচীন তপোবন বা গুরুগৃহের ধারাতেই এথেন্সেও শিক্ষাগুরুরা শিষ্যদের মধ্যে জ্ঞান বিতরণ করতেন।

এই শিক্ষাশ্রমগুলোই লাইসিয়াম নামে পরিচিত ছিল। পরবর্তীকালে লাইসিয়ামেরই নাম হয়েছে আকাডেমী।

মহাজ্ঞানী প্লেটোর লাইসিয়ামটিই পরিচিত ছিল এথেন্স বিশ্ববিদ্যালয় নামে। জ্ঞান এবং অধ্যাপনার জন্য তার খ্যাতি দেশের সীমা অতিক্রম করে বিদেশেও পৌঁছেছিল।

প্লেটো ছিলেন মহাজ্ঞানী সক্রেটিসের সেরা ছাত্র। নানা বিষয়েই ছিল তার গভীর জ্ঞান ও পাণ্ডিত্য। অ্যারিস্টটল প্লেটোর লাইসিয়ামে নাম লেখালেন। এখানে তিনি স্বকীয় রুচিতে ও আচরণে সংশ্লিষ্ট সকলেরই দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন। হয়ে উঠেছিলেন প্লেটোর প্রিয় ছাত্র।

দীর্ঘ কুড়ি বছরে সাহিত্য দর্শন, রাষ্ট্রনীতির সঙ্গে অঙ্ক জ্যোতির্বিজ্ঞান, উদ্ভিদবিদ্যা, প্রাণিবিদ্যা ও সমুদ্রবিজ্ঞানে ব্যুৎপন্ন হন। চিৎিসা বিজ্ঞানের নানা বিষয়েও শিক্ষা নিয়েছিলেন তিনি।

তিনি ছিলেন প্লেটোর প্রিয়ছাত্র। প্লেটো তাঁর টাইমেয়াস গ্রন্থে প্রিয়শিষ্য অ্যারিস্টটলের অসাধারণ জ্ঞানের কথা উচ্ছ্বসিত প্রশংসার সঙ্গে লিপিবদ্ধ করেছেন। এই দুই গুরুশিষ্যের চিন্তাধারার মধ্যে পার্থক্যও ছিল যথেষ্ট স্পষ্ট। প্লেটোর প্রিয় বিষয় ছিল অঙ্ক।

ছিলেন কল্পনাবিলাসী। অঙ্ক নিয়ে চিন্তায় বিভোর থাকতেই ভালবাসতেন। তাঁর বিশ্বাস ছিল, পৃথিবী গতিহীন এবং স্থির এক গ্রহ।

অন্যদিকে অ্যারিস্টটল ছিলেন বস্তুবাদে বিশ্বাসী। লৌকিক জগতের প্রতিই তাঁর আকর্ষণ ছিল বেশি। সজীব পদার্থ নিয়ে নাড়াচাড়া করতে চিন্তা করতেই তিনি বেশি ভালবাসতেন। জীব জগতের অনেক কিছুরই শ্রেণীবিভাগ করেছিলেন অ্যারিস্টটল।

আরও পড়ুন: হোমি জাহাঙ্গীর ভাবা জীবনী

সেই যুগে এই বিষয়ে মাথা ঘামাতে অপর কোন বিজ্ঞানীই উৎসাহবোধ করতেন না। পৃথিবী অ্যারিষ্টটলের দৃষ্টিতে ছিল গতিময়। মাত্র সাঁইত্রিশ বছর বয়সেই অ্যারিস্টটলের বিজ্ঞান ও দর্শনের খ্যাতি সমস্ত গ্রীসে ছড়িয়ে পড়েছিল।

৩৪২ খ্রিঃ পূঃ প্লেটোর মৃত্যু হয়। তার পরে আকাদেমির চালক অধ্যাপক হতে চেয়েছিলেন অ্যারিস্টটল।

কিন্তু এথেন্সের অধিবাসীরা তাকে বিদেশী বলেই মনে করত। তাই দেশের শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চালক অধ্যাপকের পদটি তার লাভ করা হল না।

এথেন্সে আর থাকতে মন চাইল না। অ্যারিস্টটল তখন এশিয়া মাইনরের অন্তর্গত আতরনিউস নামক শহরে চলে আসেন। এখানে তার এক সহপাঠী হেরমিআ বাস করতেন। বন্ধুর বাড়িতেই এসে উঠলেন তিনি।

