Abanindranath Tagore Biography: আজ আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি মহান ব্যক্তিদের জীবনী সমগ্র। মহান ব্যক্তি আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা। তাঁদের জীবনের ক্ষুদ্রতম অংশগুলি আমাদের জন্য শিক্ষামূলক হতে পারে। বর্তমানে আমরা এই মহান ব্যক্তিদের ভুলতে বসেছি। যাঁরা যুগ যুগ ধরে তাদের কর্ম ও খ্যাতির মধ্য দিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন এবং জ্ঞান, বিজ্ঞান, শিল্প ও সাহিত্যের জগতে এক অনন্য অবদান রেখেছেন এবং তাঁদের শ্রেষ্ঠ গুণাবলী, চরিত্র দ্বারা দেশ ও জাতির গৌরব বৃদ্ধি করেছেন। সেইসব মহান ব্যক্তিদের মধ্যে অন্যতম চিত্রশিল্পী এবং সাহিত্যিক অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Abanindranath Tagore) -এর সমগ্র জীবনী সম্পর্কে এখানে জানব।
Abanindranath Tagore Biography In Bengali – অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর জীবনী
নাম | অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর |
জন্ম | ৭ আগস্ট ১৮৭১ |
জন্মস্থান | কলকাতা, ভারতবর্ষ |
পিতা | গুণেন্দ্রনাথ ঠাকুর |
মাতা | সৌদামিনী ঠাকুর |
জাতীয়তা | ভারতীয় |
নাগরিকত্ব | ব্রিটিশ ভারত (১৯৪৭), ভারত (১৯৫০) |
শিক্ষা | গভর্নমেন্ট কলেজ অফ আর্ট অ্যান্ড ক্র্যাফট, কলকাতা সংস্কৃত কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় |
পুরস্কার | Honorary doctor of the university of calcutta |
নিয়োগকারী | কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় |
আন্দোলন | বঙ্গীয় শিল্পকলা |
মৃত্যু | ৫ ডিসেম্বর ১৯৫১ |
অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর জন্ম স্থান ও পিতামাতা: Birth Place And Parents Of Abanindranath Tagore
বিখ্যাত চিত্রশিল্পী এবং সাহিত্যিক। জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারে জন্ম। দ্বারকানাথ ঠাকুরের জ্যেষ্ঠপুত্র গিরীন্দ্রনাথের কনিষ্ঠপুত্র গুণেন্দ্রনাথের কনিষ্ঠপুত্র।
অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর শিক্ষাজীবন: Abanindranath Tagore’s Educational Life
ঠাকুর পরিবারের বৈচিত্র্যময় পরিবেশে ইংরাজি ফারসী, সংস্কৃত ও বাংলা ভাষা শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গে চিত্রশিল্পের প্রতি তাঁর একটা সহজাত আকর্ষণ গড়ে ওঠে। আর্টস্কুলের শিক্ষক গিলার্ড ছিলেন তাঁর প্রথম শিক্ষক।
প্যাস্টেল ড্রয়িং, জল রং প্রভৃতির প্রশিক্ষণও তাঁর কাছে। দ্বিতীয় শিক্ষক পার্মারের কাছে তিনি তৈলচিত্র এবং লাইফ স্টাডি সম্বন্ধে শিক্ষা গ্রহণ করেন। বিদেশী শিক্ষকদের কাছে শিক্ষাগ্রহণের ফলে প্রাথমিক পর্যায়ে অবনীন্দ্রনাথ বিদেশী রীতিতে স্টুডিও তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর প্রথম জীবন: Abanindranath Tagore’s Early Life
কিন্তু ঠিক সেই সময়ে কতকগুলি দেশীয় ছবির সূক্ষ্ম কারুকার্য, ঔজ্জ্বল্য এবং বর্ণ সমাবেশ তাঁর মনকে এমন ভাবে আকৃষ্ট করে যে তিনি দেশীয় পদ্ধতিতেই ছবি আঁকার সিদ্ধান্ত নেন।
দেশীয় আদর্শে তাঁর প্রথম কাজ কৃষ্ণলীলা চিত্রাবলী। ১৮৯৮ খ্রিঃ আর্ট কলেজের তদানীন্তন অধ্যক্ষ হ্যাভেলের চেষ্টায় তিনি ঐ কলেজের সহকারী অধ্যক্ষ পদে নিযুক্ত হন।