এরিস্টটল এর বিবাহ জীবন ও পরিবার: Aristotle’s Marriage Life And Family

এখানে তিন বছর ছিলেন তিনি। হেরমিআর বোন পুথিয়াকে (Pythia) বিয়ে করে অনেক উপহার লাভ করেন। ম্যাসিডনের রাজপরিবারের সঙ্গে পিতার সূত্রেই পরিচয় ঘটেছিল অ্যারিস্টটলের।

রাজকুমার ফিলিপের সঙ্গে জানাশোনাও ছিল তার। তিনি তখন রাজা হয়েছেন।

অ্যারিস্টটলের গুণগ্রাহী ও ভক্তদের মধ্যে রাজাও ছিলেন অন্যতম৷ আতরনিউসে থাকার সময়েই অ্যারিস্টটল রাজা ফিলিপের একটি চিঠি পেলেন। রাজা তাঁকে বালকপুত্র ফিলিপের গৃহশিক্ষক নিযুক্ত করবার ইচ্ছা প্রকাশ করে অনুরোধপত্র পাঠিয়েছেন।

অ্যারিস্টটল সানন্দে এই আমন্ত্রণ গ্রহণ করলেন এবং ম্যাসিডনে ফিরে এলেন। রাজকুমার আলেকজান্ডারের যখন চোদ্দ বছর বয়স, সেই সময় অ্যারিস্টটল তাকে ছাত্র হিসেবে পান।

প্রথম দর্শনেই দুজন দুজনের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন। সাতবছর সময়ের মধ্যেই অ্যারিস্টটল রাজকুমার আলেকজান্ডারকে উপযুক্ত শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলেছিলেন।

ভূগোল, ইতিহাস, বিজ্ঞান ও দর্শনে অসাধারণ জ্ঞানার্জন করেছিলেন আলেকজাণ্ডার। গুরুর কাছ থেকে তিনি আরও লাভ করেছিলেন বিশ্বকে জানবার তীব্র পিপাসা৷

বিজ্ঞান মনস্কতা, অসামান্য তেজ ও সাহস। এই আস্তর সম্পদের প্রেরণাতেই একদিন তিনি ঘরছেড়ে বিশ্বজয়ে বেরিয়ে পড়েছিলেন। একের পর এক দেশ তিনি জয় করেছেন, সেসব দেশের সভ্যতা ও কৃষ্টির সঙ্গে পরিচিত হয়েছেন।

অ্যারিস্টটলের শিক্ষা এভাবেই সার্থকতা লাভ করেছিল শিষ্য আলেকজাণ্ডারের মধ্যে। খ্রিষ্টপূর্ব ৩৫০ অব্দে ম্যাসিডনের রাজা ফিলিপ মারা গেলেন।

সিংহাসনে বসলেন আলেকজাণ্ডার। সেই সময় তাঁর বয়স একুশ। অ্যারিস্টটল চলে এলেন এথেন্সে। এখানে নিজেই একটি লাইসিয়াম খুললেন। শিক্ষাদানের সঙ্গে সঙ্গে চললো তাঁর গবেষণার কাজ। তিনি তাঁর বিদ্যালয়ের নাম দিলেন পেরিপ্যাটেটিক স্কুল। মৃত্যুর পূর্বে পর্যন্ত রাজা ফিলিপ অ্যারিস্টটলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিলেন।

আলেকজাণ্ডার রাজা হয়ে পিতার সেই দায়িত্ব নিজের কাধে তুলে নিলেন। অ্যারিস্টটল একবার স্থির করলেন প্রকৃতি বিজ্ঞান সম্পর্কে একটি এনসাইক্লোপিডিয়া রচনা করবেন।

উপাদান সংগ্রহের জন্য একহাজার সহকারী গবেষক নিযুক্ত করা হল। তারা পৃথিবীর নানাস্থানে প্রেরিত হয়েছিলেন। একাজে তিনি অর্থ সাহায্য পেয়েছিলেন রাজকোষ থেকে।

সংগ্রাহকরা ঈজিয়ান সাগরের উত্তর-পূর্ব উপকূলের জল ও স্থলভাগ থেকে, লেমবস দ্বীপ থেকে সংগ্রহ করে আনতো নানা উদ্ভিদ ও প্রাণীর নমুনা।

সেসব পাঠিয়ে দেওয়া হত এথেন্সে অ্যারিস্টটলের গবেষণাগারে। অ্যারিস্টটল এসব নমুনা একে একে শ্রেণী ধরে সাজিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাতেন৷

আরও পড়ুন: নিকোলাস কোপার্নিকাস জীবনী

এইভাবেই দিনে দিনে জীববিদ্যা ও সমুদ্রবিদ্যার ভূমিপ্রস্তুত হয়ে চলল। সব মিলিয়ে প্রায় ৫০০ জীবজন্তুর প্রজাতির গঠন ও প্রজনন কৌশল ধরে তিনি শ্রেণীবিন্যাস করেছিলেন।

বিভিন্ন প্রাণীর নানা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ব্যবচ্ছেদ করে সেসবের পরিচয় ও কার্য কারিতার ব্যাখ্যাও করেছেন তিনি। প্রাণী ও উদ্ভিদ বিদ্যা বিষয়ে অ্যারিস্টটলের সিদ্ধান্তই ১৮ শতক পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা অভ্রান্ত বলে মেনে নিয়েছেন।

জীবোৎপাদন ও জীবজন্তুর ওপর নানা বৈজ্ঞানিক বিবরণ নিয়ে তিনি প্রকাশ করেছিলেন হিস্টোরিয়া অ্যানিমিলিয়া বইটি। বিশ্ববিখ্যাত জীববিজ্ঞানী লিনিয়াস ও কুভিয়ারের আবির্ভাবের পরে উদ্ভিদ ও প্রাণীজগতের নতুন শ্রেণীবিন্যাস সাধিত হয়েছিল।

ফলে অ্যারিস্টটলের এই দুই বিভাগে অধিকাংশ কাজ বাতিল বলে গণ্য হয়েছিল। যুক্তিবাদী অ্যারিস্টটল সকল কার্যেরই কারণ অনুসন্ধান ও ব্যাখ্যা করতেন যুক্তি দিয়ে।

তার এই কার্যকারণ তত্ত্ব নিয়ে রচিত হয়েছিল ন্যায়শাস্ত্রের বই আরগান। এই গ্রন্থের ভিত্তিতে প্রধানতঃ নীতিশাস্ত্রকার রূপেই তিনি বিখ্যাত ও প্রচারিত হয়েছেন বেশি।

বিভিন্ন বিষয়ের ওপব গবেষণা করে তিনি ১০০০ মত তথ্যনিষ্ঠ বই রচনা করেছেন।

তাঁর বেশিরভাগ বইই অবশ্য মহাকালের গর্ভে হারিয়ে গেছে। যেসব বই রক্ষা পেয়েছে তার অধিকাংশই দর্শন ও নীতিবিদ্যা সংক্রান্ত।

জ্যোতির্বিদ্যা ও পদার্থবিদ্যায় তার যেসব তত্ত্ব রয়েছে তার ভিত্তি দার্শনিক ভাবনার ওপরেই গড়ে উঠেছিল। তাঁর একটি সিদ্ধান্ত যেমন ভারী ও হালকা এই দুই বস্তু ওপর থেকে নিচে ফেলে দিলে দুটিই একসময়ে নিচে পড়বে। বহু শতক পরে ইতালীয় বিজ্ঞানী গ্যালিলিও পিসা শহরে পরীক্ষা দ্বারা এই তত্ত্ব ভ্রান্ত বলে প্রমাণ করেছিলেন।

তিনি দেখিয়েছিলেন, বায়ুপূর্ণ স্থানে বায়ুঘাতের জন্য এরকম হতে পারে। কিন্তু বায়ুহীন স্থানে ভারী ও হাল্কা বস্তু একসঙ্গে নিচে ফেললে দুটিই একসময়ে নিচে পড়বে।

আরও পড়ুন: লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি জীবনী

অ্যারিস্টটলের মত ছিল, স্থির বস্তুকে ধাক্কা দিয়ে বা বেগ সঞ্চার করে চির গতিময়তা দান করা যায় ৷

আধুনিক বিজ্ঞানের যুগে নিউটন অ্যারিস্টটলের এই সিদ্ধান্তটিকে সংশোধন করে প্রকৃত সত্যের ভিত্তিতে আবিষ্কার করেছিলেন তার প্রথম গতিসূত্র। তিনি প্রমাণ করে দেখান, যে কোন গতিশীল বস্তুরই গতিপথ হয় সরল রেখা ধরে।