হ্যাভেল তাঁকে ভারতীয় শিল্প অনুশীলনে বিশেষভাবে সাহায্য করেন। এই অনুশীলনের ফলশ্রুতি দেখা যায় অবনীন্দ্রনাথ অঙ্কিত বজ্রমুকুট, ঋতু সংহার, বুদ্ধ ও সুজাতা ইত্যাদি চিত্রে। জাপ চিত্রকর টাইকান এরপর তাঁকে জাপানী চিত্ররীতির সঙ্গে পরিচিত করান।
১৯০৭ খ্রিঃ ভগিনী নিবেদিতা, হ্যাভেল প্রভৃতির সহযোগিতায় ওরিয়েন্টাল আর্ট সোসাইটি স্থাপন অবনীন্দ্রনাথের জীবনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কীর্তি। এই সোসাইটির মাধ্যমে অবনীন্দ্রনাথের প্রবর্তিত শিল্প আদর্শকে জাতীয় জীবনের সঙ্গে যুক্ত করার প্রচেষ্টা শুরু করেন।
অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর কর্ম জীবন: Abanindranath Tagore’s Work Life
১৯১৩ খ্রিঃ প্রথমে লন্ডনে ও প্যারিসে অবনীন্দ্রনাথ ও তাঁর অনুগামীদের এক শিল্পপ্রদর্শনী হয়।
১৯১৯ খ্রিঃ তা আয়োজিত হয় টোকিও শহরে। এই প্রদর্শনীগুলির মাধ্যমে অবনীন্দ্রনাথের শিল্পকৃতি বিদেশে বিশেষভাবে পরিচিত হয় এবং বিদেশের চিত্ররসিকদের কাছেও তিনি স্থায়ী আসন লাভ করেন। অবনীন্দ্রনাথ এরপরে আঁকেন বিখ্যাত ওমর খৈয়াম চিত্রাবলী।
জাপানী ও ভারতীয় শিল্পরীতির সঙ্গে অবনীন্দ্রনাথের স্বকীয়তার যে পরিচয় এই চিত্রাবলীতে পাওয়া যায় তা শুধু অনুপম নয়, নতুন ধারার পরিচয়বাহী এক নবদিগন্ত উন্মোচনকারী হিসেবে তা চিহ্নিত হয়ে আছে।
অবনীন্দ্রনাথের শিল্পরীতিকে স্বদেশী বা বিদেশী কোন পরম্পরাই প্রভাবিত করতে পারেনি। স্বকীয় বৈশিষ্ট্য প্রদর্শনের দ্বারাই তিনি ভারতীয় শিল্পজগতের গুরু হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছিলেন।
কথাশিল্পী অবনীন্দ্রনাথকে আবিষ্কার করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। তাঁর রবিকা ই তাঁকে দিয়ে ‘শকুন্তলা’ লিখিয়েছিলেন প্রথমে।
অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর রচনা: Written by Abanindranath Tagore
ছোটদের জন্য একটা সিরিজ বার করবার কথা ভেবেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। নাম দিয়েছিলেন বালগ্রন্থাবলী সিরিজ। সেই সময়ে শিশুদের পড়বার মত ভাল বই ছিল না। তিনি অবনীন্দ্রনাথকে বললেন, ‘তুমি গল্প লেখো’।
অবনীন্দ্রনাথ এতকাল ছবি এঁকেছেন, লেখেননি তেমন কিছু। তাও আবার ছোটদের জন্য, যা লেখা সবচেয়ে কঠিন। স্বভাবতঃই তিনি ভয় পেলেন।
বললেন ওসব তাঁর আসে না। অতি সহজ ভাষায় মুখে মুখে চমৎকার গল্প বলতে পারতেন অবনীন্দ্রনাথ। তাই রবীন্দ্রনাথ তাঁকে অভয় দিয়ে বললেন, “তুমি লেখো না, যেমন করে তুমি মুখে মুখে গল্প কর তেমনি করেই লেখো”।
এরপরই অবনীন্দ্রনাথ লিখলেন শকুন্তলা। দুষ্মন্ত ও শকুন্তলার প্রেম ও বিরহ হল শকুন্তলা গল্পের মূল বিষয়বস্তু। কিন্তু অবনীন্দ্রনাথের ভাষার গুণে শিশুরাও তার থেকে অনাবিল আনন্দ লাভ করতে পারে। পড়তে পড়তে যেন রূপকথার রাজ্যে এসে পড়তে হয়।
‘শকুন্তলা’ পড়ে রবীন্দ্রনাথ খুশি হয়েছিলেন। তাঁর ছাড়পত্র যেদিন থেকে পাওয়া গেল সেদিন থেকেই যেন অবনীন্দ্রনাথের মনের আগল খুলে গেল। এরপর লিখলেন ক্ষীরের পুতুল।
প্রাচীন বাংলা রূপকথা থেকে কাঠামোটি নিয়ে অবনীন্দ্রনাথ গল্প বলার নিজস্ব ভঙ্গিমা দিয়ে এক অসাধারণ গল্প দাঁড় করালেন। কতগুলি ছড়াকেও তিনি স্বকীয় দক্ষতায় রূপকথার অঙ্গীভূত করেছেন। এমন নৈপুণ্যের সঙ্গে তিনি একাজ করেছেন যে মনে হয় ছড়াগুলিও এই অপরূপ রূপকথারই অঙ্গ ছিল।
এরপরই তাঁর কলম থেকে জন্ম নেয় একে একে রাজকাহিনী, ভূত পতরীর দেশ, নালক, বুড়ো আংলা প্রভৃতি।
একসময় অবনীন্দ্রনাথ যাত্রাপালা লেখার নেশায় মেতে উঠেছিলেন। এই সূত্রেই তাঁর পুঁথি সাহিত্যের উৎপত্তি। তাঁর রচিত পুঁথিগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য মারুতির পুঁথি, চাঁইবুড়ির পুঁথি, হনুমানের পুঁথি, জয়রামের পুঁথি, খুদ্দুর রামায়ণ প্রভৃতি।
অবনীন্দ্রনাথ শিশুদের কথা ভেবে যে কটি বই লিখেছিলেন তা বাংলা সাহিত্যের চিরকালের সম্পদ হয়ে রয়েছে। লেখার প্রসঙ্গে অবনীন্দ্রনাথের বাগেশ্বরী শিল্প প্রবন্ধাবলীর কথা অনিবার্যভাবে এসে পড়ে। ১৯২১ খ্রিঃ স্যার আশুতোষ অবনীন্দ্রনাথকে রানী বাগেশ্বরী অধ্যাপক হিসেবে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে আসেন।
১৯২১ থেকে ১৯২৯ পর্যন্ত তিনি এই পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। সর্বমোট বক্তৃতা দেন উনত্রিশটি। শিল্পী অবনীন্দ্রনাথের বক্তৃতা শোনার জন্য দ্বারভাঙ্গা হলে ভিড় জমে যেত।
শব্দের বিচিত্র বিন্যাসে, অননুকরণীয় বাচন ভঙ্গিতে শ্রোতারা আবিষ্ট হয়ে থাকতেন। অবনীন্দ্রনাথের ছবি আঁকার কাজ ধীরে ধীরে কমে এসেছিল। নিজেই বলতেন, ‘আব মন ভরে না।’ ছবি আঁকার বদলে তিনি জড়ো করে নিয়ে বসলেন, কাঠের টুকরো, গাছের শিকড়, ভাঙ্গা ডাল, নারকেলের মালা, আমড়ার আঁটি এসব অতি তুচ্ছ সব উপকরণ, এসব দিয়ে নানা জিনিষ তৈরি করতেন যেমন রাজপুত্তুর, জাহাজ, পশুপক্ষি এমনি আরও কত কি।
সবই মনোলোভা, চোখভোলানো। এসব নিয়ে এমনই জমে ছিলেন যে প্রায় আট-নবছর ছবি আঁ কার কথা ভুলেই ছিলেন। ছোট ও বড়দের জন্য অবনীন্দ্রনাথ বহু কাহিনী ও প্রবন্ধ রচনা করেন।
তাঁর তখন অনেক লেখাই বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় ছড়িয়ে রয়েছে। যা এখনো গ্রন্থবদ্ধ হয়নি। তাঁর রচিত শিল্প বিষয়ে উল্লেখযোগ্য রচনা ভারত-শিল্পের ষড়ঙ্গ, বাগেশ্বরী শিল্প প্রবন্ধাবলী, ভারত-শিল্প, শিল্পায়ন প্রভৃতি।
শেষ বয়সে তিনি শ্রুতি লেখকের সাহায্যে রচনা করেছিলেন ঘরোয়, জোড়াসাঁকোর ধারে।
অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর মৃত্যু: Abanindranath Tagore’s Death
১৯৫১ খ্রিঃ অবনীন্দ্রনাথ পরলোক গমন করেন।
আরও পড়ুন-
- ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর জীবনী
- রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় জীবনী
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জীবনী
- কাজী নজরুল ইসলাম সংক্ষিপ্ত জীবনী
অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর রবীন্দ্রনাথের কে ছিলেন?
রবীন্দ্রনাথের ভ্রাতুষ্পুত্র হলেন অবনীন্দ্রনাথ।
অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতার নাম কি?
গুণেন্দ্রনাথ ঠাকুর
অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিখ্যাত বই?
জোড়াসাঁকোর ধারে (১৯৪৪), আপন কথা (১৯৪৬), সহজ চিত্র শিক্ষা (১৯৪৬), ভারত শিল্পের ষড়ঙ্গ (১৯৪৭), আলোর ফুলকি (১৯৪৭), ভারত শিল্পে মূর্তি (১৯৪৭), মাসি (১৯৫৪)
অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কে হন?
অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুরের প্রপৌত্র এবং মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের তৃতীয় ভ্রাতা গিরীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পৌত্র ও গুণেন্দ্রনাথ ঠাকুরের কনিষ্ঠ পুত্র। সে দিক থেকে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর পিতৃব্য ছিলেন।