অ্যারিস্টটল বিশ্বাস করতেন পৃথিবী গঠিত হয়েছে ক্ষিতি, অপঃ, তেজ ও মরুৎ এই চারটি মৌলিক বস্তুদ্বারা। কিন্তু পরবর্তীকালে জানা গেছে পদার্থ সম্পর্কে অ্যারিস্টটলের সিদ্ধান্তটি ভুল।

ক্ষিতি, অপঃ, তেজ, মরুৎ অর্থাৎ মাটি, জল, আগুন ও বায়ু এগুলো কোনটাই মৌলিক পদার্থ নয়। জ্যোতির্বিদ্যা বিষয়ে যথেষ্ট যুক্তি প্রমাণ রেখেছেন অ্যারিস্টটল। কিন্তু পর্যবেক্ষণ পদ্ধতিতে ভুল থাকার জন্য তার সিদ্ধান্তও সঠিক হতে পারেনি।

তিনি জানিয়েছিলেন পৃথিবীই হল সৌরজগতের কেন্দ্র। একটি নির্দিষ্ট স্থানে পৃথিবীকে কেন্দ্র করে গ্রহ ও নক্ষত্রেরা অবিরাম ঘুরছে।

চাঁদের আলোকেও তার নিজস্ব আলো বলেই বর্ণনা করেছেন তিনি। বহু শতাব্দী পরে অ্যারিস্টটলের এই সব সিদ্ধান্ত শুধরে দিয়েছেন গ্যালিলিও কেপলার প্রমুখ বিজ্ঞানীগণ৷ তাঁরা প্রমাণ করে দেখিয়েছেন পৃথিবী ও অন্যান্য গ্রহ উপবৃত্তাকার পথে ঘুরছে সূর্যকে কেন্দ্রে রেখে।

দ্বিতীয়তঃ চাঁদের নিজস্ব আলো বলতে কিছু নেই। সূর্যের আলোতেই তার আলোকিত রূপ প্রকাশিত হয় জ্যোছনা হয়ে। চাঁদের ভেতর দিয়ে আসে বলেই জ্যোছনা তাপমুক্ত।

এরিস্টটল এর রচনা: Written by Aristotle

প্লেটোর দার্শনিক চিন্তার সূত্র ধরে তার শিষ্য অ্যারিস্টটল যা লিখে রেখে গেছেন, বৈচিত্র্যে ও বিস্তারে তা বিস্ময়কর প্রতিভার পরিচায়ক। রাষ্ট্রনীতি, নাটক, কাব্য, বস্তুবিদ্যা, ভেষজবিদ্যা, মনোবিজ্ঞান, ইতিহাস, তর্কবিদ্যা, জ্যোতির্বিদ্যা, সৌন্দর্যতত্ত্ব, প্রকৃতিবিজ্ঞান, গণিতশাস্ত্র, অলংকার শাস্ত্র, জীববিজ্ঞান ইত্যাদি বহু বিষয়েই অ্যারিস্টটলের জিজ্ঞাসা ছিল অত্যন্ত প্রবল।

ঈশ্বর, রাষ্ট্র ও মানুষ -এই তিনটি বিষয়ে অ্যারিস্টটল নতুন কথা বলেছেন। ঈশ্বর সম্বন্ধে তিনি বলেছেন, ঈশ্বরকে প্রসন্ন করার অভিপ্রায়ে প্রার্থনা ব্যাপারটা মানুষের মূর্খতাই প্রমাণ করে। মানুষের সুখ-দুঃখ ঈশ্বরকে স্পর্শ করে না। তবে মানুষের সব চিন্তার প্রেরয়িতা ঈশ্বর।

আরও পড়ুন: অ্যান্টনি ভন লিউয়েন হক জীবনী

ঈশ্বরের চালক নেই, মানুষের আবেগ আছে, হৃদয়বৃত্তির প্রকাশ ঈশ্বরের ক্ষেত্রে থাকতে পারে না। জগদব্যাপারের নিয়ম অনুসারে মানুষের পরিবর্তন ঘটে, কিন্তু ঈশ্বর অপরিবর্তনীয়। মানুষ ঈশ্বরকে ভালবাসে, ঈশ্বরের ভালবাসা বলে হৃদয়াবেগ থাকতে পারে না। ঈশ্বরই মানুষের ভাগ্যনিয়ন্ত্রণ করে একথা ঠিক নয়, ঈশ্বর স্বপ্নচারী।

বিশ্ব-প্রপঞ্চের মূল শক্তি বা Primal Energy বলতে আধুনিক বিজ্ঞানীরা যা বোঝেন অ্যারিস্টটলের ঈশ্বরও সেই শক্তি-সত্তা। রাষ্ট্র সম্পর্কে তিনি বলেছেন, স্বৈরতন্ত্র, রাজতন্ত্র, দলতন্ত্র (oligarchy), গণতন্ত্র – কোন তন্ত্রই দুষ্টের প্রভাব থেকে মুক্ত থাকে না।

এসবের মধ্যে স্বৈরতন্ত্র নিকৃষ্ট। অ্যারিস্টটল সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য মনে করতেন সংবিধানসম্মত শাসনপদ্ধতি বা Constitutional Government.

তাঁর মতে শ্রেণীতন্ত্র বা Dictatorship of a class স্বৈরতন্ত্রেরই সমকক্ষ। সাম্যবাদ বা Communism তিনি গ্রহণযোগ্য মনে করতেন না। বলতেন, সাম্যবাদী শাসন ব্যবস্থায় হিংসার আগুন দেশকে ধ্বংস করবে।

দেশের উন্নতি যদি কাম্য হয় তাহলে নিশ্চয় ব্যক্তিগত মালিকানার প্রয়োজন আছে বলে মনে করতেন অ্যারিস্টটল।

তিনি বুঝেছিলেন, প্রবীণদের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে হবে। বৃদ্ধ এবং প্রাজ্ঞরা নির্দেশ দেবে, নবীনেরা তাদের আজ্ঞা পালন করবে। অ্যারিস্টটল বলতেন, শাসনতন্ত্রের একটি প্রধান লক্ষ হবে শিক্ষার উৎকর্ষসাধন।

আরও পড়ুন: গ্যালিলিও গ্যালিলি জীবনী

সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব মানুষ সম্পর্কে বলতে গিয়ে অ্যারিস্টটল খাঁটি মানুষ তাকেই বলেছেন যার নিজে সুখী হবার এবং অপরকে সুখী করবার যোগ্যতা আছে। তিনি বলতেন, দয়া প্রদর্শন মানুষের কর্তব্য, তবে দয়া করা মানে অনুগ্রহ করা নয়।

আশু ফল প্রদান না করলেও সৎকর্মের একটা নিজস্ব মূল্য থাকে। পরনিন্দা, বিদ্বেষ, অপরের ক্ষতিসাধন -এসব প্রবণতা খাঁটি মানুষের থাকতেই পারে না। গ্রিস দেশের প্রাচীন সংস্কৃতি সমগ্র বিশ্বকে চিন্তার মুক্তির সাধনায় প্রেরণা দিয়েছে।

এই প্রসঙ্গে তিনজনের অবদান বিশ্ব মানস অবনত মস্তকে বহন করে চলেছে।

এঁরা হলেন সক্রেটিস, প্লেটো আর অ্যারিস্টটল। প্লেটো তাঁর গুরুব তত্ত্বাবলীর বিচারবিশ্লেষণ লিপিবদ্ধ করেছেন বলেইসক্রেটিসকে আজও আমরা জানতে পারছি।

প্লেটোর শিষ্য অ্যারিস্টটলও তেমনই গুরুর তত্ত্ববাদের সূত্র ধরেই অবিস্মরণীয় কীর্তি স্থাপন করে গেছেন।

এরিস্টটল এর মৃত্যু: Aristotle’s Death

মহাজ্ঞানী মহাজন অ্যারিস্টটল খ্রিঃ পূর্ব ৩২২ অব্দে Eubaca -এর অন্তর্গত থালফিস নামক নগরীতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার প্রধান বইগুলির ইংরাজি নাম Dialogues On Monarchy, Alexander, The Custom of Barbarians, Natural History, Organon or The Instrument of Correct Thinking, On the Soul, Rhetoric, Logic, Eudemian Ethics, Physics, Metaphysics, Politics, Poet ics, 158 Constitutions (including The Constitution of Athens) প্রভৃতি।

আরও পড়ুন: অ্যারিস্টটল উইকিপিডিয়া

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here